Advertisement
২৬ এপ্রিল ২০২৪
কাশীপুরের পঞ্চায়েতে বিজেপি-তৃণমূল কাজিয়া

মাটি খুঁড়ে বেরোল প্যাকেট, গায়েব সর্ষেবীজ

পুরনো সর্ষে বীজ নষ্ট করা নিয়ে দুর্নীতি হয়েছে, এই অভিযোগ পঞ্চায়েত প্রধানের কাছে স্মারকলিপি দিতে গিয়ে বিজেপির কর্মীরা তৃণমূলের উপ-প্রধানের কাছে হেনস্থা হয়েছেন বলে অভিযোগ উঠল। উপ-প্রধানের পাল্টা দাবি, পঞ্চায়েতে ভাঙচুর চালিয়েছে বিজেপি। শুক্রবার পুরুলিয়ার কাশীপুর ব্লকের সোনাথলি গ্রাম পঞ্চায়েতের ওই ঘটনায় সাময়িক উত্তেজনার সৃষ্টি হয়।

গর্ত খুঁড়ে সর্ষে বীজের প্যাকেট বার করছেন বিজেপি কর্মীরা।

গর্ত খুঁড়ে সর্ষে বীজের প্যাকেট বার করছেন বিজেপি কর্মীরা।

নিজস্ব সংবাদদাতা
কাশীপুর শেষ আপডেট: ০৯ অগস্ট ২০১৪ ০১:২৩
Share: Save:

পুরনো সর্ষে বীজ নষ্ট করা নিয়ে দুর্নীতি হয়েছে, এই অভিযোগ পঞ্চায়েত প্রধানের কাছে স্মারকলিপি দিতে গিয়ে বিজেপির কর্মীরা তৃণমূলের উপ-প্রধানের কাছে হেনস্থা হয়েছেন বলে অভিযোগ উঠল। উপ-প্রধানের পাল্টা দাবি, পঞ্চায়েতে ভাঙচুর চালিয়েছে বিজেপি। শুক্রবার পুরুলিয়ার কাশীপুর ব্লকের সোনাথলি গ্রাম পঞ্চায়েতের ওই ঘটনায় সাময়িক উত্তেজনার সৃষ্টি হয়।

পুরনো সর্ষে বীজ নষ্ট না করে সেই বীজের অনেকটাই অন্যত্র সরানো হয়েছে, এই অভিযোগে তাদের দলীয় কর্মীরা পঞ্চায়েত প্রধানের কাছে স্মারকলিপি দিতে গিয়েছিলেন। বিজেপি-র সোনাথলি অঞ্চল সভাপতি রাজীব মণ্ডল বলেন, “আমরা দিন কয়েক আগে খবর পাই, পঞ্চায়েতে কিছুটা পরিমাণ সর্ষে বীজ ছিল। তার কিছুটা অংশ পঞ্চায়েতের উপপ্রধান অনিরুদ্ধ মুখোপাধ্যায় ও তাঁর কিছু সঙ্গী মিলে অন্যত্র সরিয়েছেন। এ দিন আমরা প্রধানের কাছে সেই বিষয়টির সত্যতা জানার জন্য গিয়েছিলাম। প্রধানের কাছে আমাদের আর্জি ছিল, ওই বীজগুলি নিয়ে জেলা প্রশাসনের ঠিক কী নির্দেশ রয়েছে তা জানানো হোক এবং সর্ষে বীজ নিয়ে ওঠা অভিযোগের তদন্ত করতে হবে।”

এ দিন বেলা সাড়ে ১২টা নাগাদ বিজেপি কর্মী-সমর্থকেরা পঞ্চায়েত অফিসে যান। তৃণমূল ও বিজেপি, যুযুধান দু’দলের কর্মী-সমর্থকেদের উপস্থিতিতে পঞ্চায়েত চত্বরে উত্তেজনার পরিস্থিতি তৈরি হয়। রাজীববাবুর অভিযোগ, অনিরুদ্ধবাবু তাঁদের গালিগালাজ করে পঞ্চায়েত থেকে বের করে দেন। যদিও অভিযোগ উড়িয়ে উপ-প্রধান পাল্টা দাবি করেছেন, বিজেপি কর্মীরাই পঞ্চায়েত অফিসে ঢুকে আসবাবপত্র তছনছ করেছেন, মাস্টার-রোল ছিঁড়ে দেওয়ার পাশাপাশি তাঁকেও অপমান করেছেন। বাইরে থেকে তালা বন্ধ করে তাঁদের আটকে দেওয়া হয়। লোকজনকে পঞ্চায়েতে ঢুকতে বাধা দেয় বিজেপি বলেও অভিযোগ। পরে পুলিশ গিয়ে পরিস্থিতি আয়ত্তে আনে। দু’পক্ষই পরস্পরের বিরুদ্ধে থানায় অভিযোগ করেছে।

কাশীপুর পঞ্চায়েত সমিতি সূত্রের খবর, এই সর্ষে বীজের প্যাকেটগুলি দীর্ঘদিন ধরেই বিভিন্ন পঞ্চায়েতে পড়ে রয়েছে। বীজগুলি ভাল নয়। কৃষি দফতরই সেগুলি চাষিদের মধ্যে বিলি করতে নিষেধ করায় বীজের প্যাকেটগুলি সেই ২০০৭-’০৮ সাল থেকে পড়ে রয়েছে। পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি, তৃণমূলের সৌমেন বেলথরিয়া জানিয়েছেন, কোনও ভাবে যাতে এই বীজগুলি চাষিদের হাতে না পৌঁছয়, তাই সব পঞ্চায়েতকে বীজগুলি নষ্ট করে ফেলতে বলা হয়েছিল। সেই মোতাবেক নির্দেশও পাঠানো হয়েছিল।

পঞ্চায়েতের গেটে তালা লাগিয়েছে বিজেপি।

এলাকার বিজেপি নেতা রাজীববাবু বলেন, “আমরা পঞ্চায়েতে যেতেই উপপ্রধান জানতে চান, কেন আমরা প্রধানের কাছে যেতে চাইছি। প্রধান তখন ভিতরে ছিলেন। আমরা কারণ উল্লেখ করায় তিনি একটি কাগজ এনে বলেন, এটাই সেই নির্দেশের কপি। এই নির্দেশেই পুরনো বীজগুলি নষ্ট করতে বলা হয়েছে। তাই ঐ বীজ নষ্ট করা হয়েছে। তবু আমরা প্রধানের সঙ্গে দেখা করে আমাদের আর্জি জানাতে চাই।” তাঁর অভিযোগ, এই কথা শোনার পরে অনিরুদ্ধবাবু তাঁদের প্রধানের সঙ্গে দেখা করতে দেননি। উল্টে তুই-তোকারি করে গালিগালাজ দিয়ে পঞ্চায়েত থেকে বের করে দেন। এর পরেই বিজেপি কর্মী-সমর্থকেরা পঞ্চায়েতের বাইরের গেটে তালা ঝুলিয়ে দেন। রাজীববাবু যুক্তি, “প্রত্যাখ্যাত হয়ে আমরা ক্ষোভে গেটে তালা ঝুলিয়ে দিয়েছিলাম।” খবর পেয়ে পুলিশ এসে তালা খোলে।

বিজেপি-র আরও বক্তব্য, যে পরিমাণ সর্ষে বীজ পঞ্চায়েত অফিসের সামনে গর্তে পুঁতে নষ্ট করা হয়েছে বলে উপপ্রধান দাবি করছেন, ততটা পরিমাণ বীজ আদৌ নষ্ট করা হয়েছে কি না, তার তদন্ত হওয়া প্রয়োজন। পঞ্চায়েত অফিস চত্বরেই নষ্ট সর্ষে বীজের প্যাকেটগুলি পোঁতা আছে জানতে পেরে বিজেপি কর্মীরা মাটি খুঁড়তে শুরু করেন। রাজীববাবু বলেন, “পরের পর প্যাকেট বেরোতে থাকে গর্ত থেকে। কিন্তু, সব প্যাকেটই বিলকুল খালি! আমাদের প্রশ্ন, তা হলে সর্ষে বীজগুলি সব কোথা গেল? এর থেকেই স্পষ্ট, সর্ষে বীজ নিয়ে দুর্নীতি হয়েছে পঞ্চায়েতে।” এর পরে বিজেপি কর্মীরা পঞ্চায়েত অফিসে বিক্ষোভও দেখান।

দুর্নীতির অভিযোগ উড়িয়ে দিয়ে অনিরুদ্ধবাবু বলেন, “এক কেজি করে শ’চারেক প্যাকেট সর্ষে বীজ ছিল। সবটাই আমরা গর্তে পুঁতে নষ্ট করেছি।” তা হলে প্যাকেটে বীজ মিলল না কেন? এর সদুত্তর মেলেনি। পঞ্চায়েত সূত্রে দাবি করা হয়েছে, প্যাকেট থেকে বার করে বীজ পোঁতা হয়েছে। বিজেপি কর্মীরা অবশ্য এই উত্তরে সন্তুষ্ট নন। তাঁরা প্রশাসনের কাছে গোটা ঘটনার তদন্ত দাবি করেছেন। পাশাপাশি, পঞ্চায়েত থেকে বের করে দেওয়ার লিখিত অভিযোগ পুলিশের কাছে করেছে বিজেপি।

বিজেপি কর্মীদের হেনস্থা করা বা বের করে দেওয়ার অভিযোগ মানেননি অনিরুদ্ধবাবু। তিনি বলেন, “পঞ্চায়েতে যে কেউ আসতে পারেন। আমি কেন বাধা দিতে যাব!” তাঁর দাবি, “পঞ্চায়েত প্রধান সে সময় অন্য কাজে ব্যস্ত ছিলেন। তা, ছাড়া, আমি তো উপপ্রধান। ওঁরা আমার সঙ্গে কথা বলেছেন। আমি ওঁদের সর্ষে বীজ নষ্ট করার সরকারি নির্দেশের কপি অবধি দেখিয়েছি। সেই নির্দেশ দেখার পরেও পঞ্চায়েত থেকে বাইরে বেরিয়ে গিয়ে ওঁরা তালা ঝুলিয়ে দিয়েছেন। পঞ্চায়েতের আসবাবপত্র তছনছ করেছেন।” রাজীব মণ্ডল-সহ এ দিন পঞ্চায়েত আসা বিজেপি কর্মীদের বিরুদ্ধে থানায় পাল্টা অভিযোগ দায়ের করেছেন অনিরুদ্ধবাবু।

রাজীববাবুর অবশ্য বক্তব্য, “পঞ্চায়েতের ভিতরেই ঢুকতে দেওয়া হয়নি আমাদের। তা হলে আমরা কী ভাবে আসবাবপত্র তছনছ করব? তৃণমূল নিজেরাই ও-সব কাণ্ড ঘটিয়ে আমাদের বদনাম করছে।”

ছবি: প্রদীপ মাহাতো

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

packet indpur
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE