Advertisement
২০ এপ্রিল ২০২৪

রাজ্য সড়কে যাওয়ার রাস্তা নেই, অবরোধ হিড়বাঁধে

মূল সড়ক থেকে গ্রামে যাওয়ার কোনও রাস্তা নেই। তাই গ্রামের মানুষকে প্রতিদিন জমির আলপথ ডিঙিয়ে, নদী পেরিয়ে যাতায়াত করতে হয়। বারবার প্রশাসনের কাছে আবেদন জানিয়েও রাস্তা তৈরি না হওয়ায় শেষে রাজ্য সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ দেখালেন বাঁকুড়ার হিড়বাঁধ ব্লকের শ্যামপুর গ্রামের বাসিন্দারা। রাস্তার দাবিতে মঙ্গলবার সকাল ৭ টা থেকে বহড়ামুড়ি গ্রামের কাছে শিলাবতী নদীর সেতুর সামনে টানা চার ঘণ্টা বাঁকুড়া-খাতড়া ৯ নম্বর রাজ্য সড়ক অবরোধ করে রাখেন।

পথ অবরোধে সামিল গ্রামের ছেলেমেয়েরাও। — নিজস্ব চিত্র।

পথ অবরোধে সামিল গ্রামের ছেলেমেয়েরাও। — নিজস্ব চিত্র।

নিজস্ব সংবাদদাতা
হিড়বাঁধ শেষ আপডেট: ০৮ এপ্রিল ২০১৫ ০১:৪২
Share: Save:

মূল সড়ক থেকে গ্রামে যাওয়ার কোনও রাস্তা নেই। তাই গ্রামের মানুষকে প্রতিদিন জমির আলপথ ডিঙিয়ে, নদী পেরিয়ে যাতায়াত করতে হয়। বারবার প্রশাসনের কাছে আবেদন জানিয়েও রাস্তা তৈরি না হওয়ায় শেষে রাজ্য সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ দেখালেন বাঁকুড়ার হিড়বাঁধ ব্লকের শ্যামপুর গ্রামের বাসিন্দারা। রাস্তার দাবিতে মঙ্গলবার সকাল ৭ টা থেকে বহড়ামুড়ি গ্রামের কাছে শিলাবতী নদীর সেতুর সামনে টানা চার ঘণ্টা বাঁকুড়া-খাতড়া ৯ নম্বর রাজ্য সড়ক অবরোধ করে রাখেন। অবরোধের জেরে গুরুত্বপূর্ণ ওই রাস্তায় যান চলাচল দীর্ঘক্ষণ বন্ধ থাকে। চরম ভোগান্তির শিকার হন সাধারণ মানুষ থেকে গাড়িচালক। খবর পেয়ে পুলিশ গেলেও অবরোধ ওঠেনি। পরে খাতড়ার মহকুমাশাসক অভিষেক তিওয়ারি, হিড়বাঁধের বিডিও শঙ্খশুভ্র দে অবরোধস্থলে যান। গ্রামবাসীদের সঙ্গে কথা বলে রাস্তা তৈরির ব্যাপারে আশ্বাস দেওয়ার পরে অবরোধ ওঠে।

হিড়বাঁধ ব্লকের বহড়ামুড়ি পঞ্চায়েতের অন্তর্গত এই শ্যামপুর গ্রাম। এই গ্রাম থেকে আড়াই কিলোমিটার দূরে এক দিকে বহড়ামুড়ি, অন্য দিকে গোবিন্দপুর গ্রাম। চারিদিকে ধূ ধূ মাঠ আর জমির মাঝে একচিলতে এই গ্রাম। সব মিলিয়ে শ্যামপুর ৪০টি পরিবারের প্রায় আড়াইশো জনের বসবাস। গ্রাম থেকে দু’কিলোমিটার দূরে চলে গিয়েছে বাঁকুড়া– খাতড়া রাজ্য সড়ক। সমস্যা হল, গ্রাম থেকে রাজ্য সড়ক যাওয়ার রাস্তা নেই। আলপথ দিয়ে ঘুরপথে নদীর পাড় ধরে গিয়ে নদীকে ডিঙিয়ে যাতায়াত করতে হয় গ্রামের মানুষকে। গ্রামবাসীরা জানিয়েছেন, যাতায়াতের রাস্তা না থাকায় চূড়ান্ত অসুবিধায় পড়েছেন তাঁরা। বর্ষাকালে জমির আলপথ পেরিয়ে যাতায়াত করতে গিয়ে কালঘাম ছুটে যায়। রাস্তার জন্য স্থানীয় পঞ্চায়েত থেকে ব্লক প্রশাসনের কাছে গণস্বাক্ষর সংবলিত স্মারকলিপি দেওয়া হয়েছে। তার পরেও রাস্তা তৈরি হয়নি।

এ দিনের রাস্তা অবরোধে সামিল হয়েছিলেন শ্যামপুর গ্রামের শতাধিক বাসিন্দা। তার মধ্যে গ্রামের মহিলা, পড়ুয়ারাও ছিলেন। গ্রামের বাসিন্দা কৃষ্ণপদ গোপ, উমাপদ গোপ বলেন, “বিভিন্ন প্রয়োজনে সব সময়েই গ্রাম থেকে অন্যত্র যেতে হয় আমাদের। রাস্তা না থাকায় মাঠ, জমির আলপথ ধরে যাতায়াত করি। বর্ষার সময় জমিতে ধান লাগানো থাকলে আলপথ ধরে যাতায়াত করাটা দুঃসাধ্য হয়ে ওঠে। পিছল পথে কত জন যে জমিতে আছাড় খেয়ে কাদায় লুটোপুটি খেয়েছে, তার হিসেব নেই।’’ গ্রামবাসীর ক্ষোভ, কিছুদিন আগে বহড়ামুড়ি পঞ্চায়েতে গিয়ে রাস্তার দাবিতে প্রধানকে ঘেরাও করে বিক্ষোভ দেখানো হয়েছিল। তার পরেও পঞ্চায়েত কিছুই করেনি।

গ্রামবাসী কাকলি গোপ, মালতী ঘোষদের আক্ষেপ, “রাস্তা না থাকায় গ্রামের গর্ভবতী মহিলা, শিশু, বয়স্করা অসুস্থ হলে সবচেয়ে বেশি অসুবিধায় পড়েন। গ্রামে গাড়ি না ঢুকতে পারায় গুরুতর অসুস্থদের ডুলিতে চাপিয়ে স্বাস্থ্যকেন্দ্রে নিয়ে যেতে হয়। আড়াই কিলোমিটার দূরের বহড়ামুড়ি হাইস্কুলে পড়তে গিয়ে গ্রামের ছেলেমেয়েরা চূড়ান্ত অসুবিধার সম্মুখীন হচ্ছে। যাতায়াতের ভয়ে অনেকে তাই স্কুলে যেতে চাইছে না।’’

গ্রামবাসীদের অভিযোগকে সমর্থন করে তৃণমূলের হিড়বাঁধ ব্লক সভাপতি ধীরেন মাঝি বলেন, “দীর্ঘদিন ধরে বহড়ামুড়ি পঞ্চায়েত সিপিএমের দখলে রয়েছে। প্রতিটা ভোটের আগেই সিপিএম ওই গ্রামের মানুষকে রাস্তা তৈরির জন্য প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। কিন্তু রাস্তা আর তৈরি করে দেয়নি। এই ঘটনায় প্রমাণিত, উন্নয়নের নামে সিপিএম পরিচালিত পঞ্চায়েত গ্রামের মানুষকে ধাপ্পা দিচ্ছে।’’ বহড়ামুড়ি পঞ্চায়েতের সিপিএম প্রধান সবিতা দেশমুখ অবশ্য রাস্তা তৈরির ব্যাপারে কোনও প্রতিশ্রুতি দেননি বলে দাবি করেছেন। তিনি বলেন, “ওই গ্রামের চারিদিকে উর্বর জমি রয়েছে। জমির মালিক অন্য গ্রামের বাসিন্দারা। এ ক্ষেত্রে তাই রাস্তা তৈরিতে সমস্যা দেখা দিয়েছে। আর ঘুরপথে শিলাবতী নদীর উপরে সেতু তৈরি করে রাস্তা তৈরি করা পঞ্চায়েতের পক্ষে সম্ভব নয়। ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে বিষয়টি জানানো হয়েছে।’’

হিড়বাঁধের বিডিও শঙ্খশুভ্র দে বলেন, “ওই গ্রামে রাস্তার সমস্যা রয়েছে এটা সত্যি। তবে রাজ্য সড়ক থেকে গ্রাম পর্যন্ত জমির মাঝখান দিয়ে রাস্তা তৈরি করে দেওয়ার ক্ষেত্রে সমস্যা রয়েছে। তাই শিলাবতী নদীর উপরে কজওয়ে বা ছোট সেতু তৈরি করে তার দু’দিকে সংযোগকারী রাস্তা তৈরি করার একটা পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। এর জন্য প্রকল্প ব্যয় কত হবে তা দেখে পঞ্চায়েত সমিতি থেকেই এই কাজ করা যায় কিনা, দেখা হচ্ছে। ব্লকের সাব অ্যাসিস্ট্যান্ট ইঞ্জিনিয়ারকে সরেজমিন রাস্তার বিষয়টি দেখে সম্ভাব্য খরচ জানানোর জন্য বলা হয়েছে।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE