যানযন্ত্রণা: ডানলপ উড়ালপুলের নীচে যানজট। সোমবার। ছবি: সজল চট্টোপাধ্যায়
‘রোগী’র অস্ত্রোপচার কবে হবে? দিনক্ষণ এখনও ঠিক করতে পারেননি চিকিৎসকেরা। অথচ আগেভাগেই শুরু হয়ে গিয়েছে অস্ত্রোপচারের তোড়জোড়। আর তাতেই নাভিশ্বাস ওঠার জোগাড় ‘রোগী’র পরিজন থেকে পরিচিতদের!
‘রোগী’ এখানে ‘ডানলপ রাইট টার্ন ফ্লাইওভার’। আর পরিজন-পরিচিতেরা হলেন নিত্যযাত্রী থেকে শুরু করে সাধারণ মানুষ, পথচারী ও গাড়িচালকেরা। সম্প্রতি মাঝেরহাট সেতু বিপর্যয়ের পরে রাজ্যের অন্য সেতু এবং এবং উড়ালপুলগুলির স্বাস্থ্য পরীক্ষায় নেমেছে রাজ্য সরকার। সেই সূত্রেই ডানলপ মোড়ে থাকা ওই উড়ালপুলের স্বাস্থ্য পরীক্ষায় ধরা পড়ে, বেয়ারিংয়ে গলদ রয়েছে। তখনই সিদ্ধান্ত হয়, বদলে ফেলা হবে উড়ালপুলের বেয়ারিং। আর তার জন্যই সেখান দিয়ে অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে ভারী গাড়ি এবং বাস চলাচল। বাঁশের বেড়া দিয়ে বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে উড়ালপুলে ওঠা-নামার রাস্তা। যার ফলে এখন প্রতিনিয়ত ডানলপ মোড়ে তৈরি হচ্ছে তীব্র যানজট।
পুজোর মুখে যানজটে ফেঁসে প্রতি মুহূর্তে নাকাল হচ্ছেন সাধারণ মানুষ। কবে কাজ শুরু হবে, কবেই বা শেষ হবে— তা নিয়ে উড়ালপুলের কোথাও কোনও বিজ্ঞপ্তি নেই। ফলে কবে যান-যন্ত্রণা কাটবে, সেটা বুঝতে পারছেন না কেউই। লোকমুখে ঘুরছে বিভিন্ন কথা। কেউ দাবি করছেন রাতে কাজ চলছে, কেউ আবার বলছেন পুজোর ঠিক মুখেই খুলে দেওয়া হবে উড়ালপুল।
কিন্তু, উড়ালপুল সংস্কারের দায়িত্বে থাকা পূর্ত দফতরের কর্তারা তা বলছেন না। তাঁরা জানাচ্ছেন, সেতুর কাজের দিনক্ষণ এখনও ঠিক হয়নি। তবে পুজোর পরে কাজ হবে। তা হলে এত আগে থেকে সেতুতে ভারী যান চলাচল বন্ধ কেন? দফতরের এক শীর্ষ কর্তার কথায়, ‘‘ছোট চার চাকার গাড়ি ও মোটরবাইক যেতে পারছে ওই সেতু দিয়ে। কিন্তু বড় গাড়ি যাওয়ার ঝুঁকি নেওয়া সম্ভব নয়।’’ তবে পূর্ত কর্তারা জানাচ্ছেন, কাজ শুরু হলে উড়ালপুলের নীচের রাস্তাও বন্ধ করতে হবে।
ডানলপ মোড়ের যানজট কমাতে ২০১২ সালে দক্ষিণেশ্বরের দিকে পিডব্লিউডি রোডের সবেদাবাগানের সামনে থেকে বি টি রোডে আইএসআই-এর সুভাষপল্লি পর্যন্ত তৈরি করা হয় একমুখী ওই উড়ালপুল। প্রায় ৯০০ মিটার লম্বা উড়ালপুলটি দিয়ে শুধু কলকাতার দিকেই গাড়ি যায়। তবে পুলিশ সূত্রের খবর, যানজট কমাতে উড়ালপুল তৈরি হলেও দক্ষিণেশ্বরের দিক থেকে আসা বাস বা ভারী গাড়ি কেউই কলকাতার দিকে যাওয়ার জন্য তাতে উঠত না। ফলে যানজট আখেরে কিছু কমেনি।
কয়েক মাস আগে ওই ব্যবস্থায় পরিবর্তন আনে ডানলপ ট্র্যাফিক গার্ড। নির্দেশিকা জারি হয়, দক্ষিণেশ্বরের দিক থেকে আসা ব্যারাকপুরগামী গাড়িই শুধুমাত্র ডানলপ মোড় দিয়ে যেতে পারবে। কলকাতার দিকে যাওয়া বাকি সব গাড়িকে বাধ্যতামূলক ভাবে উড়ালপুল ব্যবহার করতে হবে। এক পুলিশকর্তা বলেন, ‘‘এই ব্যবস্থা চালু হওয়ায় ডানলপ মোড়ে যানজট খানিকটা কেটেছিল।’’ পুলিশের তরফেও ডানলপ মোড়ে ব্যারিকেড দিয়ে কলকাতার দিকে যাওয়ার পথ আটকে দেওয়া হয়েছিল।
তবে গত ৮ সেপ্টেম্বর থেকে উড়ালপুল বন্ধ হওয়ায় পুলিশকেও খুলে দিতে হয়েছে ব্যারিকেড। ফলে দক্ষিণেশ্বরের দিক থেকে আসা বাস-অটো, নিবেদিতা সেতু থেকে আসা লরি চার রাস্তার ডানলপ মোড় পার করতে গিয়ে হিমশিম খেয়ে যাচ্ছে। আলমবাজার থেকে ডানলপ মোড়, মিনিট পনেরোর রাস্তা যেতেই সময় লাগছে প্রায় এক ঘণ্টা। সাধারণ মানুষের মতো নাকানিচোবানি খাচ্ছে পুলিশও।
সব মিলিয়ে এ বারের শারদীয়ায় সাধারণ নাগরিকদের উপহার ‘ডানলপের যান-যন্ত্রণা’!
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy