Advertisement
১৯ এপ্রিল ২০২৪

চার মাস পরেও বহু এটিএমে ‘নো ক্যাশ’

প্রয়োজন মাত্র চার হাজার টাকা। শান্তিনিকেতনের বাসিন্দা মহম্মদ মহসিন ভেবেছিলেন বাড়ির কাছের এটিএম থেকেই পেয়ে যাবেন। কিন্তু শুক্রবার দুপুরে সেই এটিএম-এ পৌঁছে দেখলেন দরজায় ঝুলছে— ‘নো ক্যাশ’ বোর্ড!

দুর্ভোগে সিউড়ি, রামপুরহাট ও দুবরাজপুর। জেলার নানা প্রান্তের এটিএমে দিনভর দেখা গেল এমনই ছবি। —নিজস্ব চিত্র।

দুর্ভোগে সিউড়ি, রামপুরহাট ও দুবরাজপুর। জেলার নানা প্রান্তের এটিএমে দিনভর দেখা গেল এমনই ছবি। —নিজস্ব চিত্র।

নিজস্ব সংবাদদাতা
সিউড়ি শেষ আপডেট: ০৪ মার্চ ২০১৭ ০২:২১
Share: Save:

প্রয়োজন মাত্র চার হাজার টাকা। শান্তিনিকেতনের বাসিন্দা মহম্মদ মহসিন ভেবেছিলেন বাড়ির কাছের এটিএম থেকেই পেয়ে যাবেন। কিন্তু শুক্রবার দুপুরে সেই এটিএম-এ পৌঁছে দেখলেন দরজায় ঝুলছে— ‘নো ক্যাশ’ বোর্ড!

এর পরে একে একে তিনটি এটিএম ঘুরে চতুর্থ এটিএম-এ গিয়ে শেষপর্যন্ত টাকা পেলেন ওই যুবক। প্রায় একই অভিজ্ঞতা রামপুরহাটের হিমাদ্রি দাস এবং সুপর্ণা অধিকারীরও। বাড়ি থেকে বেশ খানিকটা পথ উজিয়ে এসে একটি রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কের মূল শাখা লাগোয়া এটিএম-এ মিলল টাকা। দুর্ভোগের এক ছবি জেলা সদর সিউড়ি এবং দুবরাজপুর শহরেরও।

জেলার নানা শহরে বেশ কয়েকটি এটিএম রয়েছে। অথচ তাতে টাকা নেই। ছবিটা আরও করুণ গ্রাম-মফস্সলের এটিএমগুলিতে। নোট বাতিলের চার মাস পরেও স্বাভাবিক হল না নগদের জোগান। কিছু এটিএম বন্ধ। কিছু অর্ধেক খোলা। কোনও কোনও এটিএম খোলা থাকলেও তাতে কোনও টাকা নেই। দুবরাজপুরেই যেমন দু’টি রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্ক এবং বেসরকারি ব্যাঙ্ক মিলিয়ে মোট ছ’টি এটিএম। কিন্তু সচল শুধুমাত্র দু’টি এটিএম। সিউড়িতে অবস্থা অপেক্ষাকৃত ভাল হলেও মোটেও স্বাভাবিক নয়। তবে, মন্দের ভাল হল, সচল এটিএমগুলিতে আগের মতো গ্রাহকদের তেমন লম্বা লাইন নজরে আসছে না।

বীরভূমে মোট ব্যাঙ্কের শাখা রয়েছে ২৮৮টি। এটিএম-এর সংখ্যা ২২১টি। গ্রাহকদের অভিজ্ঞতা, দিন কয়েক ধরেই এটিএমগুলিতে টাকা না মেলার সমস্যা দেখা দিয়েছে। গ্রাহকদের প্রশ্ন, ‘‘৫০০-১০০০-এর পুরনো নোট-বাতিলের পরে প্রায় চার মাস অতিক্রান্ত। তা সত্ত্বেও টাকাপয়সা নিয়ে সাধারণ মানুষের দুর্ভোগের ছবিটা পুরোপুরি বদলাচ্ছে না কেন?’’ ব্যাঙ্কের ভিড় এড়িয়ে কেউ এটিএম থেকে চট করে প্রয়োজনীয় টাকা তুলবেন, সেই উপায়টি আর নেই। গ্রাহকদের অভিযোগ, এটিএম-এ টাকা তোলার লিমিট বাড়িয়ে ৪০ হাজার করে দেওয়া দেওয়া হয়েছে। কিন্তু, নগদের জোগান কই? এটিএমগুলির অধিকাংশতেই দিনের শুরুর কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই ‘নো ক্যাশ’ বোর্ড ঝুলে থাকতে দেখা যাচ্ছে বলে গ্রাহকদের অনেকের দাবি।

বিভিন্ন ব্যাঙ্কের সঙ্গে কথা বলে জানা গিয়েছে, নতুন নোট ছাপিয়ে বাজারে আগের সংখ্যায় এখনও নগদের জোগান তৈরি করা যায়নি। এ দিকে, টাকা তোলার ঊর্ধ্বসীমা ৪০ হাজার করে দেওয়া হয়েছে। দেখা যাচ্ছে, এক একজন গ্রাহক ব্যাঙ্কের ঝঞ্ঝাট এড়িয়ে সোজা এটিএম থেকে প্রয়োজনীয় টাকা তুলে নিচ্ছেন। অনেকেই একাধিক কার্ডে টাকা তুলছেন। নোট ছাপিয়ে নগদের জোগান এখনও বাজারের চাহিদা অনুযায়ী স্বাভাবিক করতে না পারায় তাই দ্রুত টাকা শেষ হচ্ছে। টাকা শেষ হলে পরের বার এটিএম-এ টাকা ভরতে দেরি হওয়ার জন্যই এক সঙ্গে সব এটিএম থেকে পরিষেবা পাচ্ছেন না গ্রাহকেরা। আরও একটি কারণও রয়েছে। এক ব্যাঙ্ক আধিকারিকের দাবি, ‘‘বিভিন্ন বাণিজ্যিক সংস্থা চুক্তির ভিত্তিতে এটিএমগুলির রক্ষণাবেক্ষণ থেকে পরিষেবা দেওয়ার দায়িত্বে থাকে। জেলার কয়েকটি এটিএমের ক্ষেত্রে চুক্তির মেয়াদ শেষ হওয়ায় তা বন্ধ হয়ে পড়ে রয়েছে।’’

যদিও এটিএম-এ নগদের জোগান নিয়ে কোনও সমস্যা রয়েছে বলে মানতে নারাজ জেলা লিড ব্যাঙ্ক ম্যানেজার দীপ্তেন্দ্রনারায়ণ ঠাকুর। তাঁর দাবি, ‘‘টাকার তো তেমন কোনও অভাব নেই। কেন এটিএমগুলিতে টাকা থাকছে না, খোঁজ নিচ্ছি।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

No cash ATM Demontisation
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE