Advertisement
২৫ এপ্রিল ২০২৪

গন্ধেশ্বরী বইছে বাইপাসেও

ঝেঁপে বৃষ্টি কবে আসবে, তার জন্য হা পিত্যেশ করেছিলেন বাঁকুড়ার মানুষ। কিন্তু বরিবার রাতে নিম্নচাপের সেই বৃষ্টিই যেন কাল হল। ফুলে ফেঁপে উঠেছে জেলার নদনদী, খালবিল। জলমগ্ন হয়ে পড়েছে পড়েছে বিভিন্ন এলাকা।

জলের তলায়। বিষ্ণপুর-সোনামুখী রাস্তা। (ডানদিকে) বাঁকুড়া-দুর্গাপুর বাইপাস। সোমবার ছবিগুলি তুলেছেন শুভ্র মিত্র ও অভিজিৎ সিংহ।

জলের তলায়। বিষ্ণপুর-সোনামুখী রাস্তা। (ডানদিকে) বাঁকুড়া-দুর্গাপুর বাইপাস। সোমবার ছবিগুলি তুলেছেন শুভ্র মিত্র ও অভিজিৎ সিংহ।

নিজস্ব প্রতিবেদন
শেষ আপডেট: ২৩ অগস্ট ২০১৬ ০১:১৩
Share: Save:

ঝেঁপে বৃষ্টি কবে আসবে, তার জন্য হা পিত্যেশ করেছিলেন বাঁকুড়ার মানুষ। কিন্তু বরিবার রাতে নিম্নচাপের সেই বৃষ্টিই যেন কাল হল। ফুলে ফেঁপে উঠেছে জেলার নদনদী, খালবিল। জলমগ্ন হয়ে পড়েছে পড়েছে বিভিন্ন এলাকা। থইথই করছে ঘরদোর। অনেকেই গিয়ে ঠাঁই নিয়েছেন ত্রাণশিবিরে। কজওয়ে ডুবে বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে যান চলাচল। জেলার বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ সড়ক বন্ধ।

নিম্নচাপের ফলে যে বিপর্যয় হতে পারে তা নিয়ে বাঁকুড়া জেলা প্রশাসনকে আগেই সতর্ক করেছিল নবান্ন। সেই মোতাবেক রবিবার বিকেল থেকেই ব্লক থেকে পঞ্চায়েতে ত্রাণ সামগ্রী পাঠানো হয়। রবিবার বিকেল থেকে শুরু হয়ে রাতভর চলে মুষলধারে বৃষ্টি। জেলা আবহাওয়া দফতর জানিয়েছে, রবিবার সকাল সাড়ে ৮টা থেকে সোমবার সকাল সাড়ে ৮টা পর্যন্ত বৃষ্টি হয়েছে ১৭২.৬ মিলিমিটার। তবে এ দিন সকাল থেকে বৃষ্টির দাপট একটু একটু করে কমেছে। কিন্তু এখনও রীতিমতো ফুঁসছে দামোদর, গন্ধেশ্বরী, দ্বারকেশ্বর, শীলাবতী, বিড়াইয়ের মতো জেলার ছোট, বড় নদনদীগুলি।

রবিবার গভীর রাত থেকেই গন্ধেশ্বরীর জলস্তর ক্রমশ বাড়তে শুরু করেছিল। তার জেরে নদী সংলগ্ন শহরের রাজপথ জলের তলায় চলে গিয়েছে। অন্যপাড়ের কেশিয়াকোল এলাকার একটা বড় অংশের চেহারাটাও একই। এ দিন ওই এলাকায় গিয়ে দেখা গেল, কয়েকশো বাড়িতে গন্ধেশ্বরীর জল ঢুকে পড়েছে। বেশ কিছু মাটির বাড়ি ভেঙেও পড়েছে। হাতের কাছে জরুরি যা পেয়েছেন, তা নিয়ে এলাকার অনেকেই আশ্রয় নিয়েছেন স্থানীয় প্রাথমিক স্কুলে। সেখানেই ত্রাণশিবির খুলে ঠাঁইনাড়া হওয়া প্রায় পাঁচশোরও বেশি মানুষের খাওয়াদাওয়ারও বন্দোবস্ত করা হয়েছে প্রশাসনের পক্ষ থেকে। কেশিয়াকোলের অনেকেই মাথা গুঁজতে চলে গিয়েছেন দূরের কোনও আত্মীয়ের বাড়িতে। ক্ষয়ক্ষতির হিসাব সোমবার বিকেল পর্যন্তও কষে উঠতে পারেনি ব্লক প্রশাসন।

কেশিয়াকোলের বধূ অর্চনা অধিকারি জানান, সকাল ছ’টা থেকেই এলাকায় ধীরে ধীরে জল ঢুকতে শুরু করেছিল। হঠাৎ বাড়ির ভিতরেও জল ঢুকে পড়ে। বাড়িতে তখন তিনি, তাঁর স্বামী, বৃদ্ধা শাশুড়ি এবং দুই মেয়ে। অর্চনাদেবী বলেন, “বাড়ির ভিতরে ততক্ষণে একবুক সমান জল। বাচ্চা মেয়েগুলোকে নিয়ে কী করব, কোথায় যাব— কিছুই বুঝে উঠতে পারছিলাম না। আতঙ্কে অস্থির হয়ে উঠেছিলাম। এমন সময় এলাকায় দমকলের গাড়ি এল। ওদের দেওয়া দড়ি ধরে কোনও মতে বাড়ি থেকে বেরিয়ে এলাম।” বেরোনোর সময় শুধু কিছু প্রয়োজনীয় নথিপত্র নিতে পেরেছিলেন তাঁরা। বাড়ির আসবাবগুলির কী দশা হয়েছে তা ভেবে উদ্বিগ্ন ত্রাণশিবিরে আশ্রয় নেওয়া অঞ্জলি দাস, ভৈরব দাস, অরূপকুমার দে-র মতো অনেকেই।

কোশিয়াড়ির প্রাথমিক স্কুলে ত্রাণশিবির। —নিজস্ব চিত্র।

জলমগ্ন হয়ে পড়েছে জেলা অন্য কিছু গ্রামও। বড়জোড়ার কলেজপাড়া এলাকা এবং বাঁকুড়া ২ ব্লকের মুশুরিয়া গ্রামের অনেক বাড়িতে জল ঢুকে পড়ে। জেলা শাসক মৌমিতা গোদারা বসু বলেন, “জেলায় কেশিয়াকোল ও কোতুলপুরের বাগরোল এলাকায় দু’টি ত্রাণশিবির চালু করা হয়েছে। ডিভিসি জল ছেড়েছে। তাই মানাচরের দিকেও নজর রেখেছি আমরা। কোনও সমস্যা হলে মানাচরেও দ্রুত ত্রাণশিবির চালু করা হবে।’’

অন্য দিকে বৃষ্টিতে বিপর্যস্ত হয়ে পড়ে বিভিন্ন রাস্তায় যান চলাচল। শহরের বাইপাস জলের তলায় চলে যাওয়ায় কোনও গাড়ি যাতায়াত করতে পারেনি। বাঁকুড়া ১ ব্লকের পোয়াবাগান এলাকার উজানি জোড়ের জল উপচে উঠে আসে বাঁকুড়া পুরুলিয়া ৬০ এ জাতীয় সড়কের উপর। ওই রাস্তার মান্দড়া জোড়ের জলের তলায় চলে যায় মাতলা কজওয়ে। এর ফলে সকাল থেকেই শহরের অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ এই রাস্তা দিয়ে যান চলাচল বন্ধ ছিল। যাত্রীবাহী বাসগুলিকে অন্য রাস্তা দিয়ে ঘুরিয়ে দেওয়া হয়। বিষ্ণুপুরের বিড়াই নদীর সেতুর উপর দিয়ে জল বইতে থাকায় যান চলাচল বন্ধ হয়ে পড়ে বিষ্ণুপুর-সোনামুখী রাস্তাতেও। শালী নদীর সেতুর উপর জল উঠে একই অবস্থা হয় বাঁকুড়া-রানিগঞ্জ ৬০ নম্বর জাতীয় সড়কের। বিকেলে জল নামলে ওই রাস্তা দিয়ে যাতায়াত চালু হয়। জলের তোড়ে মেজিয়ার তেওয়াড়িডাঙা এলাকায় রানিগঞ্জ-বাঁকুড়া জাতীয় সড়কের উপর একটি কালভার্ট ভেঙে যান চলাচল বন্ধ হয়। সিমলাপাল এলাকায় শিলাবতী নদীর কজওয়ে ডুবে বাঁকুড়া-ঝাড়গ্রাম রাজ্য সড়কে যান চলাচল বন্ধ থাকে। তবে দক্ষিণ বাঁকুড়ার রাইপুরের ভৈরববাঁকিতে এ দিন বিকেল পর্যন্ত জল ওঠেনি। কজওয়েও খোলাই ছিল।

সোমবার দিনভর বৃষ্টির জেরে ক্ষতিগ্রস্ত বিভিন্ন এলাকার রাস্তাঘাট পরিদর্শন করেন জেলাশাসক মৌমিতা গোদারা বসু, জেলা সভাধিপতি অরূপ চক্রবর্তী এবং প্রশাসনের বিভিন্ন আধিকারিকেরা। জেলাশাসক বলেন, “রাস্তাঘাটের ক্ষতির বিষয়টি হাইওয়ে কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে। জল নামলেই দ্রুত মেরামতির কাজ শুরু হবে বলে জানিয়েছেন তাঁরা। যে সমস্ত কজওয়ে ডুবে রয়েছে, জল নামলেই সেগুলি যানচলাচলের জন্য খুলে দেওয়া হবে।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE