Advertisement
E-Paper

পিংলা কাণ্ডে তদন্তে গড়িমসির অভিযোগ

পিংলায় বিস্ফোরণের ঘটনার পর দেড় মাস পেরিয়ে গিয়েছে। গত ৬ মে পশ্চিম মেদিনীপুরের পিংলার ব্রাহ্মণবাড়ে ভয়াবহ বিস্ফোরণে ১২ জনের মৃত্যু হয়। পরে কলকাতার বাঙুর হাসপাতালে আরও এক জনের মৃত্যু হওয়ায় মোট মৃতের সংখ্যা দাঁড়ায় ১৩। ঘটনার পরদিনই মেদিনীপুর থেকে কারখানার মালিক রঞ্জন মাইতিকে গ্রেফতার করে পুলিশ। তারপর বাকি অভিযুক্তদের আর কাউকে গ্রেফতার করতে পারেনি সিআইডি। উঠছে তদন্তে গড়িমসির অভিযোগও।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ২০ জুন ২০১৫ ০২:২৭

পিংলায় বিস্ফোরণের ঘটনার পর দেড় মাস পেরিয়ে গিয়েছে। গত ৬ মে পশ্চিম মেদিনীপুরের পিংলার ব্রাহ্মণবাড়ে ভয়াবহ বিস্ফোরণে ১২ জনের মৃত্যু হয়। পরে কলকাতার বাঙুর হাসপাতালে আরও এক জনের মৃত্যু হওয়ায় মোট মৃতের সংখ্যা দাঁড়ায় ১৩। ঘটনার পরদিনই মেদিনীপুর থেকে কারখানার মালিক রঞ্জন মাইতিকে গ্রেফতার করে পুলিশ। তারপর বাকি অভিযুক্তদের আর কাউকে গ্রেফতার করতে পারেনি সিআইডি। উঠছে তদন্তে গড়িমসির অভিযোগও।

সিআইডি-র অবশ্য বক্তব্য, বাকি অভিযুক্তদের ধরার সব রকম চেষ্টা চলছে। ইতিমধ্যে বিস্ফোরণের ঘটনায় অন্যতম অভিযুক্ত শেখ সুরজের খোঁজে মুর্শিদাবাদের সুতিতে গিয়েছেন তদন্তকারী সংস্থার কর্তারা। অবশ্য সেখানে এই যুবকের খোঁজ মেলেনি। সুরজের বাড়ি সুতির নতুন চাঁদরায়। তদন্তকারী সংস্থার কর্তারা সেখানে গিয়ে তার পরিবারের লোকেদের সঙ্গে দেখা করেন। বাড়িতে তল্লাশিও চালান। শেষমেশ অবশ্য সুতি থেকে খালি হাতেই ফিরতে হয়েছে সিআইডিকে।

তদন্তাকারী সংস্থার এক সূত্রে অবশ্য খবর, সুরজের সম্পর্কে নির্দিষ্ট কিছু তথ্য মিলেছে। জানা গিয়েছে, ৬ মে ঘটনার দিন পিংলার কারখানাতেই ছিলেন এই যুবক। বিস্ফোরণের আগে পর্যন্ত তিনি কারখানায় ছিলেন। যখন বিস্ফোরণ হয়, তখন তিনি কারখানার অদূরে দাঁড়িয়ে পরিবারের লোকেদের সঙ্গে ফোনে কথা বলছিলেন। বিকট শব্দ পেয়ে সুরজ বুঝে যান, কারখানায় ভয়াবহ বিস্ফোরণ হয়েছে। ভয়াবহ বিস্ফোরণের কথা তিনি পরিবারের লোকেদের জানিয়েও দেন। পরে মৃতদের পরিবারের লোকেদের সঙ্গেও ফোনে যোগাযোগ করার চেষ্টা করেন। কয়েকজনের সঙ্গে যোগাযোগও হয়। সুরজ তাঁদের মেদিনীপুরে চলে আসার কথা জানিয়ে দেন। তবে সুরজ নিজে পিংলা থেকে চম্পট দেন।

ওই সূত্র জানাচ্ছে, ঘটনার পরদিন সকালে সুরজ হাওড়া স্টেশনে যান। সেখানে মৃত কয়েকজনের পরিবারের লোকেদের সঙ্গে দেখা করেন। তাঁদেরকে মেদিনীপুরগামী ট্রেনের টিকিটও কেটে দেন। মৃতদের পরিবারের লোকেরা চেয়েছিলেন, সুরজও তাঁদের সঙ্গে মেদিনীপুরে ফিরুক। পুলিশের হাতে ধরা পড়ে যাওয়ার ভয়ে সুতির এই যুবক অবশ্য মেদিনীপুরে ফিরতে রাজি হননি। সুরজের সম্পর্কে এই ঘটনার কথা জানতে পেরে তদন্তকারী সংস্থার কর্তারা হাওড়া স্টেশনে যান। স্টেশন- কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে ওই দিনের সিসিটিভির ফুটেজ দেখতে চান। ততক্ষণে অবশ্য দেরি হয়ে গিয়েছে। ঘটনার পর পেরিয়ে গিয়েছে দু’সপ্তাহ।

গত ৬ মে বিস্ফোরণে নিহতদের মধ্যে ন’জনই নাবালক। পরে তদন্তে জানা যায়, সুরজই নিজের গ্রাম এবং লাগায়ো এলাকা থেকে অল্পবয়সী ছেলেদের টাকার লোভ দেখিয়ে পিংলার কারখানায় নিয়ে আসার ব্যাপারে মধ্যস্থতা করেন।

ঘটনার পর থেকেই সুরজ পলাতক। পুলিশ তাকে খুঁজছে। সুতি থানার পুলিশ বার কয়েক হানাও দিয়েছে তাঁর বাড়িতে। স্থানীয় পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, গত এক মাসে বার কয়েক সুরজ নতুন চাঁদরায় তার বাড়িতেও এসেছে বলে তাদের কাছে খবর রয়েছে।

শুধু সুরজই নয় , ঘটনার সঙ্গে তার ভাই মোহন শেখও জড়িত বলে সন্দেহ পুলিশের। তাঁকেও খুঁজছে পুলিশ। জেলা পুলিশের এক কর্তা বলেন, ‘‘নতুন চাঁদরার বারুদের কারবার নিয়ে বিস্তর অভিযোগ রয়েছে সুতি থানায়। বহুবার তাঁদের গ্রেফতারও করেছে পুলিশ । পিংলার ঘটনার পরও সেখানে বারুদ আনা নেওয়ার কাজ করছে জনা পাঁচেক যুবক। তাঁদের নামও রয়েছে পুলিশের কাছে। এই মুহূর্তে পুলিশ সেখানে অভিযান চালাতে চাইছে না। কারণ সেক্ষেত্রে শাসক দলের নেতাদেরও বাধা আসছে।’’

বিস্ফোরণের ঘটনায় ধৃত রঞ্জন মাইতি এলাকায় তৃণমূল কর্মী হিসেবে পরিচিত। জেল হেফাজতের মেয়াদ শেষে শুক্রবার রঞ্জনকে ফের মেদিনীপুর সিজেএম আদালতে হাজির করা হয়। বিচারক ধৃতের চোদ্দো দিনের জেল হেফাজতের নির্দেশ দেন।

তদন্তে নেমে গোয়েন্দারা জানতে পারেন, ঘটনায় রঞ্জনের ভাই নিমাই মাইতিও যুক্ত। নিমাইয়ের একটি পিক- আপ ভ্যান রয়েছে। এই ভ্যানে করেও বিভিন্ন এলাকায় বাজি সরবরাহ করা হত। এই পরিস্থিতিতে রঞ্জনের ভাইকে জিজ্ঞাসাবাদ করা প্রয়োজন। তবে নিমাই- এর নাগাল এখনও পায়নি সিআইডি। ঘটনার পর বিস্ফোরণস্থলে গিয়ে প্রয়োজনীয় নমুনা সংগ্রহ করে তদন্তকারী সংস্থা। ওই সব নমুনা পরীক্ষা- নিরীক্ষার জন্য ‘সেন্ট্রাল ফরেন্সিক সায়েন্স ল্যাবরেটরি’- তে (এসএফএসএল) পাঠানো হয়েছে। অবশ্য তার রিপোর্ট এখনও আসেনি।

ইতিমধ্যে মুস্তাক শেখ নামে বিস্ফোরণে জখম এক কিশোরের গোপন জবানবন্দি নেওয়া হয়েছে মেদিনীপুর আদালতে। সিআইডি ধৃত রঞ্জনের গোপন জবানবন্দিও নিতে চেয়েছিল। তদন্তকারী সংস্থার এক সূত্রে খবর, গোড়ায় গোপন জবানবন্দি দিতে রাজিও ছিলেন রঞ্জন। পরে অবশ্য তিনি বেঁকে বসেন। আদালতে জানিয়ে দেন, তিনি গোপন জবানবন্দি দিতে ইচ্ছুক নন।

তদন্তে গড়িমসির অভিযোগে সরব সিপিএমও। সিপিএমের জেলা সম্পাদক তরুণ রায় বলেন, “সত্যিটা ধামাচাপা দেওয়ার চেষ্টা চলছে। তবে মানুষ বুঝে গিয়েছে কারা বোমার কারবার করে।” তাঁর কথায়, “পিংলার ঘটনা নিয়ে যে ভাবে লুকোনো হচ্ছে, তাতে যারা বোমা বাঁধে তারাই উত্‌সাহিত হবে।”

pingla blast cid midnapore howrah station
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy