বন্ধ এটিএমের সামনে লাইন এখনও রয়েছে। পুরুলিয়ায় নিজস্ব চিত্র।
ক’দিন ধরে ব্যাঙ্ক আর বাড়ি যাতায়াত করেছেন ঝালদার বাসিন্দা সঞ্জীব সিংহ দেও। কিন্তু দাদুর শ্রাদ্ধানুষ্ঠানের খরচের সব টাকা তুলতে পারেননি। কী ভাবেই বা পারবেন? নোট বাতিলের পরে ৫০ দিন হয়ে গেল, কিন্তু সপ্তাহে ব্যাঙ্ক থেকে টাকা তোলার সর্বোচ্চ পরিমাণ সেই ২৪ হাজারেই যে বাঁধা!
আজ বৃহস্পতিবার ও শুক্রবার সঞ্জীববাবুর দাদুর পারলৌকিক কাজ রয়েছে। বুধবার তিনি আক্ষেপ করতে করতে বলেন, ‘‘দু’দিনের ভোজের খরচ, শ্রাদ্ধের আয়োজন, পোশাক-আশাকের খরচ মিলিয়ে লাখ দুয়েক টাকা প্রয়োজন। কিন্তু তিনদিন ধরে ব্যাঙ্কে গিয়ে আমি মোটে ২৪ হাজার টাকা তুলতে পেরেছি। এখন পরিচিতজনদের কাছ থেকে চেয়েচিন্তে অনুষ্ঠান পার করা ছাড়া গতি নেই দেখছি।’’ তিনি জানান, বিয়েতে কার্ড দেখালে আড়াই লক্ষ টাকা দেওয়ার নিয়ম হয়েছে। কিন্তু শ্রাদ্ধের ক্ষেত্রে সেই নিয়ম খাটবে না কেন? এ ক্ষেত্রেও তো কম খরচ হয় না। নিমন্ত্রিতদের তালিকাও ছোট করে সামাল না দেওয়ায় বাধ্য হয়ে তিনি মেনুতে কাটছাঁট করেছেন। তাঁর কথায়, ‘‘দাদুর শ্রাদ্ধে লোকজনকে যে ভাবে আপ্যায়ন করার ইচ্ছা ছিল, তা নোট বাতিলের চক্করে করতে পারছি না।’’ ওই ব্যাঙ্ক কর্তৃপক্ষ জানাচ্ছেন, ব্যাঙ্কে চাহিদার তুলনায় টাকার অভাব এখনও রয়েছে। নিয়ম মেনে তাঁকে যত টাকা দেওয়া দরকার, ততটা দেওয়া হয়েছে।
কোতুলপুরের বাগডোবা গ্রামের বাসিন্দা তারাপদ গড়াই নিজের সাড়ে আট বিঘা জমিতে ধান ও তিন বিঘা জমিতে শাঁকালু চাষ করে বিপাকে পড়েছেন। তিনি জানান, নোট বাতিলের পরে এলাকার লোকজনের কাছে টাকা ধার করে জমির ধান কাটিয়েছেন। কিন্তু বাজারে নগদের অভাবের জেরে ব্যবসায়ীরা এখন ধান কিনতে চাইছেন না। ভেবেছিলেন শাঁকালু বিক্রি করে কিছুটা রোজগার করবেন। কলকাতার বিভিন্ন মার্কেটের ব্যবসায়ীদের সঙ্গে তাঁর যোগাযোগ রয়েছে। কিন্তু ওই ব্যবসায়ীরা জানিয়ে দিয়েছেন, বাতিল নোটে মাল দিলে তবেই তাঁরা কারবার করবেন। মাত্র এক বিঘা জমির শাঁকালু স্থানীয় বাজারে কোনওরকমে বিক্রি করতে পারলেও বাকি ফসল জমিতেই পড়ে রয়েছে। তারাপদবাবু বলেন, “ব্যাঙ্কের টাকায় ধার মিটিয়ে সংসার চলছে। জমির ফসল বিক্রি করতে না পারলে আর সংসার চালানো যাবে না।”
ওন্দার শুকলাই গ্রামের বাসিন্দা অমিয় গোস্বামীর স্ত্রীর গলব্লাডারে অস্ত্রোপচারের জন্য অন্তত ৩৫ হাজার টাকার প্রয়োজন। তাঁর কথায়, “ব্যাঙ্ক থেকে কোনও সপ্তাহে দু’হাজার, কোনও সপ্তাহে চার হাজারের বেশি টাকা তোলা যাচ্ছে না। টাকার অভাবে অপারেশন করাতে পারছি না।”
সঙ্কটে ব্যবসায়ীরাও। ঝালদার ব্যবসায়ী জয়দেব সাউ থেকে বাঁকুড়া শহরের স্টেশনারি ব্যবসায়ী কাশীনাথ কুণ্ডুদের প্রশ্ন, ‘‘কবে সমস্যা কাটবে? এ ভাবে তো চলে না!’’ এতদিন পরেও কেন জনজীবন স্বাভাবিক হচ্ছে না, সেই প্রশ্ন তুলছেন আমজনতা।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy