Advertisement
২৩ এপ্রিল ২০২৪

পুলিশের চাপে ১০ টাকার কয়েন নিল পেট্রোল পাম্প

মোটরবাইকে তেল ভরা হয়ে গিয়েছে। কিন্তু দাম নিতে গিয়ে চালকের হাতে ১০ টাকার কয়েন দেখে বেঁকে বসেন পেট্রোল পাম্পের কর্মী। কিছুতেই তিনি ওই কয়েন নেবেন না। মোটরবাইক চালকও নাচার। তাঁর পকেটে যে মোটে কয়েকটা ১০ টাকার কয়েনই রয়েছে।

নিজস্ব সংবাদদাতা
বাঁকুড়া শেষ আপডেট: ২৬ নভেম্বর ২০১৬ ০১:৩১
Share: Save:

মোটরবাইকে তেল ভরা হয়ে গিয়েছে। কিন্তু দাম নিতে গিয়ে চালকের হাতে ১০ টাকার কয়েন দেখে বেঁকে বসেন পেট্রোল পাম্পের কর্মী। কিছুতেই তিনি ওই কয়েন নেবেন না। মোটরবাইক চালকও নাচার। তাঁর পকেটে যে মোটে কয়েকটা ১০ টাকার কয়েনই রয়েছে। তাই নিয়েই দু’পক্ষের মধ্যে বেধে গিয়েছিল তুমুল তর্ক। খবর পেয়ে পুলিশ গিয়ে ঝামেলা মেলায়। পুলিশ দেখে সুড়সুড় করে পেট্রোল পাম্পের কর্মীরা সেই ১০ টাকার কয়েনই নিয়ে নেয়।

বৃহস্পতিবার রাতে বিষ্ণুপুর শহরের একটি পেট্রোল পাম্পের এই ঘটনা ফের বুঝিয়ে দিল, ১০ টাকার কয়েন নিয়ে বাজারে সাধারণ মানুষের ভোগান্তি চলছেই। পাম্পে ওই কয়েন চালাতে গিয়ে পাম্প কর্তৃপক্ষের সঙ্গে বিবাদে জড়িয়া পড়া ওই গ্রাহক তাপস নন্দী ওন্দার রামসাগরের মৌচুড়া এলাকার বাসিন্দা। তিনি জানান, জরুরি কাজে মোটরবাইক নিয়ে তিনি বিষ্ণুপুরে এসেছিলেন। গাড়ির তেল প্রায় শেষ হয়ে গিয়েছিল। কাছে ছিল ছ’টি ১০ টাকার কয়েন। তাই নিয়েই তিনি ৬০ টাকার পেট্রোল ভরাতে গিয়েছিলেন। তেল ভরানোর পরে বিল মেটাতে গিয়েই বিবাদ বাধে। পাম্পের কর্মী ওই কয়েন নিতে সরাসরি অস্বীকার করেন। দু’পক্ষের ঝামেলার খবর কানে যায় বিষ্ণুপুরের এসডিপিও লাল্টু হালদারের। সঙ্গে সঙ্গে তিনি ওই পাম্পে পুলিশ পাঠিয়ে ঝামেলা মেটান। পুলিশের ধমক খেয়ে পাম্প কর্তৃপক্ষ ১০ টাকার কয়েন নেয়। এসডিপিও বলেন, “১০ টাকার কয়েন না নেওয়াটা আইন বিরুদ্ধ ব্যাপার। ওই গ্রাহক লিখিত ভাবে পাম্প কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের করেননি। অভিযোগ পেলে আমরা কড়া ব্যবস্থা নিতাম।”

পুলিশের মধ্যস্থতায় তাপসবাবুর সমস্যাটি মিটে গেলেও বাঁকুড়া জেলার বিভিন্ন এলাকায় দশ টাকার কয়েন নিয়ে নাজেহাল হচ্ছেন সাধারণ মানুষ থেকে ব্যবসায়ী সকলেরই। আসলে বাজারে জাল ১০ টাকার কয়েন চলে আসার গুজবে অনেকেই মনে করছেন ওই মুদ্রা অচল হয়ে গিয়েছে। একই সঙ্গে রটেছে, সেগুলিও ৫০০ ও ১,০০০ টাকার নোটের মতোই বাজার থেকে তুলে নেওয়া হবে। এর জেরেই তীব্র বিভ্রান্তি তৈরি হয়েছে সব পক্ষের মধ্যেই। কিন্তু শীর্ষ ব্যাঙ্ক খুব স্পষ্ট ভাবেই জানিয়ে দিয়েছে, ওই মুদ্রা বাতিলের অভিযোগ সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন। এটা স্রেফ গুজবই।

এ দিকে বিভিন্ন ব্যাঙ্ক থেকে খুচরো সমস্যা মেটাতে গ্রাহকদের এখন ১০ টাকার কয়েন দেওয়া হচ্ছে। এতে বাজারে এই কয়েন আরও ছড়িয়ে পড়ছে। তবে সাধারণ মানুষের ভ্রান্ত ধারণার জেরে এই কয়েন চালাতে হিমশিম হচ্ছেন অনেকেই। বিষ্ণুপুরের ওই পেট্রোল পাম্পের মালিক বলেন, “১০ টাকার কয়েন নিতে আমার কোনও আপত্তিই নেই। কিন্তু ওই কয়েন যখন অন্যদের দিতে যাচ্ছি, তখন তাঁরাই তো নিতে চাইছেন না। ফলে আমি সমস্যায় পড়ে যাচ্ছি।” অল ইন্ডিয়া ডিজেল পেট্রোলিয়াম অ্যাসোসিয়েশনের বাঁকুড়া জেলা কমিটির অন্যতম সদস্য তাহির আলি বলেন, “গুজবের জেরেই এই সমস্যা সৃষ্টি হচ্ছে। এ নিয়ে মানুষকে সচেতন করতে প্রশাসনের হস্তক্ষেপ করা দরকার।”

মানুষকে সচেতন করতে কী করা যায় তা নিয়ে জেলার ব্যাঙ্কগুলির কর্মকর্তাদের সঙ্গে আলোচনা করার আশ্বাস দিয়েছেন জেলাশাসক মৌমিতা গোদারা বসু। তিনি বলেন, “একটা ভ্রান্ত ধারণা থেকেই এই সমস্যা হচ্ছে বলে শুনেছি। কিন্তু এ নিয়ে সুনির্দিষ্ট অভিযোগ কিছু পাইনি। তবে কী ভাবে সচেতনতা বাড়ানো যায়, তা ব্যাঙ্কগুলির সঙ্গে আলোচনা করব।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

10 rupees coin Police Petrol pump
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE