Advertisement
২০ এপ্রিল ২০২৪
Panchayat Poll 2018

টক্করে দুই ভাই, মুখে উন্নয়ন

রাজনগরের গ্রাম পঞ্চায়েতের বাঁন্দী সংসদের ভোটের লড়াইয়ে নেমে বিরোধী দলের এক প্রার্থী বাড়ি বাড়ি গিয়ে শুধু নিজের ভোটটুকুই চাইছেন, পঞ্চায়েতের শাসক দল বা তার প্রার্থীর বিরুদ্ধে একটি কথাও বলছেন না!

মুখোমুখি: স্বপন রায় (বাঁ দিকে) ও ভগীরথ রায়। নিজস্ব চিত্র

মুখোমুখি: স্বপন রায় (বাঁ দিকে) ও ভগীরথ রায়। নিজস্ব চিত্র

দয়াল সেনগুপ্ত
রাজনগর শেষ আপডেট: ০৮ মে ২০১৮ ১৪:২৬
Share: Save:

পানীয় জলের সঙ্কট রয়েছে গ্রামে। ১০০ দিনের প্রকল্পে কাজ পাননি এলাকার অনেকেই। রয়েছে নিকাশির সমস্যা। এ সবে ক্ষোভ জমেছে সেই গ্রামের বাসিন্দাদের একাংশে।

কিন্তু রাজনগরের গ্রাম পঞ্চায়েতের বাঁন্দী সংসদের ভোটের লড়াইয়ে নেমে বিরোধী দলের এক প্রার্থী বাড়ি বাড়ি গিয়ে শুধু নিজের ভোটটুকুই চাইছেন, পঞ্চায়েতের শাসক দল বা তার প্রার্থীর বিরুদ্ধে একটি কথাও বলছেন না!

গ্রামবাসীদের একাংশের বক্তব্য, বলবেনই বা কী করে?

এ বার ওই সংসদে বিজেপির হয়ে লড়াইয়ে নেমেছেন ভগীরথ রায়। সর্ম্পকে তিনি ওই আসনের তৃণমূল প্রার্থী স্বপন রায়ের খুড়তুতো ভাই। একসঙ্গেই বড় হয়েছেন দু’জনে। প্রচারে নেমে পঞ্চায়েতে ক্ষমতাসীন তৃণমূল বা তৃণমূল প্রার্থীর বিরুদ্ধে অন্যরা যতই সুর চড়ান না কেন, ভগীরথবাবু একেবারেই তা করছেন না। তাঁর ঘনিষ্ঠ মহলের খবর, নীতির লড়াই, রাজনীতির আগে রাখছেন পারিবারিক সর্ম্পককে।

বাড়ি বাড়ি প্রচারে বেড়িয়ে তিনি শুধু বলছেন, ‘‘এত দিন তো দেখলেন কেমন হয়েছে উন্নয়ন! এক বার আমাকে ভোট দিয়ে জেতান।’’ একই অবস্থা দাদারও। বিজেপি বা বিরোধীদের নিয়ে প্রচারে শাসক দলের অন্য প্রার্থীরা সরব হলেও শুধু উন্নয়নের কথা বলেই ভোট চাইছেন স্বপনবাবু। তিনিও বলছেন, ‘‘কেউ হারবে, কেউ জিতবে। পারিবারিক সম্পর্কে আঁচ পড়ুক, একেবারেই তা চাই না।’’

স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, ওই সংসদ তিনটি গ্রাম নিয়ে— বাঁন্দী, আবাদনগর ও নিত্যনগর আদিবাসীপাড়া। ভোটারের সংখ্যা ১ হাজার ১৮। পাঁচ বছরে উন্নয়ন খুব একটা খারাপ না হলেও ১০০ দিনের প্রকল্পে কাজ না পাওয়া, নির্মল ব্লক ঘোষিত হলেও কয়েকটি বাড়িতে শৌচাগার না থাকা, গ্রামে পানীয় জল এবং নিকাশি ব্যবস্থা ঠিক না থাকার নালিশ ছিল।

তার সুযোগে বিজেপি পায়ের নীচে কিছুটা হলেও মাটি খুঁজে নেয়। দীর্ঘদিন ধরে গ্রামের বিজেপি কর্মী এবং ‘কাজের ছেলে’ হিসেবে পরিচিত ভাগীরথবাবু এ বার প্রার্থী হওয়ায় তা-ই অনেকে খুশি হয়েছিলেন। কিন্তু তাঁর কাকু নবগোপাল রায়ের ছেলে স্বপনবাবুকে (ভগীরথবাবুর থেকে তিনি মাত্র ছ’ মাসের বড়) তৃণমূল প্রার্থী করায়, কাকে ভোট দেওয়া উচিত— তা নিয়েই ধন্দে পড়েন এলাকাবাসী। তবে এলাকায় পরিচিতি ও পরিবারের সুনামের জন্য দু’জনই মনে করছেন— জিতবেন তিনিই।

স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, ভগীরথবাবু ১৯৮৯ সাল থেকে বিজেপি করেন। স্বপনবাবু আগে সিপিএমে ছিলেন। গত পঞ্চায়েত নির্বাচনে তৃণমূলে যোগ দেন। গত বার ওই আসনটি তফসিলি জাতির প্রার্থীর জন্য সংরক্ষিত থাকায় লড়াইয়ে নামতে পারেননি দুই ভাই।

ভোটের লড়াই নিয়ে কী বলছেন তাঁদের ঘরনীরা? স্বপনবাবুর স্ত্রী সুদীপাদেবী ও ভগীরথবাবুর স্ত্রী তৃপ্তিদেবীর কথায়— ‘‘স্বামীর জয় সব স্ত্রী-ই চায়। নীতি এবং গ্রামের ভাল করতেই দুই ভাই দু’টি রাজনৈতিক দলের প্রার্থী হয়েছেন। আমাদের পরিবারেরই কেউ না জয়ী হবেন। নিজেদের মধ্যে বিরোধের কোনও জায়গা নেই।’’ এটাই যেন বজায় থাকে তা নিয়ে দু’জনকেই সতর্ক করেছেন স্বপনবাবুর বাবা নবগোপালবাবুও। গ্রামের মানুষও চান তাই-ই।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE