Advertisement
২৪ এপ্রিল ২০২৪

সদ্যোজাতের মৃত্যু ঠেকাতে ভরসা কিটে

প্রশাসন সূত্রে জানানো হয়েছে, পাইলট প্রোজেক্ট হিসাবে প্রথম রঘুনাথপুরেই শুরু করা হল। পরে সারা জেলাতেই এই প্রকল্প নেওয়া হবে। শনিবার রঘুনাথপুর ১ ব্লক স্বাস্থ্যকেন্দ্রে প্রকল্পটির উদ্বোধন করেন জেলাশাসক অলকেশপ্রসাদ রায়।

প্রসূতির হাতে তুলে দেওয়া হচ্ছে কিট। ছবি: সঙ্গীত নাগ

প্রসূতির হাতে তুলে দেওয়া হচ্ছে কিট। ছবি: সঙ্গীত নাগ

নিজস্ব সংবাদদাতা
রঘুনাথপুর শেষ আপডেট: ০৭ অক্টোবর ২০১৮ ০১:১৫
Share: Save:

রাজ্যের নিরিখে সদ্যোজাত শিশুমৃত্যুর হার কিছুটা বেশি রঘুনাথপুরে। একই সঙ্গে হাসপাতালে সন্তানের জন্ম দেওয়ার ক্ষেত্রে প্রসূতিদের উৎসাহিত করার কাজেও কিছুটা পিছিয়ে রঘুনাথপুর মহকুমা। এই দুই সমস্যার সমাধানে সদ্য প্রসূতি ও তাঁদের সদ্যোজাতদের জন্য বিশেষ মেডিক্যাল কিট দেওয়ার প্রকল্প শুরু করল রঘুনাথপুর মহকুমা প্রশাসন।

প্রশাসন সূত্রে জানানো হয়েছে, পাইলট প্রোজেক্ট হিসাবে প্রথম রঘুনাথপুরেই শুরু করা হল। পরে সারা জেলাতেই এই প্রকল্প নেওয়া হবে। শনিবার রঘুনাথপুর ১ ব্লক স্বাস্থ্যকেন্দ্রে প্রকল্পটির উদ্বোধন করেন জেলাশাসক অলকেশপ্রসাদ রায়। তিনি বলেন, ‘‘প্রথম ধাপে রঘুনাথপুর মহকুমায় এই প্রকল্প শুরু করা হল। পরবর্তী সময়ে গোটা জেলাতেই এই প্রকল্প শুরু হবে।” কিট দেওয়ার ফলে সদ্যোজাতদের মৃত্যুর হার কম হচ্ছে কি না দেখার পরে জেলা প্রশাসন রাজ্য সরকারকে এই ধরনের প্রকল্প শুরুর বিষয়ে প্রস্তাব দেবে বলে খবর।

জেলা স্বাস্থ্য দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, রাজ্যে বর্তমানে সদ্যোজাত শিশুমৃত্যুর হার ২১ শতাংশের কাছাকাছি। কিন্তু, রঘুনাথপুর মহকুমায় এই হার কিছুটা বেশি। প্রায় ২৫ শতাংশ। আর হাসপাতালে সন্তানের জন্ম দেওয়ার ক্ষেত্রে রঘুনাথপুর মহকুমার বিভিন্ন ব্লকের হার ৯০ শতাংশের কিছু উপরে। কিন্তু, তাও সন্তোষজনক নয়।

প্রশাসন সূত্রে খবর, ওই পরিসংখ্যান দেখে মহকুমাশাসক (রঘুনাথপুর) আকাঙ্ক্ষা ভাস্কর এই বিশেষ মেডিক্যাল কিট দিয়ে সদ্যোজাত শিশু মৃত্যুর হার কমানোর বিষয়ে উদ্যোগী হন। এই প্রকল্পটি পুরোদস্তুর রঘুনাথপুরের এসডিও-র মস্তিক প্রসূত বলে এ দিন জানান জেলাশাসক। তাঁর কথায়, ‘‘রঘুনাথপুরের এসডিও প্রশাসনিক কর্তা হওয়ার পাশাপাশি এক জন চিকিৎসকও। কয়েকমাস আগেই তিনি এই প্রকল্পটির বিষয়ে আলোচনা করেন। তাঁর কাছ থেকে প্রস্তাব পাওয়ার পরেই আমরা বিষয়টি রাজ্য স্বাস্থ্য দফতরকে জানাই। সেখান থেকে অনুমোদন পাওয়ার পরেই দেরি না করে প্রকল্প শুরু করা হয়েছে।”

কী থাকছে এই বিশেষ মেডিক্যাল কিটে? এসডিও জানান, প্রসূতি ও সদ্যোজাত দু’জনের জন্যই উপযোগী বেশ কয়েকটি জিনিস দেওয়া হচ্ছে। সদ্যোজাতদের জন্য দেওয়া হচ্ছে মশারি, নরম গদি, টুপি, মোজা, সাবান, তোয়ালে, বাটি ও চামচ। আর মায়েদের দেওয়া হচ্ছে আয়রন ক্যাপসুল, ক্যালসিয়ামের ওষুধ, কৃমিনাশক ওষুধ, স্বাস্থ্যসম্মত তোয়ালে ও সবলা পৌষ্টিক লাড্ডু।

এই কিটের প্রয়োজনীয়তা ব্যাখ্যা করতে গিয়ে এসিএমওএইচ (রঘুনাথপুর) ইন্দ্রনীল মিত্র বলেন, ‘‘শিশুর জন্মের পরে প্রথম এক সপ্তাহ খুবই গুরুত্বপূর্ণ সময়। সেই সময়ে শিশুদের সঠিক যত্ন ও পরিচর্যার প্রয়োজন। ওই সব সামগ্রী দিয়ে সদ্যোজাতদের সেই সুরক্ষা নিশ্চিত করা হচ্ছে।’’

এ দিন সদ্য প্রসূতিদের হাতে ওই সব সামগ্রী দেওয়ার সময় আধিকারিকেরা শিশুদের নরম গদির উপরে শোওয়ানো, ঠান্ডা পড়লে টুপি-মোজা পরানো, শিশুকে ধরার আগে সাবান দিয়ে হাত ধুয়ে নেওয়ার জন্য সজাগ করেছেন। পাশাপাশি আয়রন, ক্যালসিয়ামের ওষুধ-সহ পৌষ্টিক লাড্ডু খাওয়ার জন্য মায়েদের পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।

বস্তুত, দক্ষিণ ভারতের কয়েকটি রাজ্য এই ধরনের কিট দেওয়া হয়। তাতে ওই রাজ্যগুলিতে শিশু মৃত্যুর হার অনেকটাই রোখা গিয়েছে। এই বিষয়টি দেখার পরেই তিনি এই পরিকল্পনা নেন বলে জানান এসডিও। তাঁর কথায়, ‘‘বিজ্ঞানসম্মত ভাবে সঠিক পরিচর্যা ও যত্নের অভাবে অনেক ক্ষেত্রে সদ্যজাতদের মৃত্যু ঘটে। দক্ষিণ ভারতের কয়েকটি রাজ্য এই ধরনের কিট দিয়ে শিশু মৃত্যুর হার অনেকটাই কমিয়েছে।’’ তিনি জানান, কী ভাবে এই কিট ব্যবহার করবেন, তা বাড়ি-বাড়ি ঘুরে মায়েদের হাতেকলমে দেখিয়ে দেবেন আশা কর্মীরা।

জেলাশাসক জানান, কিটের মধ্যে অনেক কিছুই সরকার থেকে সরবরাহ করা হয়। বাকি কিছু জিনিস কিনতে হচ্ছে। সারা পুরুলিয়া জেলার জন্য এই কিট দিতে বছরে এক কোটি টাকা খরচ হবে। আর এই পুরো টাকাটাই দেবে রাজ্য স্বাস্থ্য দফতর। তবে সরকারি হাসপাতালে শিশুর জন্ম দিলে ও প্রথম দু’টি শিশুর ক্ষেত্রেই এই কিট দেওয়া হবে জানিয়েছে স্বাস্থ্য দফতর।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Health Kit Baby New born Death
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE