অভিযান চালিয়ে মোটরবাইক চুরির সঙ্গে যুক্ত দু’টি পৃথক চক্রের হদিস পেল বাঁকুড়া পুলিশ। এই ঘটনায় গ্রেফতার হয়েছেন মোট ১০ জন। পুলিশের দাবি, ধৃতদের কাছ থেকে ২৯টি মোটরবাইক ও বেশ কয়েক হাজার নগদ টাকা উদ্ধার হয়েছে। বৃহস্পতিবার বাঁকুড়ার পুলিশ লাইনে সাংবাদিক বৈঠক করে জেলার পুলিশ কর্তারা এ কথা জানান। সাংবাদিক বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন জেলা পুলিশ সুপার সুখেন্দু হীরা, জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার দেবর্ষি দত্ত, বাঁকুড়ার ডিএসপি (প্রশিক্ষণ, শৃঙ্খলা) বাপ্পাদিত্য ঘোষ-সহ জেলার বেশ কিছু থানার ওসি ও পুলিশ কর্মীরা।
পুলিশের দাবি, চক্র দু’টি বাঁকুড়া-সহ দক্ষিণবঙ্গের বিভিন্ন জেলায় মোটরবাইক চুরির সঙ্গে যুক্ত। ছাতনা থানা এলাকায় পর পর দুটি মোটরবাইক চুরির পরে পুলিশ তদন্তে নামে। তখনই চুরি করা মোটরবাইক বিক্রির অভিযোগে রাইপুরের উপরবাঁধ গ্রামের মুস্তাফা খান নামে এক যুবককে গ্রেফতার করে ছাতনা পুলিশ। পুলিশের দাবি, মুস্তাফাকে জেরা করে চক্রের মূল চাঁই ছাতনার ঘাগরার বাসিন্দা দেবদাস দাস ও তাঁদের আর এক সহযোগী রাইপুরের উপরবাঁধের বাসিন্দা মুফিজুল খানকে গ্রেফতার করা হয়। তিন জনকে জেরা করে পুলিশ জানতে পারে দেবদাসের কাছে বিভিন্ন সংস্থার মোটরবাইকের নকল চাবির ঝুলি থাকত। বাসস্ট্যান্ড, হাসপাতাল বা পাড়ার অলিগলি যেখানেই মোটরবাইক দেখত, নকল চাবি দিয়ে তা খোলার চেষ্টা করত দেবদাস। খুলে গেলেই মোটরবাইক হাতিয়ে চম্পট দিত সে।
পুলিশ তদন্তে জেনেছে, এই তিন জনের কাছ থেকে চুরি করা মোটরবাইক কিনতেন পশ্চিম মেদিনীপুরের কেশপুরের মুগবাসার বাসিন্দা শেখ মৌসম ও আনন্দনগর থানার কলগেড়িয়ার বাসিন্দা শেখ ফসিবুল। তারপর মোটরবাইকের নম্বার প্লেট পাল্টে নকল কাগজ বানিয়ে বাজারে বিক্রি করতেন। পুলিশ শেখ মৌসম ও শেখ ফসিবুলকেও গ্রেফতার করেছে। তদন্তকারী পুলিশ কর্তাদের দাবি, ছাতনা-সহ বাঁকুড়া সদর ও বেলিয়াতোড় থানা এলাকাতেও একাধিক মোটরবাইক চুরির ঘটনায় যুক্ত এই পাঁচ জন। চক্রটির কাছ থেকে মোট ১৯টি মোটরবাইক উদ্ধার হয়েছে বলে জানিয়েছে পুলিশ।
অন্য দিকে, জুন মাসে তালড্যাংরা থানার পুলিশ একটি মোটরবাইক চুরির অভিযোগের তদন্তে নেমে গড়বেতার তিলাডাঙার বাসিন্দা মুগলেশ্বর খানকে গ্রেফতার করে। মুগলেশ্বরকে জিজ্ঞাসাবাদ করে মোটরবাইক চুরি চক্রের পান্ডা সন্দেহে হুগলির তারকেশ্বরের বাসিন্দা অসিত দাস, ধনিয়াখালির বাসিন্দা আবদুল ফারুক, ও গোঘাটের বাসিন্দা হারাধন কোটালকে গ্রেফতার করে পুলিশ। পুলিশের দাবি, ধৃতদের জিজ্ঞাসাবাদ করে চক্রের চাঁই হিসেবে নাম উঠে আসে পশ্চিম মেদিনীপুরের গড়বেতার বাসিন্দা মানোয়ার খানের নাম। তাঁকেও গ্রেফতার করেছে পুলিশ। পুলিশের আরও দাবি, চক্রটির কাছ থেকে ১০টি মোটরবাইক-সহ নগদ কয়েক হাজার টাকা উদ্ধার হয়েছে। দুটি চক্রের ধৃত দশ জনের মধ্যে দেবদাস দাস ছাড়া বাকি ন’জনকেই এ দিন পুলিশ লাইনের সাংবাদিক বৈঠকে হাজির করে পুলিশ। ধৃত দেবদাস অবশ্য ডেঙ্গিতে আক্রান্ত হয়ে বাঁকুড়া মেডিক্যালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন।
পুলিশ সুপার সুখেন্দু হীরা বলেন, “তদন্তকারী অফিসারেরা একটি টিম হিসেবে কাজ করেই এই সাফল্য পেয়েছেন। পশ্চিম মেদিনীপুর জেলা পুলিশও আমাদের সহযোগিতা করেছে।” সাংবাদিক বৈঠক শেষে ধৃত শেখ মৌসম, শেখ ফসিবুলদের তাঁদের বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগ নিয়ে প্রশ্ন করা হলে তাঁরা অবশ্য অভিযোগ অস্বীকার করেছেন। তাঁদের কথায়, “আমরা গ্যারাজের কর্মী মাত্র।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy