Advertisement
E-Paper

বসন্ত উৎসবে পলাশ বাঁচাতে বার্তা সোশ্যাল মিডিয়াতেও 

গত শনিবারও খোয়াই হাটে ঢুকতেই দেখা গেল বহু পর্যটক তাঁদের মাথায়, খোঁপায়, গলায়, হাতে পলাশের মালা পরে ঘুরছেন। সকলেই জানালেন, হাট থেকে কিনেছেন।

দেবস্মিতা চট্টোপাধ্যায়

শেষ আপডেট: ০৫ মার্চ ২০১৯ ০০:৫১
অর্ঘ্য: শিবরাত্রিতে ফুলের পসরা। গাঁদা, আকন্দের পাশে পলাশও। সোমবার শান্তিনিকেতনে। —নিজস্ব চিত্র।

অর্ঘ্য: শিবরাত্রিতে ফুলের পসরা। গাঁদা, আকন্দের পাশে পলাশও। সোমবার শান্তিনিকেতনে। —নিজস্ব চিত্র।

বসন্ত উৎসব দোড়গোড়ায়। উৎসবের মেজাজে নিজেকে সাজাতে গিয়ে কোনও ভাবেই পলাশ নিধন নয় — সোশ্যাল মিডিয়ায় এই বার্তাও ইতিমধ্যেই অনেকে দিতে শুরু করেছেন। কিন্তু গত শনিবারও খোয়াই হাটে ঢুকতেই দেখা গেল বহু পর্যটক তাঁদের মাথায়, খোঁপায়, গলায়, হাতে পলাশের মালা পরে ঘুরছেন। সকলেই জানালেন, হাট থেকে কিনেছেন।

খোয়াই হাটের পরিসর আগের থেকে অনেকটাই বেড়েছে। বিক্রেতারা নেহাতই খুদে। পলাশ ফুল বা মালা নিয়ে তারা ফেরিওয়ালার ভূমিকায়। শুধু ফুলই নয়, কেউ কেউ আবার পলাশের কুঁড়ি দিয়েও মালা তৈরি করে বিক্রি করছে। ব্যক্তিবিশেষে কোনওটা ১০ টাকা, কোনওটা আবার ২০ টাকা দাম হাঁকছে। পলাশ নিয়ে স্যোশাল মিডিয়ার সচেতনতা সম্পর্কে অবহিত পর্যটকদের কেউ কেউ আবার বলে ফেললেন, ‘‘ডাল ভেঙে মালা যখন বানিয়েই ফেলেছে, তখন ব্যবহার করতে ক্ষতি কোথায়!’’

যদিও পর্যটকদের এহেন মন্তব্য পলাশ ফুল ব্যবহার নিয়ে সচেতনতার অভাব বলেই মনে করছেন স্থানীয়েরা। তাঁরা জানান, যারা পলাশ ফুল গাছ থেকে ছিঁড়ে মালা বানিয়ে হাটে বিক্রি করছে তাদের বয়স নিতান্তই কম। বিক্রিও করছে মজার ছলে। ফুলের মালা বিক্রি করে সামান্য যা আয় হবে সেই টাকা নিয়ে হয়তো ইচ্ছেমতো কিছু জিনিস কিংবা খাবার কিনে খাবে। কিন্তু পর্যটকেরা যদি মালা কেনাই বন্ধ করে দেন, সে ক্ষেত্রে ছোটদের এই আনন্দটা থেকে বঞ্চিত করা হবে বলে শান্তিনিকেতনের বাসিন্দাদের একাংশের মত। যদিও খোয়াইয়ের তিন নম্বর হাটের সভাপতি ইনসান মল্লিক বলেন, ‘‘এই শনিবার থেকেই হাটে পলাশের মালা বিক্রি শুরু হয়েছে। পলাশ নিধন রুখতে আমরা অবশ্যই পদক্ষেপ করব।’’

শুধুমাত্র খোয়াই হাটে পর্যটকদের কাছে নয়, শিবরাত্রিতেও পলাশ দেদার বিক্রি হয়েছে। চৌরাস্তা পেরিয়ে লালপুল পর্যন্ত পলাশ গাছের ডাল ভেঙে ফুল দিয়ে মালা গাঁথতে দেখা গেল অনেককে। কুঁড়িগুলোও তুলে নেওয়া হয়েছে। বিক্রেতাদের প্রায় সকলেই নিম্নবিত্ত পরিবারের। তাঁদের প্রতিক্রিয়া, ‘‘সব ফুলই তো তোলা হয়। পলাশ যে তোলা যাবে না এমন তো শুনিনি কখনও।’’ কিন্তু এমন যথেচ্ছভাবে পলাশ বিক্রি হতে থাকলে যে প্রাকৃতিক সৌন্দর্য নষ্ট হয়ে যাবে সেই আশঙ্কা করছেন প্রকৃতিপ্রেমীরা। বাচিক শিল্পী অনিন্দ্যসুন্দর রায়ের প্রতিক্রিয়া, ‘‘পলাশ আমাদের জীবন ও সংস্কৃতির সঙ্গে অঙ্গাঙ্গীভাবে জড়িত। এ ছাড়াও লালমাটির আরশি, প্রতিনিধিও। বসন্তোৎসব উদযাপনের সময়, আগে কিংবা পরে - কোনও সময়ই পলাশ নিধন কাম্য নয়।’’ প্রকৃতি প্রেমিক সন্দীপকুমার দাসের বক্তব্য, ‘‘পলাশের রং ফেব্রুয়ারি থেকে এপ্রিলের মধ্যে তাপমাত্রা বাড়ার সঙ্গে বদলে যেতে থাকে। তাই পলাশ যদি গাছ থেকে ছিঁড়েই নেওয়া হবে তবে সেই পরিবর্তনও লক্ষ্য করা যাবে না।’’

বসন্ত উৎসবের ঠিক আগে পলাশ নিধন যতই শুরু হোক না কেন, বিশ্বভারতীর বসন্ত উৎসবে এ বারও পলাশ ফুলে নিষেধাজ্ঞা থাকছে। বিশ্বভারতীর জনসংযোগ আধিকারিক অনির্বাণ সরকারের কথায়, ‘‘পলাশ ব্যবহার নিয়ে নিষেধাজ্ঞা বরাবরই ছিল। কিন্তু তিন বছর আগে বিষয়টি নিয়ে কঠোর হয় কর্তৃপক্ষ। ২০১৭ সালের বসন্ত উৎসবে বিভিন্ন প্রবেশ পথ দিয়ে যাঁরা এসেছিলেন, পলাশ মাথায় থাকলেই তাঁদের সেটি খুলে বাইরে রেখে তার পর ভিতরে ঢুকতে দেওয়া হয়েছিল। এর ফলে ২০১৮ সালে পলাশের ব্যবহার অনেক কম চোখে পড়েছিল। স্বতঃস্ফূর্তভাবেই মানুষ পলাশ ছাড়াই বসন্ত উৎসবে মেতেছিলেন। পলাশ বাঁচাতে এ বছরও একইভাবে উদ্যোগী বিশ্বভারতী।’’ এখন দেখার, তাতে সচেতনতা কতটা বাড়ে।

Shantiniketan Flower
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy