Advertisement
২৩ এপ্রিল ২০২৪

নারী-শক্তি বিকাশের বার্তা দেওয়ালে লিখলেন ছাত্রীরা

চারদিকে যখন শক্তির সাধনা চলছে, সেই সময় প্রায় নীরবে নারী শক্তির বিকাশের বার্তায় নিজেদের কলেজের পাঁচিল ছবিতে ভরাল ছাত্রীরা। পুরুলিয়া শহরের দেশবন্ধু রোডে নিস্তারিণী মহিলা মহাবিদ্যালয়ের দেওয়াল জুড়ে ছাত্রীরা ফুটিয়ে তুলছেন নারী শক্তির ও নারীর আত্মবিশ্বাসের নানা রূপকল্প।

তুলি হাতে। পুরুলিয়া নিস্তারিণী কলেজের ছাত্রীরা। —নিজস্ব চিত্র

তুলি হাতে। পুরুলিয়া নিস্তারিণী কলেজের ছাত্রীরা। —নিজস্ব চিত্র

নিজস্ব সংবাদদাতা
পুরুলিয়া শেষ আপডেট: ২৯ অক্টোবর ২০১৬ ০১:৩৬
Share: Save:

চারদিকে যখন শক্তির সাধনা চলছে, সেই সময় প্রায় নীরবে নারী শক্তির বিকাশের বার্তায় নিজেদের কলেজের পাঁচিল ছবিতে ভরাল ছাত্রীরা।

পুরুলিয়া শহরের দেশবন্ধু রোডে নিস্তারিণী মহিলা মহাবিদ্যালয়ের দেওয়াল জুড়ে ছাত্রীরা ফুটিয়ে তুলছেন নারী শক্তির ও নারীর আত্মবিশ্বাসের নানা রূপকল্প। কোথাও লেখা ‘আমি আমার মতো’, কোথাও আবার ‘উই ক্যান ডু ইট’, কোনও দেওয়ালে আবার আগুনে ক্যানভাসে ‘গার্ল পাওয়ার’ প্রভৃতি লেখা।

পথচলতি মানুষজনের এ দৃশ্য বোধহয় নজর এড়ায়নি। নজরে পড়েছে কলেজ পরিদর্শনে আসা নাকের প্রতিনিধিদলেরও। বাইরের দেওয়ালকে এ ভাবে নান্দনিক দৃষ্টিভঙ্গীতে রাঙিয়ে তোলার ভাবনা যেমন কলেজ কর্তৃপক্ষের, তেমনই এই সুযোগে নারীদের এগিয়ে যাওয়ার বার্তা দেওয়ার চেষ্টা করেছেন ছাত্রীরা।

এই কলেজে গত কয়েক বছর ধরে ছাত্রীরাই সরস্বতী পুজোর পৌরহিত্য করে আসছেন। রীতিমতো সংস্কৃত মন্ত্রের পাঠ নিয়ে তাঁরা পুজোপাঠ করেন। ফলে মেয়েদের সশক্তিকরণের জন্য এই কলেজের ছাত্রীরা যে কলেজের পাঁচিল রঙে ভরিয়ে সেই বার্তা দেবে, সেটাই স্বাভাবিক মনে করছেন অনেকে।

জেলার ইতিহাস গবেষক দিলীপকুমার গোস্বামী আবার এই কলেজ তৈরির গোড়ার কথা এ প্রসঙ্গে মনে করিয়ে দিয়েছেন। তিনি জানান, এই কলেজের নামকরণ হয়েছে দেশবন্ধু চিত্তরঞ্জন দাশের মায়ের নামে। দেশবন্ধু তাঁর বাবা ভুবনমোহন ও মা নিস্তারিণীদেবীর বসবাসের জন্য সে কালের এই ‘ক্লার্কস বাংলো’টি কিনেছিলেন। এই বাড়িতেই মারা যান নিস্তারিণীদেবী। পরে রাজ্য সরকার এই বাড়িটি কিনে নিস্তারিণীদেবী মহিলা মহাবিদ্যালয় চালু করেন। দিলীপবাবুর কথায়, ‘‘সেই কলেজের ছাত্রীরা এমন ভাবনায় নিজেদের ঋদ্ধ করবে, এটাই তো স্বাভাবিক।’’

কলেজের অধ্যক্ষ ইন্দ্রাণী দেবের কথায়, ‘‘পাঁচিলে লোকে বিজ্ঞাপন লেখে। তার বদলে সেই দেওয়াল জুড়ে যদি ছাত্রীদের নিজস্ব ভাবনার প্রকাশ থাকে, তা দেখতেও ভাল, সমাজকে বার্তাও দেয়।’’ তিনি জানান, সম্প্রতি কলেজ পরিদর্শনে আসা নাকের প্রতিনিধিদলও এই বিষয়টিকে সাধুবাদ জানিয়েছেন। অন্যান্য বিভাগকে সঙ্গে নিয়ে পুরো কাজটি করেছে ভূগোল বিভাগ। কলেজের ভূগোল বিভাগের দায়িত্বে থাকা আধ্যাপিকা রেণুকা গুপ্ত বলেন, ‘‘আমরা ছাত্রীদের বলেছিলাম তোমরা ছবিতে নিজেরা নিজেদের ভাবনা প্রকাশ করো। ওদের কাজের সবাই প্রশংসা করছেন। আগেও এই ধরনের কাজ ছাত্রীরা করেছে।’’

ছাত্রীরা নিজেরা কী বলছেন? শিল্পা কর্মকার নামে ভূগোলের এক ছাত্রীর ব্যাখ্যা, ‘‘আমরা বলতে চেয়েছি, মেয়েদের ছাড়া সমাজ অসম্পূর্ণ। সেই আত্মবিশ্বাসের কথাটাই আমরা দেওয়াল-চিত্রের মাধ্যমে সবার মধ্যে ছড়িয়ে দিতে চেয়েছি।’’

দুর্গা মাহাতো, শেলভা মাহাতো, আনু সিংহ, কবিতা মাহাতো, বর্ষা রানা প্রমুখ ছাত্রীরা জানান, মেয়েদের নানা রূপ পরিকল্পনা করে তাঁরা তুলে ধরেছেন। তাই যেমন ঝাঁসির রানির ছবি রয়েছে, তেমনই খাঁচা খুলে পাখিকে উড়িয়ে দেওয়ার ছবিও ঠাঁই পেয়েছে এখানে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Students Woman-empowerment College
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE