Advertisement
E-Paper

ফোনে ঢাকা ট্রেনের শব্দ, মৃত্যু ছাত্রের

মঙ্গলবার ভোরে মুরারই থানার রাজগ্রাম স্টেশনে লাইন পেরোতে গিয়ে এক মহিলা ট্রেনের ধাক্কায় মারা যান।

অপূর্ব চট্টোপাধ্যায়

শেষ আপডেট: ২৮ ফেব্রুয়ারি ২০১৮ ০১:৪১

কেউ বলছেন ‘ভয়ঙ্কর ঝুঁকি’, কেউ বলছেন ‘পাগলামি’— সোমবার রাতে নলহাটি স্টেশনের কাছে অশোকপল্লি ও ছায়াপল্লির মধ্যে রেলসেতুতে লাইনে বসে মোবাইলে মগ্ন তিন বন্ধুর পরিণতি নিয়ে এমনই কথা ঘুরছে জেলায়। ওই ঘটনায় জখম এক কিশোরের মৃত্যু হয়েছে। অন্য দু’জনের মধ্যে এক জনের অবস্থাও আশঙ্কাজনক। মঙ্গলবার ভোরে মুরারই থানার রাজগ্রাম স্টেশনে লাইন পেরোতে গিয়ে এক মহিলা ট্রেনের ধাক্কায় মারা যান।

প্রাণের ঝুঁকি রয়েছে জেনেও এমন কাজের জন্য সোশ্যাল নেটওয়ার্কিং সাইটে তরুণ প্রজন্মের আসক্তিকেই দায়ী করছেন অনেকে। কয়েক দিন আগে দমদমের কাছে এ ভাবেই রেল লাইনে বসে শর্ট ফিল্মের শ্যুটিং করতে গিয়ে ট্রেনের ধাক্কায় মৃত্যু হয়েছিল দুই কিশোরের। বরাতজোরে বেঁচে যায় তাদের এক বন্ধু।

গত রাতে নলহাটির ওই দুর্ঘটনায় মৃত্যু হয় কাজী মহম্মদ সরিফউদ্দিনের (১৭)। ডাকনাম সুমন। নলহাটি হরিপ্রসাদ হাইস্কুলের ছাত্র ছিল। এ বছরই উচ্চমাধ্যমিক দেওয়ার কথা ছিল তার। সুমনের বন্ধু অর্পণ মজুমদার একই স্কুলে তার সহপাঠী। প্রিয়ব্রত মজুমদার ওই স্কুলেরই মাধ্যমিক পরিক্ষার্থী। অর্পণ আর প্রিয়ব্রত খুড়তুতো ভাই।

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন, ধাক্কা দেওয়ার পর রামপুরহাটমুখী একটি মালগাড়ির ইঞ্জিন লাইনের উপর অনেকটা টেনে নিয়ে যায় সুমনকে। বাকি দু’জন ট্রেনের ধাক্কায় ছিটকে রেলসেতুর নীচে পুকুরের পাশে পড়ে যায়। ‘বাঁচাও বাঁচাও’ চিৎকার শুনে এলাকাবাসী তিন জনকে উদ্ধার করে রামপুরহাট হাসপাতালে পাঠান। পরে সুমনকে বর্ধমান মেডিক্যাল কলেজে স্থানান্তরিত করার সময় সাঁইথিয়ার কাছে তার মৃত্যু হয়। অবস্থা আশঙ্কাজনক হওয়ায় অর্পণকে পরে বর্ধমান মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখান থেকে পরিজনেরা তাকে উন্নত চিকিৎসার জন্য কলকাতায় নিয়ে যাওয়ার ব্যবস্থা করেছেন। প্রিয়ব্রতকে রামপুরহাট হাসপাতাল থেকে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে।

দুর্ঘটনার খবর পেয়ে সুমনদের বন্ধুরা রাতেই রামপুরহাট হাসপাতালে পৌঁছয়। তারা জানায়, আগে কোনও দিন ওই রেলসেতুতে যায়নি সুমনরা কেউ-ই। স্থানীয় বাসিন্দারাও জানিয়েছেন, রেলসেতুর নীচের রাস্তায় মোটরসাইকেল, সাইকেল যাতায়াত করলেও, সেতুর উপর কাউকে বসে থাকতে তেমন একটা দেখা যায় না।

সুমনের খুড়তুতো দাদা মহম্মদ ফসিমউদ্দিন জানান, ১১ বছর আগে সুমনের বাবা মারা গিয়েছেন। মা সংসার টেনে ছেলেকে পড়াশোনা করাচ্ছিলেন। সোমবার সন্ধেয় নলহাটি শহরের ১ নম্বর ওয়ার্ডের গোপালপুরে সুমনদের মেলা দেখতে যাওয়ার কথা ছিল। সে জন্য সব বন্ধুরা রেলসেতুর নীচে দেখা করে। প্রত্যক্ষদর্শীদের কয়েক জন অবশ্য জানিয়েছেন, রেল লাইনের উপরে বসেছিল সুমনরা। তিন জনেই মোবাইল ফোনে গান শুনছিল। ট্রেনের আওয়াজ তা-ই তারা পায়নি।

সোমবার সন্ধেয় ওই দুর্ঘটনার পরও অবশ্য সচেতনার ছবিটা একেবারেই বদলায়নি নলহাটি স্টেশনের সামনে রেললাইনে। লাইনের উপরই ফলের পসরা নিয়ে বসেছিলেন কয়েক জন দোকানি। অন্য দিনের মতো লোহাপুর স্টেশনে রেললাইনের উপর বসে বাজারও। রামপুরহাট স্টেশনে ট্রেন আসতে দেখেও ছেলেকে নিয়ে মহিলাদের লাইন পেরতে দেখা গিয়েছে।

মোবাইল ফোনে ব্যস্ত হয়ে রেল লাইন পারাপার না করার জন্য স্টেশনে স্টেশনে প্রচার করা হয় বলে জানিয়েছে রেল পুলিশ। তবুও সাধারণ মানুষ সতর্ক হচ্ছে না বলে অভিযোগ রেলকর্তাদের।

মুরারই: রেললাইন পার হতে গিয়ে ট্রেনের ধাক্কায় মৃত্যু হল এক মহিলার। মঙ্গলবার ভোরে দুর্ঘটনাটি ঘটে মুরারই থানার রাজগ্রাম স্টেশনে। রেলপুলিশ সূত্রে জানা যায়, মৃতার নাম সুকরুণ বিবি (৪২)। বাড়ি মুরারই থানার মহুরাপুর এলাকায়। রেলপুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, ওই মহিলা একটি ট্রেন থেকে নেমে ওভারব্রিজ দিয়ে না গিয়ে প্লাটফর্ম পেরিয়ে রেলগেটের কাছে টোটো ধরতে যাচ্ছিলেন। সেই সময় ভাগলপুরগামী বনাঞ্চল এক্সপ্রেস চলে আসে। ধাক্কায় ছিটকে যান। স্থানীয় বাসিন্দাদের অনুমান, কুয়াশার জন্য ওই মহিলা ট্রেনটিকে দেখতে পাননি।

Train Accident Death Student
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy