Advertisement
২৪ এপ্রিল ২০২৪
ফের স্থগিতের আর্জি খারিজ

সাক্ষ্য দিতে এলেন না নিহতের পরিবার

জামিনযোগ্য গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি থাকা সত্ত্বেও ফের জেলা আদালতে নিজেদের সাক্ষ্য এড়িয়ে গেলেন নিহত সাগর ঘোষের পরিবারের সদস্যরা। উল্টে আইনজীবী মারফত সোমবার ফের বিচার প্রক্রিয়া স্থগিত করার আর্জি জানান নিহতের স্ত্রী সরস্বতীদেবী। বিচারক অবশ্য সেই আবেদন মঞ্জুর করেননি।

নিজস্ব সংবাদদাতা
সিউড়ি শেষ আপডেট: ২৪ ফেব্রুয়ারি ২০১৫ ০১:৫৭
Share: Save:

জামিনযোগ্য গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি থাকা সত্ত্বেও ফের জেলা আদালতে নিজেদের সাক্ষ্য এড়িয়ে গেলেন নিহত সাগর ঘোষের পরিবারের সদস্যরা। উল্টে আইনজীবী মারফত সোমবার ফের বিচার প্রক্রিয়া স্থগিত করার আর্জি জানান নিহতের স্ত্রী সরস্বতীদেবী। বিচারক অবশ্য সেই আবেদন মঞ্জুর করেননি।

সরকারি আইনজীবী রণজিৎ গঙ্গোপাধ্যায় বলেন, “যে মামলার বিচার প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে সেই পরিবারেরই সদস্যদের আদালতে অনুপস্থিতি নিয়ে উষ্মা প্রকাশ করছেন জেলা জজ গৌতম সেনগুপ্ত। যখন অভিযুক্তদের দু’জন জেলে রয়েছেন সেখানে এ ভাবে অনির্দিষ্টকাল সাক্ষ্য না দিয়ে বিচার প্রক্রিয়া থামাতে চাওয়াকে মোটেই ভালভাবে নেননি বিচারক। তবে সাক্ষ্য না দেওয়ায় জামিনযোগ্য বা জমিন অযোগ্য গ্রেফতারি পরোয়ানা অনুপস্থিত কারও বিরুদ্ধেই জারি হয়নি। আগামী ২৬ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত বিচারক দেখতে চাইছেন কত জন সাক্ষ্য দিচ্ছেন। ওই দিন নির্ধারিত সময়সীমা পার হয়ে গেলে আদালত এ ব্যাপারে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেবেন।”

প্রসঙ্গত, পঞ্চায়েত নির্বাচনের আগে খুন হন পাড়ুইয়ের বাঁধ নবগ্রামের বাসিন্দা সাগর ঘোষ। ওই খুনের ঘটনায় নাম জড়িয়েছিল তৃণমূল জেলাসভাপতি অনুব্রত মণ্ডল, জেলাপরিষদের সভাধিপতি বিকাশ রায়চৌধুরীর মতো তৃণমূল নেতার। হাইকোর্টের নির্দেশে গঠিত ওই হত্যা মামলার দায়িত্ব পায় বিশেষ তদন্তকারি দল সিট। গত ১৬ জুলাই আদালতে চার্জশিট পেশ করে সিট। যদিও সেই চার্জশিটে জেলা সভাপতি ও সভাধিপতির নাম ছিল না। তবে তৃণমূলের সাত্তোর অঞ্চল কমিটির সম্পাদক শেখ মুস্তফা, তৃণমূলের কসবা অঞ্চাল সভাপতি শেখ ইউনুস-সহ মোট ৮ জনের নাম ছিল। চার্জশিটে নাম থাকা একমাত্র শেখ আসগর (শেখ মুস্তফার ছেলে) ছাড়া সাত জনই গ্রেফতার হয়েছিলেন। ভগীরথ ঘোষ ও সুব্রত রায় ছাড়া বাকিরা জামিনে মুক্ত রয়েছেন। সিট-এর দেওয়া চার্জশিটের ভিত্তিতে সিউড়ি জেলা আদালতে গত ৮ জানুয়ারি ওই মামলায় চার্জ গঠিত হয়েছে। সিউড়ি’র জেলা জজ গৌতম সেনগুপ্তের এজলাসে ৯ ফেব্রুযারি শুরু হয় পাড়ুইয়ে সাগর ঘোষ হত্যা মামলার সাক্ষ্যগ্রহণ পর্ব। চলতি মাসের ২৬ তারিখ পর্যন্ত সাক্ষ্যগ্রহণ পর্ব চলার কথা।

কিন্তু সমন নিয়েও আদালতে সাক্ষ্য দিতে না আসায় প্রথম তিনদিন শুরুই করা যায়নি বিচার প্রক্রিয়া। প্রথম দিন অর্থাৎ ৯ ফেব্রুযারি নিহতের স্ত্রী সরস্বতী ঘোষ, ছেলে হৃদয় ঘোষ ও বৌমা শিবানী ঘোষের সাক্ষ্য দেওয়ার কথা ছিল। শুধু মাত্র সরস্বতীদেবী আদালতে না আসার কারণ হিসেবে একটি মেডিক্যাল সার্টিফিকেট আদালতে দাখিল করেছিলেন। কিন্তু হৃদয়বাবু বা তাঁর স্ত্রী শিবানীদেবী সাক্ষ্য না দেওয়ার কোনও কারণ আদালতে দেখাননি। সমন গ্রহণ করেও সাক্ষ্য দানে অনুপস্থিত থাকায় হৃদয় ও শিবানীর বিরুদ্ধে জামিনযোগ্য ধারায় গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করেছিল সিউড়ি জেলা আদলত। সকলকেই ২৩ ফেব্রুযারি উপস্থিত হয়ে মামলায় সাক্ষ্য দিতে নির্দেশ দিয়েছিল আদালত। কিন্তু এ দিনও নিহতের পরিবারের কেউ উপস্থিত থাকলেন না। হৃদয়বাবু অবশ্য অসুস্থ হওয়ার কারণ দেখিয়ে একটি আবেদন করেছেন সোমবার। কিন্তু তাঁর মা বা স্ত্রী-র পক্ষ থেকে কোনও কারণ দেখানো হয়নি। এ ব্যাপারে অবশ্য হৃদয়বাবুদের কোনও প্রতিক্রিয়া পাওয়া যায়নি।

তবে প্রথম থেকেই এই বিচার প্রক্রিয়া শুরু হওয়ার বিপক্ষে ছিলেন নিহতের পরিবার। তাই সাক্ষ্যগ্রহণের দিন ধার্য করে আদালত সমন পাঠানোয় প্রথমে তা গ্রহণ করতে চাননি সাগর ঘোষের পরিবার। নিহতের ছেলের দাবি ছিল, বাবার হত্যাকাণ্ডে নিযুক্ত সিটের দেওয়া যে চার্জশিটের ভিত্তিতে জেলা আদালতে বিচার প্রক্রিয়া শুরু হতে যাচ্ছে, সেই তদন্তই পক্ষপাতদুষ্ট। তাঁদের ওই তদন্তের উপর আস্থা নেই। সে জন্যই তাঁদের পরিবার সিবিআই চেয়ে সুপ্রিম কোর্টে গিয়েছে। যদিও শেষ পর্যন্ত জেলা আদালতের পাঠানো সমন গ্রহণ করেছিলেন হৃদয়বাবুরা। কিন্তু আদালতে হজির হচ্ছেন না। বিচার প্রক্রিয়ায় স্থগিতাদেশ চেয়ে কখনও আদালতে, কখনও জেলাশাসকের কাছে সরকারি আইনজীবীর বদলের আবাদন জানিয়ে আসছেন তাঁরা। আগামী ২৭ ফেব্রুয়ারি সুপ্রিমকোর্টে শুনানির জন্য অপেক্ষা করছেন বলে মত আইনজীবীদের একাংশের। এখনও পর্যন্ত এই মামলায় মোট ৫১ জনের সাক্ষ্য দেওয়ার কথা থাকলেও দুই চিকিৎসক, পাঁচ পুলিশ কর্মী এবং নিহতের দূর সম্পর্কের আত্মীয় ও পড়শি মিলিয়ে ১৩ জন সাক্ষ্য দিয়েছেন। ১২ জনের বিরুদ্ধে জামিনযোগ্য গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করেছে আদালত।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

evidence siuri murder case sagar ghosh
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE