Advertisement
০৩ অক্টোবর ২০২৩
নাবালিকার সঙ্গে বিয়ের সম্বন্ধ

ফোন পেয়ে ফিরে এলেন শিক্ষক-পাত্র

বরের সাজে তিনি গাড়িতে চেপে বেরিয়ে পড়েছিলেন বিয়ে করতে। তবে, মালা বদল হল না। নাবালিকা কনের কাছে পৌঁছনোর আগেই মাঝপথে ফোন পেলেন চাইল্ড লাইনের কর্তাদের।

নিজস্ব সংবাদদাতা
বাঁকুড়া শেষ আপডেট: ১৪ মার্চ ২০১৭ ০১:২৪
Share: Save:

বরের সাজে তিনি গাড়িতে চেপে বেরিয়ে পড়েছিলেন বিয়ে করতে। তবে, মালা বদল হল না। নাবালিকা কনের কাছে পৌঁছনোর আগেই মাঝপথে ফোন পেলেন চাইল্ড লাইনের কর্তাদের। কথাবার্তা শেষ হওয়ার পরে গাড়ি ঘুরিয়ে সটান বাড়ি ফিরলেন সেই বর। বর আবার যে সে লোক নয়, বাঁকুড়ার একটি কলেজের অতিথি শিক্ষক!

এই ঘটনার কথা জেনে রীতিমতো অবাক হয়ে গিয়েছেন জেলা প্রশাসনের অনেকেই। যদিও এটাই প্রথম নয়। এই জেলায় প্রাথমিক বা মাধ্যমিক স্কুলের শিক্ষকদের বিরুদ্ধেও এর আগে নাবালিকার সঙ্গে বিয়ে ঠিক করার অভিযোগ উঠেছে। তবে এ বার স্কুলের গন্ডি ছাড়িয়ে সেই অভিযোগ উঠেছে কলেজের অতিথি শিক্ষকের বিরুদ্ধে। বাঁকুড়া চাইল্ড লাইন সূত্রে জানা গিয়েছে, বর্ধমানের মেমারি এলাকার নাবালিকার সঙ্গে ওই শিক্ষকের বিয়ের স্থির হয়েছিল। ওই নাবালিকা একাদশ শ্রেণির ছাত্রী। বয়স ষোলো বছর। ঘটনাটি বর্ধমান চাইল্ড লাইনের সদস্যেরা বিষয়টি জানতে পারার পরেই মেমারির যে লজে বিয়ে হওয়ার কথা ছিল, সেখানে পৌঁছে যান। তবে কোনও ভাবে চাইল্ড লাইনের আসার খবর পেয়ে ওই নাবালিকার পরিবার বিয়ের স্থান পরিবর্তন করে ফেলে।

এর পরেই বর্ধমান চাইল্ড লাইন বাঁকুড়া চাইল্ড লাইনকে ঘটনাটি জানায়। ওই শিক্ষক বাঁকুড়ার ইঁদপুরের বাসিন্দা। বিকেলে ইঁদপুর থানার ওসি প্রসেনজিৎ বিশ্বাস এবং বাঁকুড়া চাইল্ড লাইনের সদস্য সব্যসাচী তিওয়ারি ও শুভ্র শীট ওই শিক্ষকের বাড়িতে গিয়ে পারেন, তিনি বর্ধমানে রওয়ান দিয়েছেন। চাইল্ড লাইনের সদস্যেরা ফোনে ওই শিক্ষকের সঙ্গে কথা বলে তাঁকে বোঝান, এই বিয়ে আইন বিরুদ্ধে। সব শুনে রাতের দিকে ওই শিক্ষক বিয়ে না করেই বাড়ি ফিরে আসেন। ওই শিক্ষকের অবশ্য দাবি, পাত্রী নাবালিকা বলে তাঁর জানা ছিল না।

সব্যসাচীবাবু বলেন, “এক জন কলেজের শিক্ষক একটি মেয়ের সম্পর্কে কিছু খবর না নিয়েই কী ভাবে বিয়ে করতে রাজি হয়ে যানস তা বুঝে ওঠা যাচ্ছে না।’’ বাঁকুড়া সারদামণি গার্লস কলেজের অধ্যক্ষ সিদ্ধার্থ গুপ্তের মন্তব্য, “এই ঘটনা আমাদের সবার জন্য লজ্জা! শিক্ষিত মানুষেরাই যদি এ রকম ঘটনা ঘটান, তা হলে এই সামাদিক ব্যাধি রুখবেন কারা?” নাবালিকা বিয়ে করলে নানা শাস্তি রয়েছে। এই শিক্ষকের বিরুদ্ধে অবশ্য এখনও শাস্তিমূলক কোনও পদক্ষেপ করেনি প্রশাসন। বাঁকুড়া শিশু কল্যাণ কমিটির চেয়ারম্যান মহিনুর আলম বলেন, “শীঘ্রই ওই শিক্ষককে আমাদের বেঞ্চে তলব করা হবে। তার পরেই যা ব্যবস্থা নেওয়ার নেব।’’

অন্য দিকে, সোমবার পুরুলিয়ার মানবাজারে দুই নাবালিকার বিয়ে ঠেকিয়েছে পুলিশ-প্রশাসন। দু’টি গ্রামে সোমবার রাতে বিয়ে হওয়ার কথা ছিল দুই নাবালিকার। বিডিও (মানবাজার ১) সত্যজিৎ বিশ্বাস বলেন, ‘‘একটি মেয়ে সম্প্রতি মাধ্যমিক পরীক্ষা দিয়েছে। অন্য জন আরও ছোট। দু’টি পরিবারের সদস্যদের বুঝিয়েছি, ১৮ বছরের নীচে বিয়ে দেওয়া আইনত অপরাধ। তা ছাড়া, মেয়েদের শারীরিক গঠনও সম্পূর্ণ হয় না। দুই পরিবারের লোকজন মুচলেকা দিয়ে অঙ্গীকার করেছেন, প্রাপ্তবয়স্ক হওয়ার পরেই মেয়েদের বিয়ে দেবেন।’’

চাইল্ড লাইনের জেলা কোঅর্ডিনেটর দীপঙ্কর সরকার জানান, এলাকায় গিয়ে ওই কিশোরীদের পরিবারের সঙ্গে তাঁরা কথা বলবেন। কিশোরীদেরও কাউন্সেলিং করা হবে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
Follow us on: Save:
Advertisement

Share this article

CLOSE