বিপন্ন শৈশব। সুতির ছাবঘাটিতে অর্কপ্রভ চট্টোপাধ্যায়ের ছবি।
ন’বছরের রফিক শেখ চতুর্থ শ্রেণিতে পড়ে। দাদা সফিক পড়ে ষষ্ঠ শ্রেণিতে। সাত জনের সংসারের অর্থিক অনটন চরম। তাই অরঙ্গাবাদে স্কুুলে যাওয়ার আগে এবং স্কুল থেকে ফিরে দৈনিক প্রায় ৫০০ করে বিড়ি বাঁধে দু’জনে মিলে। জঙ্গিপুর মহকুমার ৭টি ব্লকের প্রায় সর্বত্রই রফিক, সফিকদের দেখা মিলবে। রফিকদের মতো সবাই যে স্কুুলে যেতে পারে তা-ও নয়। ছাবঘাটির কেতাবুল, উমরপুরের সুমতিরা ১২ বছর পেরিয়ে গেলেও স্কুলে পা রাখেনি।
সরকারি ভাবে অবশ্য বিড়িশ্রমিকদের মধ্যে শিশুর সংখ্যা কত, তার হিসাব নেই প্রশাসনে। বছর চারেক আগে জঙ্গিপুরের বিড়ি শ্রমিকদের নিয়ে বেসরকারি উদ্যোগে দু’টি সমীক্ষা চালানো হয়। একটি বেসরকারি স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার সমীক্ষার হিসেবে জঙ্গিপুরের ৬ লক্ষ বিড়ি শ্রমিকের মধ্যে ১০ বছরের নীচে রয়েছে অন্তত ২০ শতাংশ। তাদের সমীক্ষা রিপোর্টে বলা হয়েছে ‘জঙ্গিপুরের ১৯১টি পরিবারে সমীক্ষা চালিয়ে দেখা গিয়েছে ১০১টি পরিবারে এক জন শিশু বিড়ি শিল্পে কাজ করে। ৮৯টি পরিবারে সংখ্যাটা গড়ে তিন জন।’ শিশুশ্রম নিয়ে কর্মরত আর একটি স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার হিসেবে জঙ্গিপুরে বিড়ি শিল্পের সঙ্গে জড়িত অন্তত ৮৮ হাজার শিশু। ওই সংস্থার মুর্শিদাবাদ জেলার কো-অর্ডিনেটর সিরাজুল ইসলাম বলেন, “এখন অনেকেই ১৩-১৪ বছরের শিশুকে নিয়ে ভিন্ রাজ্যে পাড়ি দিচ্ছে রাজমিস্ত্রির কাজে। ফলে হিসাবটা আরও অনেক বেশি।”
‘শিশু শ্রম নিরোধক আইন ১৯৮৬’ বলে শিশু শ্রম নিষিদ্ধ এবং শাস্তি যোগ্য অপরাধ। জাতীয় শিশু সুরক্ষা ও অধিকার কমিশন একাধিক বার এ রাজ্যকে নির্দেশ পাঠিয়েছেন শিশুশ্রম বন্ধে কড়া পদক্ষেপ করতে। কিন্তু লাভ হয়নি। আইএনটিইউসি’র রাজ্য কমিটির সদস্য বাদশার আলি বলেন, “বিড়ি শিল্পের ক্ষেত্রে তামাকের ক্ষতিকর প্রভাবে শিশু শ্রমিকরা অপুষ্টি ও শ্বাসকষ্টে আক্রান্ত হচ্ছে। একটাই ছোট ঘরে খাওয়া, শোওয়া, বিড়ি বাঁধা চলছে। চিন্তার কারণ সেটাই।” জঙ্গিপুরের সহকারি শ্রম কমিশনার শ্যামাপ্রসাদ কুণ্ডু জানান, কড়া আইন প্রণয়ন করেও কাজ না হওয়ায় শিশুশ্রমের বিরুদ্ধে সচেতনতা গড়ে তোলার উপর জোর দিচ্ছেন তাঁরা। সিদ্ধান্ত হয়েছে সমস্ত বিড়ি কারখানা, ইটভাটার সামনে শিশুশ্রম বিরোধী প্রচার চালানো হবে। বৃহস্পতিবার থেকে সেই কর্মসূচি শুরু করা হবে বিড়ি শিল্পশহর অরঙ্গাবাদ থেকে।”
এ দিকে, মুর্শিদাবাদে শিশুশ্রমিকদের জন্য ১৪০টি শিশুশ্রমিক বিদ্যালয় রয়েছে। যার সবগুলিই জঙ্গিপুরের বিড়ি অধ্যুষিত এলাকায়। এই বিদ্যালয় সংগঠনের জেলা সভাপতি গোলাম নাসের বলেন, “শিশুশ্রমিকদের বিদ্যালয়মুখী করার জন্য প্রতিটি ছাত্রকে ১৫০ টাকা করে মাসে ভাতা দেওয়ার ব্যবস্থা থাকলেও প্রায় দু’বছর তা বন্ধ। ফলে স্কুলে আসার আগ্রহ কমছে শিশুদের। অনেকেই স্কুল ছেড়ে বিড়ি বা ইটভাটায় শ্রমিকের কাজে ফিরে যাচ্ছে।”
শিশুশ্রমিক স্কুলগুলির হাল দেখে শিশুশ্রম রোধে প্রশাসনের সদিচ্ছায় সন্দেহ জাগে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy