বৈদ্যনাথবাবুর ম্যাজিক শো দেখতে ভিড় দুবরাজপুরে। —নিজস্ব চিত্র
জাদুকরের হাতে দু’টি সদ্যোজাত শিশুর ছবি। একঝলক সেই ছবি দেখিয়েই দু’টি পৃথক বাক্সের মধ্যে তিনি ভরে দিলেন ছবিগুলি। উপস্থিত ভিড়ের উদ্দেশে বললেন, ‘‘একটি শিশুকে মা বুকের দুধ খাইয়েছেন, পূর্ণ টিকাকরণ হয়েছে। অন্য শিশুটি কৌটোর দুধ খেয়েছে, টিকাকরণও হয়নি। বছর কয়েক পরে ফল দেখুন।’’ জাদুকরের কথা শেষ হতেই বাক্সের মধ্যে থেকে বেরিয়ে এল দু’টি ভিন্ন ছবি। টিকাকরণ সম্পূর্ণ করা ও মায়ের দুধ খাওয়া শিশুটি ফুটবলে লাথি মারছে। আর অন্য শিশুটি পোলিও আক্রান্ত।
হাততালি দিয়ে উঠল জনতা!
টিকাকরণ কর্মসূচি সফল করতে এবং স্বাস্থ্য সচেতনতা বৃদ্ধিতে এ ভাবেই ম্যাজিক শোয়ের আশ্রয় নিল বীরভূম জেলা স্বাস্থ্য দফতর। শনিবার বিকেলে দুবরাজপুর পুরসভা এলাকার কয়েকটি ওয়ার্ডে তারই সাক্ষী থাকলেন বেশ কিছু মানুষ। তাৎপর্যপূর্ণ দিক হল, ৮ নম্বর ওয়ার্ডের কমিউনিটি হলের দরজায় দাঁড়িয়ে যিনি ম্যাজিক দেখালেন— সেই যাদুকর বৈদ্যনাথ ঘোষ নিজেই পোলিও আক্রান্ত। সচেতনতা বৃদ্ধিতে রাজ্য স্বাস্থ্য দফতরের মনোনীত ওই জাদুকর আগামী ৫ জুলাই পর্যন্ত সিউড়ি, দুবরাজপুর মহম্মদবাজার, ইলামবাজারে এমন ২০টি শো করবেন বলে দফতর জানিয়েছে।
কেন ম্যাজিক?
দফতর সূত্রের খবর, পূর্ণ টিকাকরণ হলে একটি শিশু ডিপথেরিয়া, হুপিং কাশি, টিটেনাস, পোলিও-র মতো সাতটি মারাত্মক রোগ প্রতিরোধ করতে পারে। কিন্তু, এখনও এমন অনেক শিশু রয়েছে, যারা পূর্ণাঙ্গ টিকাকরণের আওতার বাইরে থেকে গিয়েছে। তা রুখতে সরকারি প্রকল্প ‘মিশন ইন্দ্রধনুষ’ শুরু হয়েছে গত বছর এপ্রিল থেকে। ১৮,১৮৮টি শিশুকে চিহ্নিত করে এই কর্মসূচি শুরু হয়েছিল। যথেষ্ট সাফল্যও মিলেছে। তবু এখনও জেলার কিছু জায়গায় কয়েকশো শিশু এখনও কর্মসূচির বাইরে থেকে গিয়েছে। সে রকমই একটি এলাকা দুবরাজপুরের ওই ওয়ার্ড। ম্যাজিক শোয়ের জন্য বেছে নেওয়া ওই ওয়ার্ডে এখনও ১২টি শিশু টিকাকরণের বাইরে রয়ে গিয়েছে।
জেলা মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক হিমাদ্রি আড়ি বলছেন, ‘‘পোলিও রুখতে পোস্টার, লিফলেট ব্যানার, ঘরে ঘরে প্রচার চলছে। ম্যাজিক একটি জনপ্রিয় মাধ্যম। অনেক মানুষ একসঙ্গে দাঁড়িয়ে দেখেন। সেটা সচেতনতা বৃদ্ধিতে আরও ভাল কাজ করতে পারে। তার উপর বৈদ্যনাথবাবু যেহেতু নিজেও পোলিও আক্রান্ত এক ব্যক্তি, তাই মানুষের কাছে সরাসরি বার্তা পৌঁছবে।’’ সেই ভাবনা থেকেই এই কাজে বৈদ্যনাথবাবুকে ডাকা হয়েছে বলে তিনি জানান। হিমাদ্রিবাবু আরও জানান, শুধু টিকাকরণ নয়ই, বর্ষার শুরুতে ম্যালেরিয়া, ফাইলেরিয়া, বাল্যবিবাহের ক্ষতিকারক দিক-সহ একাধিক বিষয়ে একসঙ্গে প্রচার চলছে।
আদতে পশ্চিম মেদিনীপুরের বাসিন্দা বৈদ্যনাথবাবু এ দিন শোয়ের পরে জানান, পোলিও তাঁর দু’টি পা-ই কেড়ে নিয়েছে। তবু তিনি হার মানেননি। তাঁর বক্তব্য, ‘‘সচেতনতার অভাবেই আমার এই হাল। মামা বাড়িতে ম্যাজিক শিখেছি। সব সময়ই মনে হয়েছে, বাণিজ্যিক ম্যাজিক শোয়ের বদলে সচতনতা বৃদ্ধিতে যদি এটা কাজে লাগানো যাই।’’ সেই শুরু। গত ১৫-১৬ বছর ধরে স্বাস্থ্য দফতরের সচেতনতা বিষয়ক অনুষ্ঠান করছেন তিনি।
আর যাঁরা ম্যাজিক দেখলেন, তাঁরা কী বলছেন? উপস্থিত দিলরুবা বিবি, মমতাজ বিবিরা বলছেন, ‘‘ম্যাজিক ও উপদেশ, দুই-ই ভাল লেগেছে। যে ঘরের বাচ্চাগুলোর এখনও টিকা হয়নি, তাদের বাড়ির লোকেদের আমরা বোঝানোর চেষ্টা করব।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy