Advertisement
২৪ এপ্রিল ২০২৪

দোরগোড়ায় নদী, রাতের ঘুম উবেছে ভল্লাপাড়ার

দোরগোড়ায় দাঁড়িয়ে ফুঁসছে নদী। যে কোনও সময় পাড় ভেঙে গ্রাস করে নিতে পারে ঘর গেরস্থালি। তাই দুশ্চিন্তায় রাতের ঘুম উবে গিয়েছে ময়ূরেশ্বরের উলকুণ্ডা ভল্লাপাড়ার বাসিন্দাদের।

পাড়ের কাছে ফুঁসছে নদী। (ডান দিকে) অরক্ষিত ঘরবাড়ি। ছবি: অনির্বাণ সেন।

পাড়ের কাছে ফুঁসছে নদী। (ডান দিকে) অরক্ষিত ঘরবাড়ি। ছবি: অনির্বাণ সেন।

নিজস্ব সংবাদদাতা
ময়ূরেশ্বর শেষ আপডেট: ২৩ অগস্ট ২০১৬ ০০:৫৯
Share: Save:

দোরগোড়ায় দাঁড়িয়ে ফুঁসছে নদী। যে কোনও সময় পাড় ভেঙে গ্রাস করে নিতে পারে ঘর গেরস্থালি। তাই দুশ্চিন্তায় রাতের ঘুম উবে গিয়েছে ময়ূরেশ্বরের উলকুণ্ডা ভল্লাপাড়ার বাসিন্দাদের। এই পরিস্থিতির জন্য প্রশাসনের উদাসীনতাকেই দায়ী করেছেন তাঁরা। তাঁদের অভিযোগ, পাড় ভাঙতে ভাঙতে নদী কার্যত তাদের বাড়ির দরজায় পৌঁছে গিয়েছে। কিন্তু প্রশাসনের সকল স্তরে জানিয়েও নদীর পাড় বাঁধানোর কোনও ব্যবস্থা হয়নি। ফলে নদীতে জল বাড়লেই তাঁদের রাতের ঘুম উবে যায়। এমনিতেই দু’দিন ধরে কুল ছাপিয়ে বইছে নদী। তার উপরে ভারী বর্ষণ জনিত কারণে সর্তকতা জারি করেছে প্রশাসন। আর তাতেই আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে ওই পাড়ায়।

এই আতঙ্ক অবশ্য ওই পাড়ায় প্রথম নয়। ওই পাড়ার প্রান্ত ছুঁয়ে বয়ে গিয়েছে ময়ূরাক্ষী নদী। নদীর পাড় লাগোয়া ওই পাড়ায় ২৬টি পরিবারের বাস। অধিকাংশই দিনমজুর। প্রায় সকলেরই কাঁচা বাড়ি। বর্ষা এলেই আতঙ্ক শুরু হয়ে যায় পাড়ার বাসিন্দাদের। কারণ, পাড় ছাপিয়ে অনেক সময় নদীর জলে প্লাবিত হয় তাদের ঘরবাড়ি। তখন ঘরবাড়ি ভেঙে পড়ার আশঙ্কায় বাচ্চাদের নিয়ে মহিলাদের অন্য পাড়ায় উঠে যেতে হয়। আর পুরুষেরা ঠায় রাত জেগে বাড়ি পাহারা দেন। এ বারও তার অন্যথা হয়নি। পাড়ার বধূ অভিলাষী ভল্লা, সনকা ভল্লারা বলছেন, ‘‘এ বারই প্রথম নয়, বন্যায় বাড়ি ভেঙে পড়ার আশঙ্কায় বিয়ে হয়ে আসার পর থেকেই বর্ষার সময় ছেলেমেয়েদের নিয়ে আমাদের অন্যের বারন্দা কিংবা চালাঘরে রাত্রি বাস করতে হয়। প্রশাসন কেবল মাত্র সতর্কবার্তা জারি করেই খালাস। ছেলেমেয়ে, ঘর গৃহস্থালি নিয়ে অন্যত্র উঠে যাওয়া, আবার জল নামলে ফিরে আসার সমস্যা তো তাদের পোহাতে হয় না।’’ স্থানীয় বাসিন্দা মুক্তিপদ ভল্লা, উত্তম ভল্লারা জানান, বারবার জানানো সত্ত্বেও নদীর পাড় বাঁধানোর কোনও ব্যবস্থা করেনি প্রশাসন। তাই বাঁধ ভেঙে যাতে ঘরের সব কিছু ভেসে চলে না যায়, তার জন্য তাঁরা রাত জেগে বাঁধের উপরেই সময় কাটান।

এ দিকে, স্থানীয় বাসিন্দারাই জানিয়েছেন, ‘কান্দি মাস্টার প্ল্যানে’ ওই নদীর পাড় বাঁধানোর কাজ চলছে। কিন্তু ওই পাড়াটুকুই বাদ রেখে সেই কাজ হচ্ছে বলে তাঁদের অভিযোগ। স্থানীয় বাসিন্দা আশিস চন্দ্র, জয়নাল আবেদিনদের ক্ষোভ, ‘‘ওই পাড়ায় নদীবাঁধের কাজ সেই বাম আমল থেকেই উপেক্ষিত রয়েছে। অথচ ওই পাড়ায় বাঁধ ভাঙলে শুধু ২৬টি পরিবারই নয়, গোটা গ্রামের পাশাপাশি বন্যা প্লাবিত হয়ে পড়ে বিস্তীর্ণ এলাকা। কিন্তু প্রশাসনের সেই হুঁশ নেই।’’

সংশ্লিষ্ট উলকুণ্ডা পঞ্চায়েতের প্রধান শামসুর আলম মল্লিক মেনে নিয়েছেন, সত্যিই ওই পাড়ায় নদীবাঁধের অবস্থা শোচনীয়। পঞ্চায়েতের পক্ষে নদীবাঁধ নির্মাণ সম্ভব নয়। তাই ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি আর্কষণ করা হয়েছে। কিন্তু এখনও পর্যন্ত সাড়া মেলেনি বলেই শামসুরের দাবি। সংশ্লিষ্ট ময়ূরেশ্বর ২ বিডিও সৈয়দ মাসুদুর রহমান বলেছেন, ‘‘শুধু ওই পাড়াই নয়, বন্যার আশঙ্কায় নদী তীরবর্তী এলাকার বাসিন্দাদের নিরাপদ দূরত্বে উঠে যেতে বলা হয়েছে। কেন কান্দি মাস্টার প্ল্যানে ওই পাড়ার নদীবাঁধের কাজ হচ্ছে না, তা খোঁজ না নিয়ে কিছু বলতে পারব না। তবে ওই পাড়ার নদীবাঁধের বিষয়টি স্থানীয় বিধায়ককে জানানো হয়েছে।’’ এলাকার তৃণমূল বিধায়ক অভিজিৎ রায়ের আশ্বাস, ‘‘ওই নদীবাঁধের প্রস্তাব সেচ দফতরকে দিয়েছি। আশা করছি ইতিবাচক সাড়া মিলবে।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Mayureswar
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE