চৈতক-খুনে যাবজ্জীবন

‘পিকনিকে যাচ্ছি’— এই বলে বাড়ি থেকে বেরিয়ে আর ফেরেননি কোতুলপুরের গাঁতি গ্রামের বছর ছাব্বিশের চৈতক মুখোপাধ্যায়। দু’দিন পর লাগোয়া রামকৃষ্ণপল্লির শ্রীমন্ত দাসের বাড়িতে মাটিতে পোঁতা দেহ মেলে। ২০১২ সালের ১৪ ফেব্রুয়ারির ঘটনা। এই ঘটনায় সোমবার বিষ্ণুপুর আদালতের অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা বিচারক সুমিত্রা রায় দু’জনের যাবজ্জীবন সাজা ঘোষণা করেন।

ছেলে চৈতকের দেহ উদ্ধারের পরেই শ্রীমন্ত-সহ পাঁচ জনের বিরুদ্ধে ছেলেকে খুনের অভিযোগ দায়ের করেন স্বপন মুখোপাধ্যায়। পুলিশ তদন্তে নেমে শ্রীমন্ত, তাঁর মা ঝর্ণা দাস, দুই ভাই অনুপ, তাপস এবং শ্রীমন্তের গাড়ির চালক গাঁতি গ্রামেরই বাসিন্দা নবকুমার অধিকারীকে গ্রেফতার করে। চার মাস জেল খাটার পরে শ্রীমন্তের মা ও দুই ভাই জামিন পেয়ে যান। এক সময় জামিন পেয়ে জেলের বাইরে ছিলেন নবকুমার। শনিবার বিষ্ণুপুর মহকুমা আদালত এই খুনের ঘটনায় শ্রীমন্ত ও নবকুমারকে দোষী সাব্যস্ত করে। সোমবার ছিল সাজা ঘোষণার দিন। ফলে চৈতকের বাবা ও বোনের সঙ্গে এ দিন আদালত চত্বরে এসেছিলেন প্রতিবেশীরাও। দেখা গেল দোষী সাব্যস্ত দুই পরিবারের সদস্যদেরও।

এ দিকে, রায় শুনে ক্ষুব্ধ চৈতকের বাবা ও একমাত্র বোন শিল্পা মুখোপাধ্যায়। তাঁদের কথায়, ‘‘এ রকম একটি নৃশংস খুনের ঘটনায় দোষীদের ফাঁসি চেয়েছিলাম। কেনই বা ছাড় পেলেন শ্রীমন্তের মা ও ভাইয়েরা, তা-ও বুঝতে পারছি না। হাইকোর্টে ফের আবেদন করব।’’

কেন খুন?

মামলার সরকারি কৌঁসুলি গুরুপদ ভট্টাচার্য বলেন, ‘‘কম্পিউটারে বিশেষ জ্ঞান ছিল চৈতকের। শ্রীমন্তর খারাপ কম্পিউটার সারাতে গিয়ে গোপন কিছু তথ্য জেনে ফেলায় এই খুনের ঘটনা।’’ তিনি জানান, শ্রীমন্তকে এই খুনে সাহায্য করেছিল নবকুমার। বিচারক দু’জনকেই যাবজ্জীবন কারাবাসের নির্দেশ দেন। সাজাপ্রাপ্ত নবকুমারের স্ত্রী ময়না অধিকারী কোর্ট চত্বরে দাঁড়িয়ে অবশ্য দাবি করেন, ‘‘আমার স্বামীকে ফাঁসানো হয়েছে।’’ সাজা ঘোষণার পরে জেলে নিয়ে যাওয়ার পথে একই দাবি করেছে নবকুমারও। শ্রীমন্তও নিজেকে অবিচারের শিকার বলেই মনে করছে।