শপথগ্রহণের অনুষ্ঠানে রাজ্যপাল এম কে নারায়ণন ও মন্ত্রী আশিস বন্দ্যোপাধ্যায়। বুধবার ছবিটি তুলেছেন বিশ্বনাথ বণিক।
অবশেষে শিকে ছিঁড়ল তৃণমূলের তিন বারের বিধায়ক আশিস বন্দ্যোপাধ্যায়ের। তৃণমূলের দুঃসময়ের এই বিধায়ক দলের ভিতরে গোষ্ঠী কোন্দলের শিকার হয়ে সুসময়ে মন্ত্রীত্ব পাননি বলে দলীয় সূত্রে খবর। প্রায় তিন বছর কেটে যাওয়ার পর দলের ভিতরে সহিষ্ণুতার পরিচয় দিয়ে রাজ্য মন্ত্রী সভায় নিজের ঠাঁই করে নিতে পারলেন রামপুরহাটের এই অবসরপ্রাপ্ত অধ্যাপক।
এতদিন পরে এই সম্মান কেন দলের প্রাক্তন বিধায়ককে? আশিসবাবুর নিজের ব্যাখ্যা, ১৯৯৮ সালে আজকের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় যখন তৃণমূল দল তৈরি করেছিলেন তখন আশিস বন্দ্যোপাধ্যায়কে দলের স্ট্রিয়ারিং কমিটির সদস্য করেছিলেন তিনি। বীরভূম জেলার কার্যকরী সভাপতি পদে থাকাকালীন ২০০১ সালের বিধানসভা নির্বাচনে জেলার তৃণমূল বিধায়ক হন আশিসবাবু। তারওপরে ২০০৬ সালেও জেলার একমাত্র তৃণমূল বিধায়ক তিনি। এরপরই তাঁকে বীরভূম জেলার কার্যকরী সভাপতির পদ থেকে সরিয়ে দলের চেয়ারম্যান করা হয়।
দলের অন্দরমহলে নানুর থেকে মুরারই, বোলপুর, দুবরাজপুর সব এলাকায় জেলা সভাপতি অনুব্রত মণ্ডল গোষ্ঠির সঙ্গে আশিসবাবুর অনুগামীদের মতান্তর সুবিদিত। তবে, অনুব্রতর গোষ্ঠীতে সিপিএম, ফব, আর এসপির লোকজন ভিড় বেশি বলে দলীয়সূত্রে খবর। রাজনৈতিক মহলের ব্যাখ্যা, সেই সঙ্গে নানুর, লাভপুর এলাকায় বামফ্রন্টের শরিকি সংঘর্ষকে কাজে লাগিয়ে অনুব্রতর অনুগামীরা নিজেদের প্রভাব খাটাতে শুরু করে। রামপুরহাট বিধানসভার তিনবারের বিধায়ক হয়েও আশিসবাবু যেটা করতে পারেননি। তিনি রামপুরহাট দলের মজবুত সংগঠন করতেও ব্যর্থ হন।
দলীয় কর্মীদের মধ্যে ২০১১ সালের বিধানসভা নির্বাচন পর্যন্ত ক্ষোভ ছিল রামপুরহাট এলাকায় একমাত্র শিক্ষা সেল ছাড়া তৃণমূলের শাখা সংগঠন আশিসবাবু করতে পারেননি। এলাকায় তৃনমূল কর্মীদের কাছে কান পাতলে আজও শুনতে পাওয়া যায় তিনি দ্বিতীয় কোনও নেতাকেও তৈরি করতে পারেননি। যার জন্য ভিতরে ভিতরে রামপুরহাট মহকুমা এলাকায় অনেকে অনুব্রত মণ্ডলের সঙ্গে যোগাযোগ রেখে চলেন। এসবের বিতর্কের মাঝেও ২০০৯ বীরভূম কেন্দ্রে শতাব্দী রায়ের লোকসভা নির্বাচনে জয়ী হওয়ার মূলে আশিসবাবুর অবদান দলের বৃহত্তর অংশ মেনে নেয়। এক সময়, দলের সভা মঞ্চে অনুব্রত মণ্ডল থাকলে আশিস বন্দ্যোপাধ্যায়, শতাব্দী রায়রা থাকতেন না। রাজনৈতিক মহলের কথায়, তবুও নিজের ধৈর্য্য শক্তির প্রতি আস্থা রেখে নিজের লক্ষ্যে অবিচল থেকে শতাব্দী রায়, সিউড়ির বিধায়ক স্বপন কান্তি ঘোষ, মুরারই বিধায়ক নুরে আলম চৌধুরী, নানুরের বিধায়ক গদাধর হাজরা, কেতুগ্রামের বিধায়ক শেখ সাহনাজ দের সঙ্গে নিয়ে জেলা তৃণমূলের একটি উপদলের নেতৃত্ব দিতে থাকেন আশিসবাবু। তবে, দলীয় সভাপতির প্রতি আনুগত্যই প্রথমে আশিসবাবুর রাজ্য মন্ত্রী সভায় পরিষদীয় সচিব পদ ও পরে এই মন্ত্রিত্ব লাভকে এনে দিল বলে মনে করছেন অনেকে। আশিসবাবু অবশ্য বলেন, “ওসব আনুগত্য বা অনুগত নয়, মুখ্যমন্ত্রী যেটা ভাল বুঝেছেন সেটাই করেছেন।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy