Advertisement
১৯ এপ্রিল ২০২৪

পুজো মিটতেই ব্যস্ত বিষ্ণুপুরের ‘রাবণদা’

পুজো মিটলে তাঁর যেন দম ফেলার ফুরসত থাকে না। এক বার এ পাড়া, তো ঘণ্টাখানেক পরে অন্য পাড়ায় সাইকেল নিয়ে ছুটতে হচ্ছে তাঁকে। বছরের পর বছর রাবণ তৈরি করতে করতে বিষ্ণুপুর পুরসভার অস্থায়ী কর্মী নারায়ণ গোস্বামীর নামই হয়ে গিয়েছে ‘রাবণদা’। 

তালে: পোড়ামাটির হাটে, জোড় শ্রেণির মন্দির প্রাঙ্গণে। শনিবার। নিজস্ব চিত্র

তালে: পোড়ামাটির হাটে, জোড় শ্রেণির মন্দির প্রাঙ্গণে। শনিবার। নিজস্ব চিত্র

শুভ্র মিত্র
বিষ্ণুপুর শেষ আপডেট: ২১ অক্টোবর ২০১৮ ০৩:৫৭
Share: Save:

পুজো মিটলে তাঁর যেন দম ফেলার ফুরসত থাকে না। এক বার এ পাড়া, তো ঘণ্টাখানেক পরে অন্য পাড়ায় সাইকেল নিয়ে ছুটতে হচ্ছে তাঁকে। বছরের পর বছর রাবণ তৈরি করতে করতে বিষ্ণুপুর পুরসভার অস্থায়ী কর্মী নারায়ণ গোস্বামীর নামই হয়ে গিয়েছে ‘রাবণদা’।

শনিবার সকালে শহরের নিমতলায় রঘুনাথজিউ মন্দিরে জড়ো হওয়া কচিকাঁচারা তাঁকে দেখেই চিৎকার করে ওঠে— ‘‘ওই তো রাবণদা চলে এসেছে।’’ সাইকেলটা রেখে নারায়ণবাবু লেগে পরলেন রাবণ তৈরি করতে। তার আগে থেকেই কাজে নেমেছিলেন তাঁর সাগরেদ দিলীপ লোহার, তপন লোহার, তিনকড়ি লোহাররা। নারায়ণবাবুকে দেখে স্বস্তি এল তাঁদের মধ্যেও।

‘রাবণ’ ডাকে রাগ আসে না? এক গাল হেসে নারায়ণবাবু বলেন, ‘‘বিষ্ণুপুর তো আমাকে ওই নামেই চেনে। ৩০ বছর ধরে রাবণ তৈরি করছি। বৈষ্ণবপাড়ার নারায়ণকে লোক ভুলে গিয়েছে। তাই ডাকটা শুনলে আনন্দই পাই।’’ এই ক’দিন তিনি নিরামিষ খেয়ে, শুদ্ধ কাপড়ে রাবণ তৈরি করেন। খড়ের উপর শ্যামবাঁধ, গাঁতাস বাঁধের মাটি দিয়ে রাবণ তৈরি করেন। গরান কাঠের মুখ তৈরি হয়। রবিবার রাতে এই রাবণই বধ করবে হনুমান। এটাই এখানকার দীর্ঘদিনের রীতি।

এই শহরের আর এক প্রথা রাবণকাটা নাচ। বিজয়া থেকে শুরু হয়েছে রাঢ় বাংলার এই প্রাচীন লোক-উৎসব। দ্বাদশীর দিন রাবণবধের পরে তা শেষ হবে। হনুমান, জাম্বুবান, সুগ্রীব আর বিভীষণের সাজে ঝাড়খণ্ডী বাজনার সঙ্গে তিন দিন ধরে শহর পরিভ্রমণে বেড়িয়েছে। ‘‘সারা বছরের বাঁচার রসদ তুলে নিই হনুমান, জাম্বুবান সেজে।’’— বলছিলেন তথ্য ও সংস্কৃতি দফতর থেকে লোকশিল্পীর সম্মান পাওয়া নারায়ণ বারিক, রঞ্জিৎ গড়াই, মিঠুন লোহার, সুকুমার বারিকরা।

তাঁরা জানান, লোক-সংস্কৃতি দফতর থেকে ইদানীং শিল্পী ভাতা পাচ্ছেন। এ ছাড়া সারা বছর ধরে তাঁরা তথ্য ও সংস্কৃতি দফতর থেকে অনুষ্ঠানের ডাক পান। ঝাড়খণ্ডী বাজনা টিকারা বাজানোর ফাঁকে সুকুমার ধাড়া, শ্যামাপদ পণ্ডিত বলেন, ‘‘শহর ঘোরার ফাঁকে গৃহস্থদের আপ্যায়ণ যাবতীয় পরিশ্রম ভুলিয়ে দেয়।’’ বিষ্ণুপুর মহকুমা তথ্য ও সংস্কৃতি আধিকারিক রামশঙ্কর মণ্ডল বলেন, ‘‘বাদ্যযন্ত্র শিল্পী ও নৃত্য শিল্পী মিলে ন’জন রাবণ কাটা দলের লোকশিল্পী নিয়মিত ভাতা পান। নিয়মিত অনুষ্ঠানও দেওয়া হয় তাঁদের।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Artist Bishnupur Village Mask Dance
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE