Advertisement
২৫ এপ্রিল ২০২৪
কালীঘাটে জমি-মামলা

নিজের সম্মান বাঁচাক পুলিশ, বলছে কোর্ট

কালীঘাটের হরিশ চ্যাটার্জি স্ট্রিটের একটি জমি নিয়ে লাগাতার গোলমালের মামলায় বিচারপতি বাগচী ৩১ অগস্ট নির্দেশ দিয়েছিলেন, কেউ যাতে মামলার আবেদনকারীদের বিরক্ত না-করে, সেটা পুলিশকে নিশ্চিত করতে হবে।

বিবাদভূমি: কালীঘাটের এই জমি ঘিরেই কাজিয়া। —নিজস্ব চিত্র।

বিবাদভূমি: কালীঘাটের এই জমি ঘিরেই কাজিয়া। —নিজস্ব চিত্র।

নিজস্ব সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ০৯ সেপ্টেম্বর ২০১৭ ০৩:৫৯
Share: Save:

কে মামলা করেছেন, কার বিরুদ্ধে করেছেন— এ-সব দেখা মোটেই হাইকোর্টের কাজ নয় বলে জানিয়ে দিলেন বিচারপতি জয়মাল্য বাগচী। তাঁর বক্তব্য, শুধু মামলা এবং মামলার বিষয়টিই কোর্টের বিবেচ্য।

কালীঘাটের হরিশ চ্যাটার্জি স্ট্রিটের একটি জমি নিয়ে লাগাতার গোলমালের মামলায় বিচারপতি বাগচী ৩১ অগস্ট নির্দেশ দিয়েছিলেন, কেউ যাতে মামলার আবেদনকারীদের বিরক্ত না-করে, সেটা পুলিশকে নিশ্চিত করতে হবে। তা সত্ত্বেও বৃহস্পতিবার ফের সেখানে গোলমাল হয়েছে বলে অভিযোগ। এই পরিপ্রেক্ষিতে বিচারপতি বাগচী শুক্রবার মন্তব্য করেন, ‘‘দেশে আইনের শাসন থাকবে এটাই বড় কথা। পুলিশ এবং প্রশাসনের উচিত, নিজেদের মানসম্মান বাঁচানো। ভাঁড়ামোকে প্রশ্রয় দেওয়া আদালতের কাজ নয়, সেটা উচিতও নয়।’’

একই সঙ্গে ওই জমি নিয়ে ১৩ সেপ্টেম্বরের মধ্যে পূর্ণাঙ্গ রিপোর্ট পেশ করার জন্য কালীঘাট থানার ওসি-কে নির্দেশ দিয়েছেন বিচারপতি বাগচী। সরকারি কৌঁসুলিকে তাঁর নির্দেশ, ওই জমির মালিকানার বিষয়ে কলকাতা পুরসভার বক্তব্য জানাতে হবে।

বিচারপতি বাগচী ৩১ অগস্ট কালীঘাট থানার ওসি-কে নির্দেশ দিয়েছিলেন, আবেদনকারীদের যাতে নাজেহাল হতে না-হয়, সেটা সুনিশ্চিত করার সঙ্গে সঙ্গে ওই জমি নিয়ে অভিযোগের ভিত্তিতে এফআইআর দায়ের করে তদন্ত শুরু করতে হবে। কিন্তু তার পরেও ফের গোলমাল হয়েছে বলে এ দিনের শুনানিতে অভিযোগ করা হয়।

পুলিশ জানায়, হরিশ চ্যাটার্জি স্ট্রিটের বাসিন্দা রঞ্জনা হাজরা এবং তাঁর ভাই দীপকের অভিযোগ, তাঁদের জমি নিয়ে প্রতিবেশী অজিত বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে গোলমাল চলছে। গত ২ অগস্ট অজিতবাবু এবং তাঁর ঘনিষ্ঠ সত্যেন্দ্রপ্রসাদ সিংহ কালীঘাট থানার পুলিশের সামনে রঞ্জনা এবং তাঁর ভাইকে মারধর করেন বলেও অভিযোগ। তাঁদের আরও অভিযোগ, থানায় জানানো সত্ত্বেও পুলিশ এফআইআর দায়ের করেনি। তদন্তও করেনি। পুলিশি নিষ্ক্রিয়তার প্রতিবাদে হাইকোর্টে মামলা দায়ের করেন ওই মহিলা।

রঞ্জনাদের কৌঁসুলি বিকাশরঞ্জন ভট্টাচার্য এ দিন সকালে বিচারপতি বাগচীর আদালতের দৃষ্টি আকর্ষণ করে জানান, তাঁর মক্কেলদের শান্তি বিঘ্নিত করছেন অজিতবাবু এবং তাঁর সঙ্গীরা। অজিতবাবু মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের দাদা। তিনি পুলিশের উপরে প্রভাব খাটাচ্ছেন। তাই পুলিশ তাঁর (বিকাশবাবুর) মক্কেলদের নিরাপত্তা দিচ্ছে না। ৭ অগস্টও গোলমাল পাকিয়েছিলেন তাঁরা।

বিচারপতি সব শুনে বিকাশবাবুকে জানান, দুপুরে তিনি অভিযুক্ত এবং অভিযোগকারীদের বক্তব্য শুনবেন। দুপুরে ফের মামলাটি উঠলে সরকারি কৌঁসুলি অমিতেশ বন্দ্যোপাধ্যায় জানান, পুলিশ ফৌজদারি মামলা দায়ের করেছে। পুলিশ পিকেট বসেছে অভিযোগকারীর বাড়ির সামনে। দু’পক্ষই পরস্পরের বিরুদ্ধে অভিযোগ করেছে। বিকাশবাবু সরকারি কৌঁসুলির এই বক্তব্যের বিরোধিতা করে প্রশ্ন তোলেন, পুলিশ পিকেট থাকলে গোলমাল হয় কী করে?

গোলমাল বাধানোর অভিযোগ অস্বীকার করে অভিযুক্তদের কৌঁসুলি অশোক বন্দ্যোপাধ্যায় আদালতে জানান, তাঁর মক্কেলদের হলফনামা পেশের সুযোগ দেওয়া হোক। হলফনামায় তিনি বিস্তারিত ভাবে বিষয়টি জানাবেন। জমির মালিকানা নিয়ে তথ্যপ্রমাণও দাখিল করবেন।

তা শুনে বিচারপতি বাগচী বলেন, দু’পক্ষের উচিত দেওয়ানি আদালতে গিয়ে গোলমাল মেটানো। বিশেষ প্রয়োজন ছাড়া দেওয়ানি আদালতের এক্তিয়ারভুক্ত বিষয়ে হাইকোর্ট তার ক্ষমতা প্রয়োগ করতে চায় না। তার পরেই পুলিশ-প্রশাসনের উদ্দেশে মন্তব্য করেন, তারা যেন নিজেদের সম্মান বাঁচাতে যত্নবান হয়।

মামলার পরবর্তী শুনানি বুধবার।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

High Court Kalighat কালীঘাট
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE