আকাশবাণীর গান শুনে রোজ বদলে যাচ্ছে হাজার হাজার মানুষের ভাগ্য।
গান গেয়ে বহু মানুষেরই ভাগ্যের শিকে ছিঁড়েছে। সাম্প্রতিক কালের সব চেয়ে বড় উদাহরণ বীরভূমের ভুবন বাদ্যকর কিংবা নদিয়ার রাণু মণ্ডল। কিন্তু গান শুনে কি ভাগ্যের চাকা ঘোরানো যায়? বাঁকুড়ার বিষ্ণুপুরের মাধবগঞ্জে গিয়ে এই প্রশ্ন করলে সকলেই এক কথায় দেখিয়ে দিচ্ছেন সেই স্থান, যেখানে বছরের পর বছর রেডিয়োয় আকাশবাণীর গান শুনে রোজ ভাগ্য বদলে যাচ্ছে হাজার হাজার মানুষের।
বিষ্ণুপুর বাংলার অন্যতম প্রাচীন শহরগুলির একটি। এই শহরের মাধবগঞ্জ এলাকায় রাধা মদনগোপাল জিউয়ের সুপ্রাচীন মন্দিরের পাশেই বসে রোজকার বাজার। খোলা মাঠে আকাশের নীচে মেলে সব্জি থেকে মাছ, মরসুমি ফল থেকে মাংস। বিক্রেতারা নিজেদের পসরা সাজিয়ে বসেন। প্রতি দিন সকাল থেকে ক্রেতা-বিক্রেতাদের দর কষাকষি আর হাঁকডাকে সরগরম থাকে ওই বাজার। তবে সকাল ৯টা বাজলেই লহমায় সমস্ত কোলাহল থেমে যায়। যাদুমন্ত্রের মতো মুহূর্তে স্তব্ধ হয়ে যায় চারপাশ। ক্রেতা থেকে বিক্রেতা সকলেই হাতে একটি রেডিয়ো নিয়ে দাঁড়িয়ে পড়েন। কারণ, সেই সময় শুরু হয় আকাশবাণীর গীতাঞ্জলি অনুষ্ঠান। নাহ্, সকলের গানের প্রতি ভালবাসা নয়। আসলে ওই একটি অনুষ্ঠানই কারও মুখের হাসি চওড়া করে দিতে পারে। মাত্র এক টাকার বিনিময়ে তাঁদেরই কেউ পেয়ে যেতে পারেন নগদ সাড়ে সাতশো টাকা।
গত তিন দশকেরও বেশি সময় ধরে এই ভাবেই লটারি খেলা হয়ে আসছে মাধবগঞ্জ বাজারে। সব মিলিয়ে জনা চারেক স্থানীয় এই লটারির আয়োজক। বাজার বসতেই তাঁরা এসে বসে পড়েন বাজারের এক কোণায়। রেডিয়ো ছাড়াও তাঁদের সঙ্গে থাকে টুকরো রোল করা এক হাজারটি ছোট্ট কাগজ। যেগুলিতে লেখা রয়েছে একটি করে সিনেমার নাম। এগুলিই আসলে লটারির টিকিট। রোজ ওই বাজারে আসা সব্জি, মাছ, ফল বিক্রেতা থেকে শুরু করে স্থানীয় ক্রেতারা এক টাকার বিনিময়ে এই রোল করা কাগজ কেনেন। কেউ কেউ আবার একাধিক কাগজও কেনেন। এর পর সকাল ৯টা বাজলেই রেডিয়োয় আকাশবাণীর অনুষ্ঠানে কান পাতেন সকলে। কেনা টিকিটে লেখা সিনেমার গান ওই অনুষ্ঠানে বেজে উঠলেই কিস্তিমাত! তখন লটারি বিক্রেতার কাছে নিজের টিকিট দেখালেই মিলে যায় কড়কড়ে সাড়ে সাতশো টাকা।
লটারি বিক্রেতা শ্রীমন্ত দে বলেন, “মাঝে মধ্যে গীতাঞ্জলিতে দু’টি বা তিনটি গানও শোনানো হয়। তখন তিন বিজেতার মধ্যে পুরস্কারের সাড়ে সাতশো টাকা ভাগ করে দেওয়া হয়।” আর এক লটারি বিক্রেতা মধুসূদন কর বলেন, “এ ভাবেই আমরা প্রায় ৩৪ বছর ধরে লটারির ব্যবসা চালিয়ে আসছি। প্রতি দিন এক হাজারটি টিকিটের খেলা হয়। তাতে দিনে হাজার টাকার উপার্জন। তবে তার মধ্যে থেকেই বিজেতাদের সাড়ে সাতশো টাকা পুরস্কার হিসাবে দিতে হয়।”
কৃষ্ণগঞ্জ এলাকার বাসিন্দা সহদেব দাস এই লটারির নিয়মিত ক্রেতা। তিনি বলেন, “যে হেতু খুব কম টিকিটের খেলা, তাই মাঝে মধ্যেই এই লটারি জিতে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকে। টিকিটের দামও যে হেতু নগণ্য, তাই সাতসকালে থলে হাতে বাজার করার ফাঁকে রোজ এক বার নিজের ভাগ্যে শান দিয়ে যাই।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy