মানভূমে বাংলা ভাষা রক্ষার লড়াইয়ের সঙ্গে বিশেষ ভাবে জড়িয়ে রয়েছে পুঞ্চার নাম। সময়টা ১৯৫৬ সাল। মানভূম জেলায় ভাষা আন্দোলন তখন চূড়ান্ত পর্যায়ে। পুঞ্চার ইতিহাসে যোগ হল নতুন অধ্যায়। আন্দোলনের শেষ পর্যায়ে সত্যাগ্রহীরা পুঞ্চার পাকবিড়রা গ্রাম থেকে (১০২৫ জন, মতান্তরে ১০০৫ জন সত্যাগ্রহী) কলকাতার উদ্দেশে পদযাত্রা শুরু করেন। তাঁদের মুখে-মুখে ঘুরছে মাতৃভাষা রক্ষার দাবি নিয়ে টুসু গান। মনে অদম্য জোর। যে ভাবেই হোক মানভূমের মানুষের দাবি কলকাতায় পৌঁছে নিয়ে যেতে হবে। দেশের ইতিহাসে মাতৃভাষা রক্ষার জন্য এত বড় মাপের পদযাত্রা বিরল।
পুঞ্চার ইতিহাস অতি প্রাচীন। গবেষকরা জানাচ্ছেন, বেশ কয়েকশো বছর আগে এখানে জৈন স্থাপত্য শিল্পকলা শিখরে উঠেছিল। পুরাকীর্তির নমুনা এখনও পুঞ্চা থানার বিভিন্ন এলাকায় ছড়িয়ে রয়েছে। তার মধ্যে বহু নিদর্শন নষ্টও হয়ে গিয়েছে। আবার জেলার বাইরেও বহু নিদর্শন পাচার হয়ে গিয়েছে। এর পরেও যা পুরা-নির্দশন এলাকায় ছড়িয়ে রয়েছে, তার আকর্ষণও পর্যটকদের কাছে কম নয়। প্রবীণ বাসিন্দাদের একাংশের মতে, পুরুলিয়া তথা সাবেক মানভূম জেলা ও বাঁকুড়া জেলার সীমানায় পুঞ্চা থানায় ব্রিটিশ সৈন্যদের এক সময় শিবির ছিল। ইংরেজ শাসকদের বিরুদ্ধে বিভিন্ন সময়ে জঙ্গলমহল অশান্ত হয়ে উঠেছে। শিবির থেকে সৈন্যরা গিয়ে অশান্তি দমন করত। কিন্তু জঙ্গলমহলের মানুষকে বাগে আনতে বার বার বেগ পেতে হয়েছে ইংরেজ শাসককে।
এই পটভূমিকায় পুঞ্চা থেকেই মাতৃভাষা রক্ষার দাবিতে পদযাত্রা শুরু হয়েছিল, যা এই জেলার অনেকের কাছে ভাষার স্বাধীনতার লড়াই ছিল। ২০ এপ্রিল পদযাত্রা শুরু হয়ে কলকাতায় পৌঁছয় ৬ মে। সে কথা আজ ইতিহাস। সত্যাগ্রহীদের আন্দোলনের চাপে শুধু এই এলাকায় বাংলা মাতৃভাষা হিসেবে স্বীকৃতিই পায়নি, তৎকালীন বিহার রাজ্য থেকে ভেঙে জন্ম নিয়েছিল নতুন জেলা— পুরুলিয়া। মাতৃভাষার অখণ্ডতা বজায় রাখার জন্য কেন্দ্রীয় সরকার ওই সালের ১ নভেম্বর নতুন জেলার দাবি মেনে নিতে বাধ্য হয়েছিল। তাই এই জেলার ইতিহাসে পুঞ্চার নাম বিশেষ ভাবে উল্লেখ রয়েছে।