Advertisement
১৯ এপ্রিল ২০২৪

শুকিয়ে গেল একশো দিনের বনসৃজন

বছরে একশো দিন কাজের প্রকল্পে স্থায়ী সম্পদ গড়তে হবে, যাতে ভবিষ্যতে কিছু মানুষ সেখান থেকে নিয়মিত রোজগারের সুযোগ পান। সম্প্রতি বাঁকুড়ার রামসাগরে একটি পুকুরে মাছ চাষের প্রকল্প শুরু করতে এসে এই নির্দেশ দিয়ে গিয়েছিলেন রাজ্য পঞ্চায়েত দফতরের কমিশনার দিব্যেন্দু সরকার।

রাজদীপ বন্দ্যোপাধ্যায়
বাঁকুড়া শেষ আপডেট: ২৮ মার্চ ২০১৫ ০১:২৬
Share: Save:

বছরে একশো দিন কাজের প্রকল্পে স্থায়ী সম্পদ গড়তে হবে, যাতে ভবিষ্যতে কিছু মানুষ সেখান থেকে নিয়মিত রোজগারের সুযোগ পান। সম্প্রতি বাঁকুড়ার রামসাগরে একটি পুকুরে মাছ চাষের প্রকল্প শুরু করতে এসে এই নির্দেশ দিয়ে গিয়েছিলেন রাজ্য পঞ্চায়েত দফতরের কমিশনার দিব্যেন্দু সরকার।

কিন্তু, সব ক্ষেত্রে তা কি মানা হচ্ছে? বাঁকুড়া জেলা প্রশাসন সূত্রেই জানা যাচ্ছে, চলতি অর্থবর্ষে একশো দিনের প্রকল্পে বাঁকুড়া জেলা জুড়ে প্রায় দেড় কোটি টাকা খরচ করে রাস্তার ধারে গাছ লাগানোর প্রকল্প নেওয়া হয়েছিল। অথচ সঠিক পরিকল্পনার অভাবে বেশির ভাগ গাছই নষ্ট হয়ে গিয়েছে বলে অভিযোগ।

এমনই ঘটনা ঘটতে দেখা গিয়েছে সোনামুখী ব্লকের পাঁচাল গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকায়। পঞ্চায়েতের উদ্যোগে পাঁচাল থেকে আমচূড়া পর্যন্ত প্রায় পাঁচ কিলোমিটার রাস্তার দু’পাশে গাছ লাগানোর প্রকল্প নেওয়া হয়। এই প্রকল্পের জন্য বরাদ্দ হয় প্রায় ৫ লক্ষ টাকা। গোটা রাস্তা জুড়েই কৃষ্ণচূড়া, জামের মতো বিভিন্ন গাছ লাগানো হয়েছিল রাস্তার দু’ধারে। গাছ লাগানোর পরে সিমেন্টের বস্তা দিয়ে সেগুলি ঘিরে দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু, লাগানোর কয়েক মাসের মধ্যেই গাছগুলি মারা যায়।

ওই গ্রাম পঞ্চায়েতের বিরোধী দলনেতা উত্তম মিশ্রের খেদ, “শুধু পাঁচাল-আমচূড়া রাস্তাই নয়, গ্রাম পঞ্চায়েতের তরফে ইছরিয়া নতুন পুকুরের পাড়ে, ইছরিয়া হাইস্কুল এবং পাঁচাল থেকে ময়নাবনি যাওয়ার রাস্তার ধারেও লক্ষাধিক টাকার গাছ লাগানো হয়েছিল। সবই নষ্ট হয়ে গিয়েছে।” এই ঘটনার জন্য পরিকল্পনার গাফিলতির কথা অবশ্য মেনে নিচ্ছেন পাঁচাল পঞ্চায়েতের প্রধান, তৃণমূলের সৌমেন মুখোপাধ্যায়। তাঁর দাবি, গত বর্ষায় বৃষ্টি পর্যাপ্ত হয়নি। নির্দিষ্ট সময়ে বৃক্ষরোপণের কাজও সারা যায়নি। দেখভালের লোকজন না থাকাতেই গাছগুলি নষ্ট হয়েছে। তিনি বলেন, “আমরা লোক দিয়ে দু-তিনবার গাছগুলিতে জল দেওয়ার ব্যবস্থা করেছিলাম। কিন্তু তাতেও বাঁচানো যায়নি। পরিকল্পনায় খামতি ছিল।”

শুধু পাঁচালই নয়, একশো দিনের কাজ প্রকল্পে রাস্তার ধারে লাগানো গাছ নষ্ট হয়ে গিয়েছে জেলার বহু জায়গাতেই। জেলা পরিষদের বিরোধী দলনেতা সুব্রত মুখোপাধ্যায়ের অভিযোগ, “ঠিকঠাক সময়ে গাছ লাগানো হচ্ছে না। জল দেওয়ার কোনও ব্যবস্থা করা হয়নি। সিমেন্টের বস্তা দিয়ে গাছ ঘেরাও করে রাখা হচ্ছে। কোটি কোটি টাকা খরচ করে জেলা জুড়ে গাছ লাগিয়ে শেষে শুধু অত টাকা নষ্ট করল জেলা প্রশাসন।” তাঁর ক্ষোভ, সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনা নিয়ে এগোলে এই টাকা দিয়ে স্থায়ী সম্পদ গড়া সম্ভব হত।

উল্লেখ্য, গাছ লাগিয়ে স্থায়ী সম্পদ গড়েই কেন্দ্রীয় পুরস্কার পেয়েছিল বাঁকুড়া জেলা প্রশাসন। বর্তমানে জেলা জুড়ে ২৫৩টি আম বাগান গড়া হয়েছে একশো দিনের কাজ প্রকল্পে। সেই বাগানগুলি দেখভালের দায়িত্বে রয়েছে ৫০০টি স্বনির্ভর গোষ্ঠীর হাতে। এই গোষ্ঠীগুলির প্রায় ৪ হাজার সদস্য বছরে কয়েক হাজার টাকা করে রোজগার করার সুযোগ পাচ্ছেন আমবাগানগুলি থেকে। শুধু আমবাগান গড়ার ক্ষেত্রেই নয়, এই প্রকল্পে শতাধিক পুকুর কেটে মাছ চাষের কাজও শুরু হয়েছে। এত কিছুর পরেও পরিকল্পনা না করেই রাস্তার ধারে গাছ লাগিয়ে কেন টাকা নষ্ট করা হল, তা নিয়ে প্রশ্ন তুলছেন বিরোধীরা। একশো দিনের প্রকল্পের জেলা আধিকারিক বাবুলাল মাহাতো বলেন, “গাছ লাগানোর কিছু নিয়ম রয়েছে। সেই বিষয়ে না জেনেই পা ফেলায় কয়েকটি ব্লকে অল্পবিস্তর সমস্যা দেখা গেছে। তবে তেমন একটা মারাত্মক কিছু নয়। আগামী দিনে যাতে গাছ নষ্ট না হয়, তার জন্য ইতিমধ্যেই গাছ লাগানোর নিয়ম নিয়ে সেমিনার শুরু করেছে জেলা প্রশাসন। পঞ্চায়েত প্রধানদের নিয়ে বৈঠক করে তাঁদের হাতে নাতে গাছ লাগানোর নিয়ম, পরিচর্যার বিষয়গুলি শেখানো হচ্ছে।” রাস্তার ধারের গাছগুলির দেখভালের দায়িত্বেও স্বনির্ভর গোষ্ঠীগুলিকে কাজে লাগানো হবে বলে জানিয়েছেন বাবুলালবাবু। তিনি বলেন, “স্থায়ী সম্পদ গড়াই আমাদের একমাত্র লক্ষ্য।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE