স্টেশনপাড়ার গোল্ডেন স্টার ক্লাবের প্রতিমা। —নিজস্ব চিত্র
অনুভূতি থাকলে দুধের স্বাদ ঘোলেও মেটে। অন্তত এমনটাই মনে করেন লাভপুরের এই ক্লাবের কর্মকর্তারা। পঞ্জিকার নির্ঘণ্ট অনুযায়ী এ বারে চার দিনের বদলে দুর্গাপুজো হয়েছিল তিন দিন। পরের বছরও তিন দিন দুর্গাপুজোর জন্য বরাদ্দ রয়েছে বলে শাস্ত্রকারদের প্রাথমিক অভিমত। কিন্তু, কিছুতেই ফি বছর পুজোয় এক দিনের বরাদ্দ কমে যাওয়া মেনে নিতে পারছেন ক্লাবের সদস্যরা। তাই সেই ঘাটতি পূরণ করতে এ বার টানা ছ’ দিন ধরে সরস্বতী পুজোর আয়োজন করেছে লাভপুর স্টেশনপাড়ার গোল্ডেন স্টার ক্লাব।
স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, গত ১৬ বছর ধরে বাগদেবীর আরাধনার আয়োজন করছেন ওই ক্লাবের সদস্যেরা। শনিবারেই ওই পুজোর উদ্বোধন হয়েছে। এ বারে এমনিতেই শনি ও রবিবারে সরস্বতী পুজো হয়েছে বিভিন্ন জায়গায়। সোমবারেই অধিকাংশ স্থানে বিসর্জনের মধ্যে পুজোর সমাপ্তি। কিন্তু, সোমবার থেকেই জাকজমকের শুরু লাভপুরের ওই ক্লাবে। চলবে টানা বৃহস্পতিবার পর্যন্ত। ক্লাব সভাপতি সুমন চট্টোপাধ্যায়, সম্পাদক আবির চক্রবর্তীরা বলেন, “আমাদের নিজেদের ক্লাবের দুর্গাপুজো নেই। পাড়ার পুজোয় সবাই সামিল হই। কিন্তু, প্রতি বছর এক দিন করে কমে যাওয়ায় পাড়ার কারও মন ভরে না। তখনই ঠিক করি ওই ঘাটতি পূরণ করতে সরস্বতী পুজোয় জোর দেওয়া হবে।” তাঁদের যুক্তি, ইচ্ছে থাকলেও দুর্গা প্রতিমা ধরে রাখা যায় না। প্রশাসনের নির্ধারিত দিনেই বিসর্জন দিতে হয়। সরস্বতী পুজোর ক্ষেত্রে কড়াকড়ি নেই বলেই তাঁদের দাবি।
শুধু দিনসংখ্যা বৃদ্ধিতেই থেমে নেই উদ্যোগ। খড় দিয়ে তৈরি হয়েছে আকর্ষণীয় মণ্ডপ। দুর্গাপুর থেকে আনা হয়েছে ১৬ ফুট উচ্চতার নজরকাড়া প্রতিমাও। প্রতি দিনই রয়েছে নানা অনুষ্ঠান। বিসর্জনের দিন রয়েছে পাড়ার সকলের এক সঙ্গে খাওয়া-দাওয়ার ব্যবস্থাও। স্বভাবতই পুজো ঘিরে মাতোয়ারা গোটা স্টেশন পাড়া। অন্যতম উদ্যোক্তা জয়দীপ মুখোপাধ্যায়, সব্যসাচী মণ্ডলরা বলছেন, “দুর্গাপুজোর মতোই সরস্বতী পুজোয় আত্মীয়স্বজনরা এসে গিয়েছেন। আসল বিষয়টি হল অনুভূতি। অনুভব করতে পারলে ঘোলেও দুধের স্বাদ মেলে।”
অন্য দিকে, বধূ স্বাগতা মুখোপাধ্যায়, শতরূপা সিংহরা জানান, এখন তাঁদের দম ফেলারও ফুরসত নেই। পুজো উপলক্ষে অভ্যাগতদের আপ্যায়ন, বাড়ির কাজ সেরে প্রতি দিনই এক বার করে মণ্ডপে যাওয়া চাই-ই চাই। তবে, সব থেকে খুশি কচিকাঁচারা। নবম শ্রেণির উৎকল চট্টোপাধ্যায়, দশম শ্রেণির শুভ্রাংশু চক্রবর্তী, তৃতীয় শ্রেণির সুচরিতা মণ্ডলরা বলে, “দুর্গাপুজোতেও আমাদের এত দিন ছুটি মেলে না। টানা ছ’দিন বই না খুললেও কেউ কিছু বলতে পারবে না। কারণ, বাড়ির বড়রাই তো ওই পুজোর ব্যবস্থা করেছে।”
এ দিকে, পাড়ার প্রবীণ বাসিন্দা হরিপ্রসাদ সরকার, তপন চক্রবর্তীরা জানান, তাঁরা বহু সরস্বতী পুজো দেখেছেন। নিজেরাও বহু বছর আয়োজন করেছেন। কিন্তু, এ ভাবে ছ’দিন ধরে সরস্বতী পুজোর কথা তাঁরা স্বপ্নেও ভাবেননি। সরস্বতীর আরাধনায় কেমন যেন দুর্গাপুজোর মতোই মেতে উঠেছে লাভপুরের এই পাড়া!
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy