Advertisement
২৬ এপ্রিল ২০২৪

অনাস্থা-শুনানি নয়, ক্ষোভ তৃণমূলে

শীর্ষ নেতৃত্ব বারবার দলের দ্বন্দ্ব ঘোচাতে নির্দেশ দিলেও তৃণমূলের অনেকে যে কানে তুলছেন না, ফের তা সামনে এনে দিলেন মানবাজার ২ পঞ্চায়েত সমিতির বেশ কয়েকজন সদস্য। বিধানসভা ভোটের আগেই ওই পঞ্চায়েত সমিতির অধিকাংশ তৃণমূল সদস্যে দলেরই সভাপতির বিরুদ্ধে অনাস্থা এনেছিলেন।

নিজস্ব সংবাদদাতা
মানবাজার শেষ আপডেট: ১২ জুন ২০১৬ ০৬:৩৩
Share: Save:

শীর্ষ নেতৃত্ব বারবার দলের দ্বন্দ্ব ঘোচাতে নির্দেশ দিলেও তৃণমূলের অনেকে যে কানে তুলছেন না, ফের তা সামনে এনে দিলেন মানবাজার ২ পঞ্চায়েত সমিতির বেশ কয়েকজন সদস্য। বিধানসভা ভোটের আগেই ওই পঞ্চায়েত সমিতির অধিকাংশ তৃণমূল সদস্যে দলেরই সভাপতির বিরুদ্ধে অনাস্থা এনেছিলেন। কিন্তু নির্বাচন-পর্ব মিটে যাওয়ার পরেও অনাস্থা নিয়ে তলবি সভা প্রশাসন না ডাকায় তাঁরা অসন্তুষ্ট হয়ে ফের চিঠি দিলেন পুরুলিয়া (সদর) মহকুমাশাসককে।

এলাকাটি বান্দোয়ান বিধানসভা কেন্দ্রের মধ্যে পড়ে। দীর্ঘদিন বাদে এ বার এই কেন্দ্র সিপিএমের হাত থেকে কেড়ে নিয়েছে তৃণমূল। দলের সবাই এককাট্টা হয়ে লড়াই করাতেই এই সাফল্য বলে দাবি করেছিলেন নেতৃত্ব। কিন্তু দ্বন্দ্বের ক্ষতে মলম পড়েনি। মানবাজার ২ পঞ্চায়েত সমিতির ১৮ জন সদস্যের মধ্যে ১৬ জনই তৃণমূলের। বাকি দু’জন সিপিএমের। কিন্তু তৃণমূলের সে সুখ বেশিদিন সইল না। পঞ্চায়েত সমিতির সহ-সভাপতি সীতারাম মুর্মু-সহ দলেরই ১০ সদস্য সভাপতি গীতারানি মাহাতোর বিরুদ্ধে কয়েক বছরের মধ্যেই অনাস্থা প্রস্তাব আনেন। যাঁরা অনাস্থা এনেছেন, তাঁদের মধ্যে সহ-সভাপতি ছাড়াও পাঁচজন কর্মাধ্যক্ষ রয়েছেন। অনাস্থার কারণ হিসাবে সীতারাম মুর্মুর অভিযোগ, ‘‘পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি নিজের মর্জি মাফিক চলেন। সদস্যদের মতামত বা পরামর্শ তিনি নেন না। অগণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে তিনি সমিতির কাজ চালাচ্ছেন।’’ এ কারণেই তাঁরা সভাপতি বদল চেয়েছেন ।

কিন্তু সে যাত্রায় তলবিসভা হয়নি। প্রশাসন থেকে জানিয়ে দেওয়া হয়, নির্বাচনের আড়াই বছরের মধ্যে ত্রিস্তরীয় পঞ্চায়েতে অনাস্থা প্রস্তাব আনা যাবে না। যদিও তখন ওই সময়সীমা পার হতে কিছুদিন বাকি ছিল। এরপরে গত ২ মার্চ ফের তাঁরা অনাস্থা চেয়ে আবেদন জানান। বিক্ষুদ্ধদের দাবি, তখন প্রশাসন থেকে তাঁদের জানানো হয়েছিল, বিধানসভা নির্বাচনের প্রস্তুতি চলছে। তাই এ ব্যাপারে তখন কিছু করার ছিল না। নির্বাচনী বিধি মুক্ত হওয়ার পরেই এ ব্যাপারে যা করার তা করা হবে। কিন্তু নির্বাচন পার হয়ে নতুন সরকার শপথ নেওয়ার পরেও কেন তলবি সভা ডাকা হচ্ছে না, এই প্রশ্নে তাঁরাও ক্ষোভে ফুঁসছেন। সীতারামবাবু বলেন, ‘‘অনাস্থার শুনানি নিয়ে কেন পদক্ষেপ করা হচ্ছে না, তা জানতে চেয়ে আমরা সম্প্রতি মহকুমাশাসককে চিঠি দিয়েছি।’’

মহকুমাশাসক (পুরুলিয়া সদর) আশিস সাহা বলেন, ‘‘নির্বাচনের আগে মানবাজার ২ পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতির বিরুদ্ধে অনাস্থা চেয়ে একটা আবেদন পত্র পেয়েছি। ওই সময় নির্বাচনী বিধি থাকার জন্য এই নিয়ে অগ্রসপ হওয়া যায়নি। আমি ওঁদের বলেছিস পঞ্চায়েত আইনের নিয়ম অনুযায়ী পদক্ষেপ করা হবে। এই নিয়ে ফের কেউ চিঠি পাঠিয়ে থাকলে আমার কাছে আসেনি।’’

তবে তাঁর বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগ গীতাদেবী মানেননি । বরং তাঁর পাল্টা দাবি, ‘‘পঞ্চায়েত সমিতির কয়েকজন সদস্য আমাকে দিয়ে অনৈতিক কাজ করাতে চেয়েছিলেন। আমি সম্মত হইনি।’’ দলের পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতির বিরুদ্ধে অনাস্থা আনতে চেয়ে তারা কি দল বিরোধী কাজ করছেন না? বিক্ষুব্ধ গোষ্ঠীর তরফে পঞ্চায়েত সমিতির বন ও ভূমি কর্মাধ্যক্ষ মতিলাল সিং দাবি করেন, ‘‘আমরা কোনও দল বিরোধী কাজ করছি না। এ ব্যাপারে আগেই আমরা দলীয় নেতৃত্বের হস্তক্ষেপ চেয়েছিলাম। তাঁরা বিষয়টিকে গুরুত্ব না দেওয়ায় বাধ্য হয়ে আমরা অনাস্থা চেয়েছি।’’

তবে সেই দাবি খারিজ করে দিয়েছেন তৃণমূলের মানবাজার ২ ব্লক সভাপতি হংসেশ্বর মাহাতো। তিনি পাল্টা দাবি করেছেন, ‘‘ওই গোষ্ঠী যে কোনও উপায়ে পঞ্চায়েত সমিতির ক্ষমতা দখল করতে মরিয়া হয়ে উঠেছে। সমাধান সূত্র বের করার জন্যে কয়েকবার ওঁদের বৈঠকে ডাকা হয়েছিল। কিন্তু তাঁরা বৈঠকে আসেননি।’’ তাঁর আক্ষেপ, ‘‘পঞ্চায়েত নির্বাচনে ওঁদের টিকিট দেওয়াই ভুল হয়েছিল। এ ব্যাপারে দলের শীর্ষ নেতাদের পরামর্শ চাইব।’’

অনাস্থার নেপথ্যের কাহিনি কী? জেলা রাজনীতি নিয়ে ওয়াকিবহাল লোকজন ও তৃণমূলের দীর্ঘদিনের নেতা-কর্মীরা জানাচ্ছেন, এই দ্বন্দ্বের গোড়ায় রয়েছে এলাকার দুই দাপুটে নেতা-নেত্রীর ইগোর লড়াই। নিজের প্রভাব খাটিয়ে দলের অন্যতম প্রাক্তন জেলা সম্পাদক শ্রীপতি মাহাতো তাঁর স্ত্রী গীতারানিদেবীকে মানবাজার ২ পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি করেছিলেন বলে অভিযোগ। কিন্তু তাঁকে মানতে পারেননি মহিলা তৃণমূলের সভানেত্রী তথা জেলা পরিষদের কর্মাধ্যক্ষ নিয়তি মাহাতো। তিনি নিজের পছন্দের লোককে পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি করতে চেয়েছিলেন। ওই দুই নেতা-নেত্রীর বিরোধ অনেক আগে থেকে থাকলেও, তা চরমে ওঠে পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি বাছাইকে ঘিরে। তার জের এখনও চলছে।

তা স্পষ্ট শ্রীপতিবাবুর মন্তব্যেই। শনিবার সন্ধ্যায় তিনি অভিযোগ করেন, ‘‘অনাস্থা প্রস্তাব এসেছে নিয়তিদেবীর মদতেই। দেখা যাক কতদূর এগোয়।’’ আর নিয়তিদেবীর সংক্ষিপ্ত জবাব, ‘‘পঞ্চায়েত সমিতিতে অনাস্থা এসেছে না কি? জানি না তো।’’ তাঁর সম্পর্কে তোলা অভিযোগও খারিজ করে দিয়েছেন তিনি। এই ঘটনায় দলের শীর্ষ নেতৃত্ব অস্বস্তিতে। দলের জেলা সভাপতি তথা মন্ত্রী শান্তিরাম মাহাতোর প্রতিক্রিয়া, ‘‘এমনটা হওয়া উচিত নয়। যদি হয়ে থাকে, তাহলে ব্যবস্থা নেব।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

No-Confidence Manbazar Panchayat Samiti
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE