Advertisement
২০ এপ্রিল ২০২৪
সংরক্ষণের গেরোয় ক্ষোভ শাসক-শিবিরে

জেতা ওয়ার্ড ছাড়তে হচ্ছে শ্যামকেও

স্থানচ্যুত হতে হচ্ছে শ্যামাপ্রসাদ মুখোপাধ্যায়কে! চার-চার বার যে ওয়ার্ড থেকে দাঁড়িয়ে জিতেছেন রাজ্যের বস্ত্রমন্ত্রী, সেই ওয়ার্ড এ বার ছাড়তে হতে পারে তাঁকে। সৌজন্যে, সংরক্ষণ। সংরক্ষণের গুঁতোয় কাকে কাকে ছাড়তে হবে ওয়ার্ড, কারাই বা এ যাত্রা রেহাই পাবেন, তা নিয়ে জোর জল্পনা চলছিল কয়েক মাস ধরেই। অবশেষে জল্পনার অবসান হল পুর-নির্বাচনের সংরক্ষণের খসড়া তালিকা প্রকাশ হওয়ার পরে। সোমবারই বাঁকুড়া জেলার তিনটি পুরসভার সব কাউন্সিলরের হাতে চলে আসে সেই খসড়া।

নিজস্ব সংবাদদাতা
বাঁকুড়া শেষ আপডেট: ০৪ ফেব্রুয়ারি ২০১৫ ০০:৩৭
Share: Save:

স্থানচ্যুত হতে হচ্ছে শ্যামাপ্রসাদ মুখোপাধ্যায়কে! চার-চার বার যে ওয়ার্ড থেকে দাঁড়িয়ে জিতেছেন রাজ্যের বস্ত্রমন্ত্রী, সেই ওয়ার্ড এ বার ছাড়তে হতে পারে তাঁকে। সৌজন্যে, সংরক্ষণ।

সংরক্ষণের গুঁতোয় কাকে কাকে ছাড়তে হবে ওয়ার্ড, কারাই বা এ যাত্রা রেহাই পাবেন, তা নিয়ে জোর জল্পনা চলছিল কয়েক মাস ধরেই। অবশেষে জল্পনার অবসান হল পুর-নির্বাচনের সংরক্ষণের খসড়া তালিকা প্রকাশ হওয়ার পরে। সোমবারই বাঁকুড়া জেলার তিনটি পুরসভার সব কাউন্সিলরের হাতে চলে আসে সেই খসড়া। যা দেখে বিশেষ করে ক্ষোভ ছড়িয়েছে শাসকদল তৃণমূলের একাংশে। শুরু হয়েছে নানা জল্পনাও। বিরোধী-শিবিরে অবশ্য উত্তেজনার আঁচ তেমন নেই।

খসড়া সংরক্ষণ তালিকা অনুসারে সবেচেয়ে বড় চমক বিষ্ণুপুর পুরসভায়। তালিকা অনুযায়ী, সংরক্ষণের কোপে এ বার নিজের ওয়ার্ডে দাঁড়াতে পারছেন না বিষ্ণুপুরের পুরপ্রধান শ্যামাপ্রসাদ মুখোপাধ্যায় এবং উপ-পুরপ্রধান বুদ্ধদেব মুখোপাধ্যায়। এক টানা পাঁচটি পুরনির্বাচনে জয়লাভের পর থেকেই পুরপ্রধান ও উপপুরপ্রধান হিসেবে রয়েছেন তাঁরা। তৃণমূল সূত্রের খবর, এর মধ্যে শ্যামবাবুর নিজের ওয়ার্ড ১১ নম্বর থেকে এক বারই মাত্র সংরক্ষণের জন্য অন্য ওয়ার্ডে দাঁড়িয়েছিলেন। বাকি চার বারই ১১ নম্বর থেকে জিতেছেন তিনি। এ বার তাঁর ওয়ার্ডটি সংরক্ষিত হয়েছে মহিলাদের জন্য। একই ভাবে সংরক্ষণের কারণে এর আগে দু’বার নিজের ওয়ার্ড ৯ নম্বর ছেড়ে অন্যত্র দাঁড়াতে হয়েছিল বুদ্ধবাবুকে। এ বার তাঁর ওয়ার্ডটিও মহিলাদের জন্য সংরক্ষিত হয়েছে। এই ঘটনার কথা জানাজানি হতেই শোরগোল পড়েছে ওই দু’টি ওয়ার্ডে।

অন্য দিকে, বিষ্ণুপুরের আর এক তৃণমূল কাউন্সিলর দিব্যেন্দু বন্দ্যোপাধ্যায়ের অনুগামীরা স্বস্তিতে। সংরক্ষণের ঠেলায় নিজের ৬ নম্বর ওয়ার্ডে পরপর দু’বার ভোটে দাঁড়াতে পারেননি দিব্যেন্দুবাবু। এ বার তাঁর ওয়ার্ড সংরক্ষণের বাইরে হওয়ায় নিজের ওয়ার্ডে ফিরে আসার সুযোগ পাচ্ছেন তিনি। যদিও ওয়ার্ড সংরক্ষণের আসার পরে তাঁরা কোথায় দাঁড়াবেন, সে বিষয়ে স্পষ্ট করে কিছু বলতে পারেননি শ্যামবাবু বা বুদ্ধবাবু কেউই। শ্যামবাবুর কথায়, “আমি আদৌ পুরভোটে লড়ব কিনা, তা নিয়ে কোনও সিদ্ধান্ত নিইনি।” উপপুরপ্রধান বুদ্ধবাবুর সাবধানী মন্তব্য, “নিয়ম মেনে সংরক্ষণ হয়েছে। এ নিয়ে কিছুই বলার নেই। কে কোথায় দাঁড়াবে, তা দল ঠিক করবে।”

বাঁকুড়া পুরসভাতেও সংরক্ষণের খসড়া তালিকা পাওয়ার পরে শাসকদলের অনেক কাউন্সিলরের মধ্যে ক্ষোভ রয়েছে। কেউ কেউ প্রকাশ্যে, অনেকে আবার আড়ালে এ নিয়ে মন্তব্য করছেন। বাঁকুড়ার পুরপ্রধান শম্পা দরিপার ১০ নম্বর ওয়ার্ড সংরক্ষণ তালিকার বাইরে রয়েছে। তবে, উপ-পুরপ্রধান অলকা সেন মজুমদারের ১২ নম্বর ওয়ার্ডটি তফসিলি জাতি উপজাতির জন্য সংরক্ষিত হয়েছে। অলকাদেবী এ নিয়ে কোনও মন্তব্য করতে রাজি হননি। বিষয়টি দলের উপরে ছেড়ে দিয়েছেন। তবে দীর্ঘদিনের কাউন্সিলর, বর্তমানে বাঁকুড়া পুরসভায় তৃণমূলের দলনেতা শান্তি সিংহ সংরক্ষণ নিয়ে প্রকাশ্যেই ক্ষোভ উগরে দিয়েছেন। তাঁর নিজের ৭ নম্বর ওয়ার্ডের পাশাপাশি ৮ ও ৯ নম্বর ওয়ার্ডটিও এ বার সংরক্ষণের আওতায় এসেছে। শান্তিবাবু বলেন, “পরপর তিনটি ওয়ার্ড সংরক্ষণ তালিকায় এল কী করে, তা বুঝতে পারছি না। কোথাও গোলমাল হয়েছে মনে হচ্ছে। দলকে জানিয়েছি বিষয়টি খতিয়ে দেখতে।” নিজের ওয়ার্ড সংরক্ষণের তালিকায় আসার পরে নামপ্রকাশে অনিচ্ছুক বাঁকুড়ার এক তৃণমূল কাউন্সিলরও ক্ষোভ উগরে দিয়েছেন। ওই কাউন্সিলরের কথায়, “আমার ওয়ার্ডের থেকে শম্পা দরিপার ওয়ার্ডে বেশি তফশিলি জাতি উপজাতিভুক্ত মানুষজন রয়েছেন। অথচ সেই ওয়ার্ড বাদ দিয়ে আমার ওয়ার্ড সংরক্ষণের আওতায় এল। এখানে কোনও কারচুপি হয়ে থাকতেও পারে!”

শম্পাদেবী অবশ্য এই সব অভিযোগ মিথ্যা ও ভিত্তিহীন বলে উড়িয়ে দিয়ে পুরোটাই নির্বাচন কমিশনের সিদ্ধান্ত বলে দাবি করেছেন। বাঁকুড়ার জেলাশাসক বিজয় ভারতী বলেছেন, “সংরক্ষণ নিয়ে কারও কোনও অভিযোগ থাকলে দু’সপ্তাহের মধ্যে জানাতে পারেন। আমরা খতিয়ে দেখব।” আগামী ২৪ ফেব্রুয়ারি সরকারি ভাবে সংরক্ষিত ওয়ার্ডের তালিকা প্রকাশিত হবে বলে তিনি জানান।

শাসদলের অন্দরে বিক্ষিপ্ত ক্ষোভ-বিক্ষোভ থাকলেও সংরক্ষণ নিয়ে সিপিএম, বিজেপি বা কংগ্রেস কোনও অভিযোগ তোলেনি। সিপিএমের রাজ্য সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য অমিয় পাত্র বলেন, “আমি এখনও বাঁকুড়া ছাড়া অন্য দু’টি পুরসভার সংরক্ষণ তালিকা দেখিনি। সরকারি নিয়ম মেনেই সংরক্ষণ করা হয়। তাই আমাদের কোনও অভিযোগ নেই।” বিজেপি-র অন্যতম জেলা সম্পাদক নীলাদ্রি শেখর দানাও বলেন, “সংরক্ষণ তালিকা নিয়ে আমাদের কোনও অভিযোগ নেই।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE