তিলবানি গ্রামের ঝিমধরা তপ্ত দুপুর। কাঁসার জামবাটি থেকে এক মুঠো মুড়ি মাখা মুখে ফেলে চিবোতে চিবোতে খানিকটা আনমনা সিপিএমের ন’বারের বর্ষীয়ান সাংসদ।
“বহুদিন আগে ছাত্রাবস্থায় ‘সপ্তপদী’ দেখেছিলাম। সুচিত্রা সেনের মেয়ের সঙ্গে ভোটে লড়তে হবে ভাবিনি।” ডাকসাইটে বাম নেতা সুচিত্রা সেনের ফ্যান না কি? “ধুর্! জীবনে সিনেমাই দেখিনি তেমন আর।” তা হলে তারকা প্রতিপক্ষ কি আপনাকেও চিন্তায় ফেলে দিয়েছেন? ছোলা ভাজা মুখে ফেলতে ফেলতে খুক খুক করে হেসে ফেললেন বাসুদেব আচারিয়া। “কত তারাই তো দেখলাম। আমার রাজনীতির অভিজ্ঞতা ৪৬ বছরের। আর উনি (মুনমুন) সে দিন বললেন, ‘ওর অভিজ্ঞতা বলতে না কি ওর স্বামীর পলিটিক্যাল সায়েন্স নিয়ে পড়াশোনা!” তারপর আবার এক মুঠো মুড়ি মুখে দিলেন। “সুব্রত-র (মুখোপাধ্যায়) মতো পোড়খাওয়া নেতা গতবার এত সিরিয়াসলি লড়াইটা দিয়েও পারলেন না। কোনও তারকা তো ছার।”
সিপিএমের কর্মী-সমর্থকরা কিন্তু আড়ালে বলছেন, চাপ বিলক্ষণ বেশি এ বার। বাহাত্তরে পা দেওয়া বাসুদেববাবু তাই রোজ ভোর সাড়ে পাঁচটায় উঠে পড়ছেন। প্রাতর্ভ্রমণ, প্রাণায়াম করে দই-চিঁড়ে ব্রেকফাস্ট। তারপরেই শুরু হচ্ছে দৌড়। তিনটি করে ইনসুলিন ইঞ্জেকশন নিয়ে দিনে অন্তত তিনটে গ্রামে সভা। আলিমুদ্দিনের নির্দেশ রোড-শো ফোড-শো নয়। গ্রামের ভিতর মানুষের মধ্যে গিয়ে ‘ইনটেনসিভ ক্যাম্পেন’ করতে হবে। মাঝে দুপুরে শুধু দু-তিন ঘণ্টার বিশ্রাম। বাসুদেববাবুর পায়ের পাতা ফুলে ঢোল। গলাটাও মাঝে মধ্যে ভোগাচ্ছে। তবুও বলছেন, “বয়স আর ডায়াবেটিস নিয়েও আমার ৩৬৫ দিন দিবা-রাত পরিশ্রমের ক্ষমতা আছে। তৃণমূলের নায়িকা প্রার্থীর কি তা আছে?” উনি কিন্তু প্রত্যেক মিটিংয়ে বলছেন, ন’বার সুযোগ পেয়েও বাসুদেববাবু বাঁকুড়ার মানুষের জন্য কিছুই করেননি। এতক্ষণ প্যান্ট আর স্যান্ডো গেঞ্জি পরে খাটের উপরে বসেছিলেন। এ বার উঠে ধবধবে সাদা একটা শার্ট গলাতে গলাতে নিরুত্তাপ গলায় উত্তর দিলেন, “শুনেছি। তাই কয়েক দিনের মধ্যেই একটা ছাপানো কাজের খতিয়ান প্রকাশ করছি আমরা।”