Advertisement
১৮ এপ্রিল ২০২৪

হেলমেট ছাড়াই বিকোচ্ছে তেল, পুরুলিয়া পরাচ্ছে, পিছিয়ে বাঁকুড়া

হেলমেট সংক্রান্ত আইনকানুন খাতায় কলমে অনেক দিন ধরেই ছিল। সম্প্রতি মুখ্যমন্ত্রীর ‘নো হেলমেট, নো পেট্রোল’ নীতির দৌলতে কড়া হয়েছে পুলিশ। কিন্তু আইন থেকেও না থাকায় মোটরবাইক চালকদের যে অভ্যাস হয়ে গিয়েছিল তা কাটানো যে চট করে সম্ভব নয়, সে কথা বিলক্ষণ টের পাচ্ছে পুলিশ।

‘নো হেলমেট, নো পেট্রোল’ সরকার স্লোগান দিলেও বিষ্ণুপুরে অন্য ছবি। শুক্রবার তোলা নিজস্ব চিত্র।

‘নো হেলমেট, নো পেট্রোল’ সরকার স্লোগান দিলেও বিষ্ণুপুরে অন্য ছবি। শুক্রবার তোলা নিজস্ব চিত্র।

নিজস্ব সংবাদদাতা
আদ্রা ও বাঁকুড়া শেষ আপডেট: ২৪ সেপ্টেম্বর ২০১৬ ০২:০৮
Share: Save:

হেলমেট সংক্রান্ত আইনকানুন খাতায় কলমে অনেক দিন ধরেই ছিল। সম্প্রতি মুখ্যমন্ত্রীর ‘নো হেলমেট, নো পেট্রোল’ নীতির দৌলতে কড়া হয়েছে পুলিশ। কিন্তু আইন থেকেও না থাকায় মোটরবাইক চালকদের যে অভ্যাস হয়ে গিয়েছিল তা কাটানো যে চট করে সম্ভব নয়, সে কথা বিলক্ষণ টের পাচ্ছে পুলিশ। দুই জেলার পুলিশ কর্তারা জানান, এই পরিস্থিতিতে তাঁরা যেমন সচেতনতার জন্য প্রচার চালাচ্ছেন, তেমনই কড়া হাতে বুঝিয়ে দেওয়া হচ্ছে, এ বার থেকে আর সহজে ছাড় মিলবে না। তবে তার ফল পুরুলিয়াতে মিললেও বাঁকুড়া জেলা এখনও পথ সচেতনতায় বেশ কয়েক কদম পিছিয়ে রয়েছে বলে জেলার বিভিন্ন এলাকার বাসিন্দাদের দাবি।

সম্প্রতি ঝাড়খণ্ড থেকে মোটরবাইক চালিয়ে আসা চার যুবককে হেলমেট না থাকায় পুরুলিয়া শহরের ভিক্টোরিয়া স্কুল মোড়ের সামনে আটকায় পুলিশ। কিন্তু তারা পুলিশকর্মীদের সঙ্গে বচসা জুড়ে করে দেয়। এক প্রস্ত হাতাহাতিও হয়। ওই চার যুবককে গ্রেফতার করে আদালতে তোলে পুলিশ। বিচারক জেল হাজতের নির্দেশ দেন। এই ধরনের কড়াকড়িতে ভালই ফল মিলছে বলে দাবি জেলার পুলিশ আধিকারিকদের।

‘নো হেলমেট, নো পেট্রোল’ নীতি ঘোষণার পরপরই পুরুলিয়ায় চালু হয়ে গিয়েছিল। পুরুলিয়ার পুলিশ সুপার রুপেশ কুমার বলেন, ‘‘দুর্ঘটনায় প্রাণহানি ও অন্য ক্ষতি এড়াতে দু’টি পন্থা নেওয়া হয়েছে। এক দিকে যেমন প্রতিটি থানাই প্রচার চালাচ্ছে, অন্যদিকে হেলমেটবিহীন মোটরবাইক আরোহীদের বিরুদ্ধে মামলা করে জরিমানা আদায় করা হচ্ছে।’’ পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, অগস্ট মাসেই জেলার বাইশটি থানা ও পুরুলিয়া শহরের ট্রাফিক থানা হেলমেট ছাড়া মোটরবাইক চালানোর জন্য ৪৬৮৬টি মামলা রুজু করেছে। শুধু পুরুলিয়ার ট্রাফিক থানাই মামলা করেছে ১১৯১টি। ড্রাইভিং লাইসেন্স না থাকা-সহ অন্য বিভিন্ন অভিযোগ মিলিয়ে জেলায় অগস্ট মাসে রুজু হওয়া মামলার সংখ্যাটা প্রায় পাঁচ হাজারের কাছাকাছি। জরিমানা বাবদ আদায় হয়েছে পাঁচ লক্ষ সাতাত্তর হাজার টাকারও কিছু বেশি।

শুরু থেকেই কড়াকড়ির পাশাপাশি সচেতনতার জন্য বিভিন্ন পদ্ধতি নিয়েছে এই জেলার পুলিশ। কোনও কোনও থানা এলাকায় হেলমেট ছাড়া আরোহীদের ধরে তাঁদের বাড়িতে ফোন করে পরিজনদের সচেতন করা হয়েছে। জেলার বিভিন্ন ক্লাবগুলিকে সচেতনতা প্রচারের কাজে লাগানো হচ্ছে। পুলিশ আধিকারিকদের একাংশের দাবি, পুলিশ বোঝাতে গেলে অনেকে সেটাকে কর্তব্য ভেবে লঘু ভাবে নেন। কিন্তু ক্লাবের চেনা সদস্যেরা বললে সেই একই কথার গ্রহণযোগ্যতা এক ধাক্কায় অনেকটা বেড়ে যায়। পাশাপাশি সচেতনতার প্রচার করতে গিয়ে অল্পবয়সী ক্লাব সদস্যদের নিজেদের মধ্যেও সচেতনতা গড়ে ওঠে। এই জেলায় স্কুলপড়ুয়া এবং বেশ কিছু স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের সদস্যেরাও পথে নেমে হেলমেটবিহীন মোটরবাইক আরোহীদের ফুল এবং চকোলেট দিয়ে সচেতনতার বার্তা দিয়েছেন। নরমে গরমে বার্তা দিয়ে হাতেনাতে ফল মিলেছে বলে পুরুলিয়া জেলা পুলিশের কর্তাদের একাংশের দাবি।

পুরুলিয়ার পুলিশ সুপার জানান, প্রতিটি পেট্রোল পাম্পে ‘নো হেলমেট, নো পেট্রোল’ প্ল্যাকার্ড টাঙানোর বন্দোবস্ত করা হয়েছে। হেলমেট ছাড়া যাতে তেল না মেলে তাও এক প্রকার নিশ্চিত করা হয়েছে। তাঁর দাবি, গত একমাসে ধারাবাহিক ভাবে এই কাজগুলি করার ফলে জেলার মোটরবাইক আরোহীদের মধ্যে হেলমেট পরার অভ্যাস গড়ে উঠতে শুরু করেছে। সেই দাবির সমর্থন মিলেছে জেলার বেশ কিছু এলাকার বাসিন্দাদের কথাতেও। যেমন, আদ্রা-রঘুনাথপুর রাস্তার একটি এলাকায় নিয়মিত নজরদারি করে জরিমানা করে পুলিশ। ওই এলাকার বাসিন্দারা জানান, হেলমেট ছাড়া মোটরবাইক চালাতে আজকাল কাউকেই প্রায় দেখেন না তাঁরা।

বাঁকুড়ার ছবিটা বেশ অন্য রকমের। পেট্রোল পাম্পের বাইরে বড় বড় করে ‘নো হেলমেট, নো পেট্রোল’ লেখা থাকলেও অধিকাংশ ক্ষেত্রেই অনায়াসেই হেলমেট ছাড়া তেল মিলে যাচ্ছে। খাস মাচানতলা মোড়ের কিছু পাম্পের কর্মীরা অবশ্য এক ধাপ সচেতন হয়েছেন। হেলমেট ছাড়া এলে বলছেন পেট্রোল মিলবে না। তবে ফিরে যেতেও হচ্ছে না ক্রেতাকে। কর্মীরাই পাম্পে রাখা হেলমেট দিচ্ছেন। সেটি হাতে ধরে রাখলেই তেল মিলে যাচ্ছে। ওই পাম্পের এক কর্মীর কথায়, ‘‘পাশের পাম্পেই হেলমেট ছাড়া তেল মিলছে। আমরা না দিলে সবাই সেখানে চলে যাচ্ছে। খদ্দের ফিরিয়ে আমরা খামোখা লোকসান করব কেন?’’ জেলার বেশ কিছু পাম্পের কর্মীদের দাবি, পুলিশ যতক্ষণ না কড়া হচ্ছে, ততক্ষণ সহজে সচেতনতার ফল ফলবে না।

তবে এই জেলায় হেলমেট নিয়ে কড়কড়ি শুরু হয়েছে পুরুলিয়ার তুলনায় মাসখানেক পরে। চলতি মাস থেকে খাতায় কলমে জেলার পেট্রোলপাম্পগুলিতে ‘নো হেলমেট, নো পেট্রোল’ নীতি চালু হয়েছে। জেলা পুলিশ সুপার সুখেন্দু হীরা জানান, জেলার প্রতিটি পেট্রোল পাম্পকে কড়া নির্দেশ দেওয়া হয়েছে, হেলমেট ছাড়া আরোহী এলে মোটরবাইকে তেল দেওয়া চলবে না। সমস্ত পাম্পে সিসিটিভি বসাতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। তিনি জানান, পুলিশ মাঝেমধ্যেই সিসিটিভি ফুটেজ খতিয়ে দেখবে নিয়ম মানা হচ্ছে কি না। কিন্তু কড়াকড়ির শুরুতেই হেলমেট ফাঁকি দিয়ে তেল মেলা নিয়ে প্রশ্ন তুলতে শুরু করেছেন বাঁকুড়া ও বিষ্ণুপর শহরের অনেক বাসিন্দা। তাঁদের আশঙ্কা, কয়েক মাস পরে ছবিটা আরও ঢিলেঢালা হয়ে যাবে। পুলিশ সুপার বলেন, ‘‘আমার কাছে এখনও কোনও অভিযোগ আসেনি। তবে বিষয়টি নিয়ে খোঁজ নিচ্ছি। থানাগুলিকে পাম্পের উপর আরও বেশি করে নজর রাখার নির্দেশ দেব।”

জেলার বিভিন্ন সড়কে এখনও বহু চালককে হেলমেট ছাড়াই মোটরবাইক চালাতে দেখা যাচ্ছে। পুলিশেরই একাংশের দাবি, গত কয়েক মাসে হেলমেট পরার প্রবণতা কিছুটা বাড়লেও সবাই এখনও সতর্ক হননি। পুলিশ সুপার বলেন, “জেলার বিভিন্ন এলাকায় হেলমেটবিহীন মোটরবাইক চালকদের ধরে জরিমানা করা হচ্ছে। মানুষকে সচেতনও করা হচ্ছে।’’

কিছু দিনের মধ্যেই বাঁকুড়াতেও সচেতনতার ফল ফলবে বলে আশাবাদী এই জেলার পুলিশ কর্তারা।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

helmet accidents
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE