Advertisement
২০ এপ্রিল ২০২৪
সিউড়ির দাম্পত্য মামলা

শ্বশুর, স্বামীর নামে চার্জশিট পুলিশের

এমনই পরিস্থিতিতে কয়েক মাস আগে ওই যুবতীর করা অভিযোগের ভিত্তিতে বৃহস্পতিবার আদালতে চার্জশিট দিল পুলিশ।

নিজস্ব সংবাদদাতা
সিউড়ি শেষ আপডেট: ২৩ মার্চ ২০১৮ ০২:৫৭
Share: Save:

বিচারকের সৌজন্যে সাময়িক ভাবে জোড়া লেগেছিল স্বামী-স্ত্রীর সম্পর্ক। পরিস্থিতি প্রতিকূল হওয়ায় কয়েক দিন আগে ফের বিচারকের দ্বারস্থ হন বধূ। জেলা ‘লিগ্যাল সেল অথরিটি’ দু’জনকে মুখোমুখি বসিয়ে অশান্তি মেটানোর প্রক্রিয়া শুরু পরিকল্পনা করেছিল।

এমনই পরিস্থিতিতে কয়েক মাস আগে ওই যুবতীর করা অভিযোগের ভিত্তিতে বৃহস্পতিবার আদালতে চার্জশিট দিল পুলিশ। আইনজীবীদের একাংশের বক্তব্য, ওই দম্পতির সম্পর্ক বাঁচাতে বিচারকের চেষ্টা পুলিশের ‘অতিসক্রিয়তা’য় না শেষ হয়ে যায়। পুলিশ অবশ্য অতিসক্রিয়তার অভিযোগ মানেনি। জেলা পুলিশের এক কর্তা বক্তব্য, ‘‘অভিযোগের তদন্তের পর নিয়মমতোই চার্জশিট জমা পড়েছে।’’

গত বছর মার্চ মাসে সিউড়ির ভট্টাচার্য পাড়ার বাসিন্দা বছর আঠাশের বিদ্যুৎকর্মীর সঙ্গে বিয়ে হয়েছিল নদিয়ার তেহট্টের ওই যুবতীর। বিয়ের কিছু দিন পরেই শুরু হয় দাম্পত্য-কলহ। বধূর অভিযোগ ছিল, স্বামী তাঁকে মানসিক ও শারীরিক অত্যাচার করেন। খুনের চেষ্টা, শ্লীলতাহানির অভিযোগ ছিল তাঁর শ্বশুর, ভাসুরের বিরুদ্ধেও। বিরোধের জেরে গত অক্টোবরে বাপের বাড়িতে চলে যান ওই বধূ। শ্বশুরবাড়ির বিরুদ্ধে আইনি পদক্ষেপ করতে জেলা আইনি পরিষেবা কেন্দ্রেও যান। এ বছর ৮ জানুয়ারি সিউড়ি থানায় স্বামী, শ্বশুরবাড়ির লোকেদের বিরুদ্ধে লিখিত অভিযোগ করেন। ১৬ জানুয়ারি জেলা বিচারক পার্থসারথি সেনের এজলাসে সেই মামলার শুনানি ছিল। সেখানেই ওই দম্পতির কলহের কাহিনি অন্য দিকে ঘুরে যায়। তাঁদের সংসার বাঁচাতে অভিনব পদক্ষেপ করেন বিচারক পার্থসারথি সেন। তাঁর নির্দেশ ছিল— ‘আপনারা নিভৃতে তিন দিন একটি হোটেলে থাকুন। নিজেদের মধ্যে সব ভুল বোঝাবুঝি মিটিয়ে নিন। হোটেলের যাবতীয় খরচ দেব আমি।’ ফলও মেলে হাতেনাতে। তিন দিন হোটেলে কাটিয়ে ১৯ জানুয়ারি ওই দম্পতি আদালতে গিয়ে বিচারককে জানান, তাঁরা একসঙ্গে থাকতে চান। জামিন পান মামলার অভিযুক্তেরা। মামলা না তুললেও সে দিন জামিনের বিরোধিতা করেননি ওই যুবতী।

খুশি হয়েছিলেন বিচারকও। দুই পরিবারের সদস্যদের অনুরোধও করেছিলেন, কেউ যেন তাঁদের দাম্পত্যে নাক না গলান। কয়েক সপ্তাহ কাটতে না কাটতেই ফের এক পরিস্থিতি। কয়েক দিন আগে বিচারকের কাছে পাঠানো চিঠিতে ওই বধূ অভিযোগ করেন, ২০ জানুয়ারি শ্বশুরবাড়িতে ফেরার পর চূড়ান্ত হেনস্থার শিকার হতে হচ্ছে তাঁকে। তার জেরে ২ ফেব্রুয়ারি বাপের বাড়িতে ফিরে যেতে হয়। স্বামীর চেয়েও শ্বশুরের বিরুদ্ধে অভিযোগ ছিল বেশি। তবে বিবাহবিচ্ছেদ নয়, মীমাংসা করে সংসার করার উপযুক্ত পরিবেশ ফিরিয়ে দেওয়ার আর্জিই জানিয়েছেন ওই যুবতী।

১৯ মার্চ দু’পক্ষকে সামনে বসিয়ে সমাধানসূত্র খোঁজার চেষ্টা করা হবে বলে ঠিক করেছিল ‘লিগ্যাল সেল অথরিটি’। কিন্তু ওই বধূ অসুস্থতার জন্য নদিয়া থেকে সিউড়িতে আসতে পারেননি। তাই মীমাংসার তারিখ পিছিয়েছিল লিগ্যাল সেল।

এরই মধ্যে ৮ জানুয়ারি সিউড়ি থানায় দায়ের করা ওই যুবতীর অভিযোগের তদন্ত করে বৃহস্পতিবার চার্জশিট জমা দেয় পুলিশ। তাতে ওই প্রক্রিয়া ধাক্কা খাওয়ার প্রসঙ্গ উঠেছে। তদন্তকারীদের বক্তব্য, ওই যুবতীর অভিযোগের সত্যতা তদন্তে মিলেছে। তাই পুলিশ ওই যুবতীর স্বামী, শ্বশুর, মামাশ্বশুর ও ভাসুরের বিরুদ্ধে আগের ধারাগুলিই বজায় রেখেছে। চার্জশিট জমা পড়েছে আদালতের জিআরও অফিসে। মামলা উঠবে মুখ্য বিচারবিভাগীয় বিচারকের এজলাসে। শুরু হবে বিচার প্রক্রিয়া।

আইনজীবীদের একাংশের বক্তব্য, খুন, চুরির মতো বিভিন্ন ঘটনায় চার্জশিট দিতে কখনও কখনও অনেক দেরি করে পুলিশ। যেখানে একটি সংসার বাঁচানোর চেষ্টা চলছে, সেই মামলায় এত দ্রুত চার্জশিট দেওয়ায় আলোচনার পরিস্থিতি থাকে না। সরকারপক্ষের আইনজীবী শমিদুল আলম অবশ্য জানান, তদন্ত করে চার্জশিট পেশ করা তদন্তকারী আধিকারিকের উপর নির্ভর করে। এর সঙ্গে বিচারকের সম্পর্ক নেই।

বধূর শ্বশুরবাড়ির কারও প্রতিক্রিয়া মেলেনি। খবর পেয়ে অস্বস্তি বেড়েছে যুবতীর। নদিয়া থেকে ফোনে তিনি বলেন, ‘‘যে অভিযোগ তুলেছিলাম সেগুলি যে মিথ্যা নয়, তদন্তে তা উঠে এসেছে। সংসার ভেঙে যাক তা চাই না। যে পরিবারে থাকতে চাই, তার সদস্যদের বিরুদ্ধে মামলা চললে সেখানে কি থাকা সম্ভব?’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Police Charge Sheet Husband Assault
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE