Advertisement
২০ এপ্রিল ২০২৪

গাছ বাঁচাতে এককাট্টা

নির্বিচারে কেটে ফেলা হচ্ছিল স্কুল চত্বরের একটি পুরনো বট গাছ। যা দেখে প্রতিবাদে সামিল হলেন কয়েকশো গ্রামবাসী। গাছ কাটতে আসা লোকজনদের আটকে, হুমকি দিয়ে বন্ধ করা হল গাছ কাটা। যদিও ততক্ষণে কেটে ফেলা হয়েছে গাছের বেশির ভাগ ডালপালাই।

গাছের ছায়া থেকে আপাতত বঞ্চিত খুদে পড়ুয়ারা। কেটে ফেলা হয়েছে সব ডালপালা। ছবি: শুভ্র মিত্র।

গাছের ছায়া থেকে আপাতত বঞ্চিত খুদে পড়ুয়ারা। কেটে ফেলা হয়েছে সব ডালপালা। ছবি: শুভ্র মিত্র।

নিজস্ব সংবাদদাতা
ওন্দা শেষ আপডেট: ২৫ অগস্ট ২০১৫ ০০:৩৯
Share: Save:

নির্বিচারে কেটে ফেলা হচ্ছিল স্কুল চত্বরের একটি পুরনো বট গাছ। যা দেখে প্রতিবাদে সামিল হলেন কয়েকশো গ্রামবাসী। গাছ কাটতে আসা লোকজনদের আটকে, হুমকি দিয়ে বন্ধ করা হল গাছ কাটা। যদিও ততক্ষণে কেটে ফেলা হয়েছে গাছের বেশির ভাগ ডালপালাই।

ওন্দা থানার নাকাইজুড়ি এলাকার নাকাইজুড়ি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ঘটনা। স্কুলটিতে প্রায় ৭০ বছরের একটি বট গাছ রয়েছে। স্কুল কর্তৃপক্ষ ও স্থানীয় সূত্রে জানা যাচ্ছে, এক সময় এই স্কুলের প্রধান শিক্ষক মনীন্দ্র সিংহ মহাপাত্র স্কুলের পড়ুয়াদের পরিবেশ সচেতন করতে স্কুলের মধ্যে বটচারা লাগিয়েছিলেন। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে স্কুলের সঙ্গে গাছটির নিবিড় সম্পর্ক গড়ে ওঠে। এই বিরাট বট গাছের ছায়ার তলায় বসে কয়েক দশক আগেও স্কুলের ছাত্রছাত্রীদের পড়াতেন শিক্ষকেরা। বর্তমানে স্কুলের ভবন গড়ে ওঠায় গাছতলায় আর পড়াশোনা না হলেও ছাত্রছাত্রীরা এই গাছের ছায়ার তলায় এখনও খেলাধুলো করে।

নাকাইজুড়ি প্রাথমিক স্কুলের প্রধান শিক্ষক চিন্ময় চট্টোপাধ্যায় জানান, শনিবার সকাল থেকেই একদল লোক করাত, কুড়ুল নিয়ে এসে স্কুল চত্বরের মধ্যে ঢুকে গাছ কাটতে শুরু করে। স্কুল খুলতে এসে বিষয়টি নজরে পড়ে শিক্ষকদের। তাঁরা গাছ কাটায় আপত্তি তুলে স্থানীয় নাকাইজুড়ি গ্রাম পঞ্চায়েতে লিখিত ভাবে বিষয়টি নিয়ে অভিযোগ করেন। যদিও পঞ্চায়েতের তরফে গাছ কাটা বন্ধ করতে কোনও পদক্ষেপ করতে দেখা যায়নি। পঞ্চায়েত প্রধান সুমিত্রা রায় বলেন, “ওই গাছ কাটার জন্য আমার কাছে কেউ অনুমতি নেয়নি। বিষয়টি কী হয়েছে জানি না।’’

শনিবার স্কুলের শিক্ষকদের আপত্তিতে গাছ কাটা বন্ধ হয়ে গেলেও রবিবার স্কুল বন্ধ থাকার সুযোগে সকাল থেকে ফের গাছ কাটা শুরু হয়। বিষয়টি এ বার নজরে পড়ে গ্রামবাসীদের। ক্ষোভে ফেটে পড়েন তাঁরা। ঠিক হয়, এর পর গাছ কাটতে আসলেই দুষ্কৃতীদের পাকড়াও করে রাখা হবে। সোমবার সকালে ফের গাছ কাটার সরঞ্জাম নিয়ে জনা ছ’য়েক লোকজন স্কুলে ঢুকতেই গ্রামবাসীরা তাঁদের ঘিরে ধরেন। শুরু হয় বচসা। গ্রামবাসীদের ক্ষোভের মুখে পড়ে কোনও মতে সেখান থেকে পালিয়ে যায় গাছ কাটতে আসা লোকজন। প্রতিবাদী গ্রামবাসীদের মধ্যে তীর্থনাথ বন্দ্যোপাধ্যায়, আকুল রায়, গোপাল বাউরি, অভিজিৎ চট্টোপাধ্যায়রা বলেন, “এই গাছটির সঙ্গে সমস্ত গ্রামবাসীর আবেগ জড়িয়ে রয়েছে। আমরা সবাই এই গাছের তলায় বসে সহজ পাঠের শিক্ষা নিয়েছি। আজ এক শ্রেণির ব্যবসায়ী ওই গাছ কেটে ফেলার চক্রান্ত করছে।’’ গ্রামের প্রবীণ বাসিন্দা সরোজ চট্টোপাধ্যায় স্মৃতি হাতড়ে বললেন, “আমি তখন তৃতীয় শ্রেণিতে পড়তাম। স্কুলের পড়ুয়ারাই গাছটিকে জল দিয়ে, মাটি দিয়ে পরিচর্যা করে বড় করে তুলেছে।’’

প্রধান শিক্ষক চিন্ময়বাবু বলেন, “স্কুলকে কিছু না জানিয়েই গাছটি কেটে ফেলা হচ্ছিল। কারা এই কাজ করছিল জানিনা। তবে গ্রামবাসীরা রুখে না দাঁড়ালে হয়ত গাছটিকে বাঁচানো যেত না।’’ এ দিন ঘটনাস্থলে গিয়ে দেখা গেল, গাছটির বেশিরভাগ ডালপালাই কেটে ফেলা হয়েছে। স্কুল চত্বরে গ্রামবাসীদের জটলা। স্কুলের পড়ুয়ারা জানাল, এই গাছটি গোটা স্কুল চত্বরটিকে ছায়া দিয়েছে এত দিন। কিন্তু ডালপালা কেটে দেওয়ায় আর সেই ছায়া পাওয়া যাচ্ছে না। ঠিক কারা এই গাছ কাটার চক্রান্তের পিছনে রয়েছে, তা অবশ্য জানা যায়নি। তবে গ্রামবাসীদের একাংশের মতে, বাইরের কোনও কাঠ ব্যবসায়ীর নজর পড়েছে স্কুলের এই গাছটিতে। কারও অনুমতি না নিয়েই ওই ব্যবসায়ী লোক পাঠিয়ে গাছ কাটা করাচ্ছিলেন। ঘটনার তদন্তের দাবিও তুলেছেন তাঁরা।

বিষ্ণুপুর-পাঞ্চেত বন বিভাগের ডিএফও অয়ন ঘোষ অবশ্য পুরো বিষয়টি খতিয়ে দেখার আশ্বাস দিয়েছেন। তাঁর কথায়, “স্কুলের গাছ কেটে নেওয়া হচ্ছিল বলে আমার কাছে কোনও অভিযোগ আসেনি। তবে আমি খোঁজ নিচ্ছি। অন্যায় ভাবে গাছ কেটে ফেলা হলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Onda Save tree school
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE