এত দিন তাঁদের মনে হয়নি। কিন্তু, নোট বাতিলের আঁচ সরাসরি দৈনন্দিন বেচাকেনায় এসে লাগায় এ বার নগদহীন লেনদেনে (বা প্লাস্টিক মানি) হাঁটার কথা ভাবছেন বাঁকুড়ার অনেক ব্যবসায়ী।
গত ৮ নভেম্বর পুরনো পাঁচশো ও হাজার টাকার নোট বাতিলের ঘোষণার পর থেকেই বাজারে নগদের আকাল দেখা দিয়েছে। ক্রেতাদের হাতে নগদ টাকা নেই। ফলে, বাজারও মার খাচ্ছে। রাজ্যের অন্য জেলার মতো বাঁকুড়ার বাজারগুলিতেও এখনও পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়নি। তবে, এই সময়কালে যে সব ব্যবসায়ী নিজেদের দোকানে কার্ডে দাম মেটানোর সুবিধা রেখেছেন, তাঁরা অনেকটাই সুবিধাজনক জায়গায় রয়েছেন। নগদে কেনাকাটা এড়াতে বহু ক্রেতা ভিড় জমিয়েছেন সেখানে। অথচ, স্রেফ কার্ড সোয়াপিং মেশিন না থাকায় ছোট-মাঝারি অসংখ্য দোকানে রোজের বিক্রি ধাক্কা খেয়েছে।
আর এই ঘটনাই সেই ব্যবসায়ীদের চোখ খুলে দিয়েছে। তাঁরা ধীরে হলেও বুঝতে পেরেছেন, পিওএস (পয়েন্ট অফ সেল) মেশিন না থাকার অসুবিধা। ফলে অনেক ব্যবসায়ীই যোগাযোগ করছেন ব্যাঙ্কগুলির সঙ্গে। ব্যবসায়ীদের এই কাজে উৎসাহিত করতে এগিয়ে এসেছে বণিকসভাও। বাঁকুড়া চেম্বার অফ কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজের সাধারণ সম্পাদক মধুসূদন দরিপা জানিয়েছেন, ইতিমধ্যেই পিওএস মেশিন বসাতে চেয়ে বাঁকুড়া শহরের ৪০ জন ব্যবসায়ী তাঁদের বণিকসভার সঙ্গে যোগাযোগ করেছেন। ব্যবসায়ীদের আগ্রহ দেখে ডিসেম্বর মাসের প্রথম সপ্তাহেই জেলার বিভিন্ন ব্যাঙ্কের কর্তাদের সঙ্গে একটি বৈঠক করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে ওই বণিকসভা। বেশ কিছু রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কও ব্যবসায়ীদের উৎসাহিত করতে নানা সুবিধা দেওয়ার কথা জানিয়েছে।
মধুসূদনবাবু বলেন, “ব্যবসায়ীদের একটা বড় অংশই চাইছেন পিওএস মেশিন বসাতে। কয়েকটি ব্যাঙ্কও আশ্বাস দিয়েছে কারেন্ট অ্যাকাউন্টের বাধ্যতামূলক জমা রাখা টাকার অঙ্ক কয়েক গুণ কমিয়ে দেওয়ার। সেই সঙ্গে মেশিনটিও বিনামূল্যে দেওয়ার আশ্বাস দিচ্ছে। এই সব নিয়েই ব্যাঙ্কগুলির সঙ্গে বৈঠক করব।’’
ব্যবসায়ীদের অনেকেরই মতে, ক্রেতারা কার্ডে বিল মেটালে আখেরে তাঁদেরই সুবিধা হবে। সে ক্ষেত্রে নগদ লেনদেনে খুচরোর যে ঝামেলা থাকে, তা যেমন মিটবে, তেমনই দৈনিক যে টাকার ব্যবসা হয়, তা ব্যাঙ্কে জমা করাতে লাইনে দাঁড়ানোর হাত থেকেও রেহাই মিলবে। ব্যবসার টাকাও থাকবে সুরক্ষিত। বাঁকুড়া শহরের কালীতলা এলাকার একটি মুদি দোকানের মালিক জনার্দন দত্তের কথায়, “নোট বাতিল হওয়ার পর থেকেই গ্রাহকেরা এসে খবর নিয়েছেন, দোকানে পিওএস মেশিন রয়েছে কিনা। ওই মেশিন থাকলে ব্যবসায় ভাটা পড়ত না। শীঘ্রই মেশিন বসানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছি।’’
নোট বাতিলের জেরে কার্ডে বেচাকেনা যে অনেকটাই বেড়েছে, বাঁকুড়া শহরে তার প্রমাণ ইতিমধ্যেই মিলছে সমবায় বিপণিতে। সদ্য পিওএস মেশিনে বিল মেটানোর সুবিধা চালু করেছে এই বিপণি। চালু হওয়ার পর থেকেই অধিকাংশ ক্রেতা সেখানে কেনাকাটা করার পরে কার্ডেই বিল মেটাচ্ছেন। শহরের ভৈরবস্থান এলাকার মিষ্টি ব্যবসায়ী গোপালচন্দ্র বরাট ইতিমধ্যেই একটি রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কের সঙ্গে যোগাসযোগ করেছেন পিওএস মেশিন নেওয়ার জন্য। খুচরোর সমস্যা এড়াতেই তিনি অবিলম্বে মেশিন বসাতে চাইছেন বলে জানালেন। ভৈরবস্থানেরই একটি স্টেশনারি দোকানের মালিক প্রশান্ত দাস ও চকবাজারের একটি স্টেশনারি দোকানের মালিক অশোক সেনও নিজেদের দোকানে পিওএস মেশিন নিতে চেয়ে চেম্বার অফ কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজের সঙ্গে কথা বলেছেন।
বাঁকুড়ার পাশাপাশি জেলার আর এক পুরশহর বিষ্ণুপুরের ব্যবসায়ীদের মধ্যেও কার্ডে বিল মেটানোর মেশিন নেওয়ার চাহিদা বেড়েছে। বিষ্ণুপুরের ময়রাপুকুরের বাসিন্দা ও বিলাতি মদের ডিস্ট্রিবিউটর শঙ্কর চৌধুরী জানান, তিনি ইতিমধ্যেই ব্যাঙ্কের সঙ্গে যোগাযোগ করে পিওএস মেশিন নেওয়ার আবেদনপত্র তুলে এনেছেন। শীঘ্রই তাঁর দোকানে ওই মেশিন বসিয়ে দেওয়ার আশ্বাসও দিয়েছে ব্যাঙ্ক কর্তৃপক্ষ।
বিষ্ণুপুর শহরের চকবাজার এলাকার একটি রেস্তোঁরার অন্যতম কর্ণধার আকাশ নন্দী বলেন, “বাজারে খুচরোর সমস্যার জন্য ক্রেতা ও বিক্রেতা সকলেই সমস্যায় পড়ছেন। যা পরিস্থিতি তাতে ব্যবসা বাঁচাতে সকলকেই ওই মেশিন বসাতে হবে। ব্যাঙ্কের সঙ্গে আলোচনা করে যা যা করার তা করে ফেলেছি। এ বার মেশিন নামানোর অপেক্ষা।’’ বিষ্ণুপুরের একটি রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কের ম্যানেজার জানাচ্ছেন, প্রায় প্রতিদিনই ব্যবসায়ীরা এসে মেশিন বসানোর জন্য আবেদনপত্র তুলে নিয়ে যাচ্ছেন।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy