Advertisement
২৪ এপ্রিল ২০২৪

ভাড়া বাড়ল ১৯০ টাকা, যাত্রী কমে ৬

তবে হ্যাঁ একটা পরিবর্তন হয়েছে— বাসের গায়ে সাঁটানো হয়েছে ‘বাংলাশ্রী’ স্টিকার।

ফাঁকা: সিউড়ি-কলকাতা এসি বাসের হাল এখন এমনই। —নিজস্ব চিত্র।

ফাঁকা: সিউড়ি-কলকাতা এসি বাসের হাল এখন এমনই। —নিজস্ব চিত্র।

দয়াল সেনগুপ্ত
সিউড়ি শেষ আপডেট: ০৮ অগস্ট ২০১৮ ০১:২১
Share: Save:

বাস একই আছে। যাত্রাপথ একই আছে। অথচ ভাড়া ৩২০ টাকা থেকে বেড়ে হয়েছে ৫১০ টাকা।

এক ধাক্কায় ১৯০ টাকা ভাড়া বেড়েছে সিউড়ি-কলকাতা এসি ভলভো বাসের। তবে হ্যাঁ একটা পরিবর্তন হয়েছে— বাসের গায়ে সাঁটানো হয়েছে ‘বাংলাশ্রী’ স্টিকার।

আচমকা এই ভাড়া বৃদ্ধিতে ক্ষুব্ধ বীরভূমের জেলা সদরের বাসিন্দারা। এক ধাক্কায় যাত্রী সংখ্যাও তলানিতে ঠেকেছে। সোমবার ৭টা ১৫ মিনিটে কলকাতা যাওয়ার বাসে যাত্রী ছিলেন ছ’জন। মঙ্গলবারও যাত্রী সংখ্যা কমবেশি একই ছিল। শহরবাসীর মতে, ভাড়া বড়তেই পারে। তাই বলে এক ধাক্কায় এতখানি! ভাড়া পুনর্বিবেচনা না করলে যাত্রী সংখ্যা শূন্য হয়ে যেতে পারে বলেও মনে করছেন তাঁরা। কারণ, এত টাকা খরচ করে কলকাতা যাওয়ার লোক হাতেগোনা।

২০১৭ সালের মে মাসে বোলপুরের গীতাঞ্জলি প্রেক্ষাগৃহে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের প্রশাসনিক বৈঠকে জেলা সদর থেকে কলকাতাগামী এসি বাস চালানোর দাবি উঠে। ‘কার কোন এলাকায় কী চাই— রাস্তা, স্কুল?’ মুখ্যমন্ত্রীর এই প্রশ্নের উত্তরে সে দিন সিউড়ির ব্যবসায়ী সমিতির এক সদস্য বলেছিলেন, ‘দিদি জেলা সদর সিউড়িতে রেল পরিষেবা খুব খারাপ। রামপুরহাট বা বোলপুর শহরের মতো কলকাতা যাওয়ার ট্রেন যোগাযোগ নেই। অনেক দূরপাল্লার ট্রেন সিউড়িতে থামে না। আগে চালু থাকলেও জেলা সদর থেকে সরকারি এসি বাস চলাচাল বন্ধ। যদি ফের সেই পরিষেবা চালু করেন ভাল হয়।’ সঙ্গে সঙ্গে মুখ্যমন্ত্রী তৎকালীন পরিবহণ সচিব আলাপন বন্দ্যোপাধ্যায়কে বিষয়টি দেখতে বলেন।

স্থির হয়েছিল, সিউড়ি এবং বোলপুর দু’টি শহর থেকেই কলকাতাগামী এসি বাস চালাবে দক্ষিণবঙ্গ পরিবহণ সংস্থা। মুখ্যমন্ত্রীর ঘোষণার পরে পরিষেবা চালু হয়েছিল দিন সাতেকের মধ্যেই। যেহেতু বোলপুরে ডিপো ছিল না, তাই দক্ষিণবঙ্গ পরিবহণ সংস্থা দু’টি বাসকেই জেলা সদর থেকে চালানোর সিদ্ধান্ত নেয়। দু’টি শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত বাস পেয়ে খুশি হয়েছিল শহর। কিন্তু, অস্বাভাবিক ভাড়া বৃদ্ধি সেই খুশি ছিনিয়ে নিয়েছে।

জানা গিয়েছে, বোলপুর হয়ে কলকাতা বাসটি সিউড়ি ছাড়ে সকাল ৫টা ১৫ মিনিটে। আর সিউড়ি থেকে ভায়া দুবরাজপুর, ইলামবাজার হয়ে কলকাতাগামী বাসটি ছাড়ে সকাল ৭টা ১৫ মিনিটে। কলকাতা থেকে বাসগুলি ফেরে যথাক্রমে বেলা আড়াইটে এবং বিকাল ৪টা ৫০মিনিটে।

তবে সময়ের পরিবর্তন না হলেও পরিবহণ সংস্থা বদলে গিয়েছিল পরিষেবা শুরুর মাসখানেকের মধ্যেই। প্রথম দিকে ভাল এসি বাস দিতে না পারায় দক্ষিণবঙ্গের (ডব্লিউবিএসটিসি) থেকে বাস চালানোর দায়িত্ব নেয় ডব্লিউবিটিসি (পশ্চিমবঙ্গ পরিবহণ নিগম)।

সিউড়ি ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি নজরুল ইসলান, সম্পাদক কিসান পাল, চাকুরিজীবী অলোক বন্দ্যোপাধ্যায়রা বলছেন, ‘‘আগের ভলভো বাসগুলোই চলছে। কোনও বাসে বায়োটয়লেট নেই। নন স্টপ যাওয়ার কথা। সে সব নেই। পরিষেবা একই থেকেছে। শুধু স্টিকার সাঁটিয়ে ভাড়া বাড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। এটাতেই আপত্তি।’’ বাসযাত্রীদের অনেকের মনে হয়েছে, ভাড়া বাড়তেই পারে। যেমন, সিউড়ি থেকে কলকাতা সরকারি পরিবহণ সংস্থার নন এসি বাসগুলিতে ২০ শতাংশ ভাড়া বাড়িয়ে ১৮৫ টাকা করা হয়েছে। সেখানেই এসি বাসের ভাড়া বেড়েছে ১৯০ টাকা। যাত্রী তো কমবেই। শহরের বাসিন্দাদের আর্জি, ভাড়া যেন ৪০০ টাকার মধ্যেই রাখা হয়।

ভাড়া বাড়ার জন্য যাত্রী কমেছে তা মেনে নিলেও ভিন্ন ব্যাখ্যা দিচ্ছেন ডব্লিউবিটিসি-র এর কর্তা। তিনি বলছেন, ‘‘দক্ষিণবঙ্গ পরিবহণ সংস্থা এসি (সাধারণ) বাসগুলি চালাবে বলে সিদ্ধান্ত হয়েছিল। সেই হিসেবেই ভাড়া ছিল ৩২০ টাকা। আমরা দায়িত্ব নেওয়ার পরে ভাড়া না বাড়িয়েই ভলভো বাস দিই। এখন রাজ্যজুড়ে ভলভো পরিষেবার ভাড়া নির্দিষ্ট হয়েছে। সেই মতো সিউড়ির দুটি গাড়িতে ভাড়া ঠিক হয়েছে।’’ একই সঙ্গে তিনি জানাচ্ছেন, যাত্রীদের কথা ভেবে ভাড়া পুনর্মূল্যায়ন করার কথাও ভাবেছ সংস্থা।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE