Advertisement
০২ মে ২০২৪
Doll

Doll Museum: পুতুল নেবে গো পুতুল! শ্রীমহাদেবের মস্ত ভান্ডার, তাতে আছে গোটা ভারত

নিজের পরিচয় দেওয়ার সময় পদবি উহ্য রাখতেই পছন্দ করেন শ্রীমহাদেব। পেশায় বাঁকুড়া জেলা স্কুলের শিল্প শিক্ষক তিনি।

সংগৃহীত পুতুলদের মাঝে মহাদেব মুখোপাধ্যায়।

সংগৃহীত পুতুলদের মাঝে মহাদেব মুখোপাধ্যায়। —নিজস্ব চিত্র।

নিজস্ব সংবাদদাতা
বাঁকুড়া শেষ আপডেট: ০৭ এপ্রিল ২০২২ ২৩:১৪
Share: Save:

এত কাল পুতুল খেলা, পুতুলের বিয়ে যে শৈশবের সঙ্গে আষ্টেপৃষ্ঠে জড়িয়েছিল, এখন উধাও হতে বসেছে তা। দস্তুর হয়েছে মোবাইল, ভিডিয়ো গেমে ডুবে থাকা। কিন্তু এই অভ্যাস বদল ছুঁতে পারেনি শ্রীমহাদেবকে। ঝোঁক এমন উচ্চতায় পৌঁছেছে যে, দেশ-বিদেশ থেকে পুতুল সংগ্রহ করে এনে নিজের বাড়িতেই আস্ত একখানা সংগ্রহশালা তৈরি করে ফেলেছেন বাঁকুড়ার মহাদেব মুখোপাধ্যায়।

নিজের পরিচয় দেওয়ার সময় পদবি উহ্য রাখতেই পছন্দ করেন শ্রীমহাদেব। পেশায় বাঁকুড়া জেলা স্কুলের আর্টের শিক্ষক তিনি। নেশা কী জিজ্ঞাসা করলে বলেন, পুতুল জোগাড় করা। খোঁজ পেলেই হাজির হন যে কোনও প্রান্তের পুতুলের দোকান আর কুমোরপাড়ায়। দেখেশুনে কিনেও ফেলেন হরেক রকমের পুতুল। আর সেই পুতুল দিয়েই সেজে ওঠে বাঁকুড়ায় তাঁর কেন্দুয়াডিহির বাড়িতে তৈরি সংগ্রহশালা।

শ্রীমহাদেবের সংগ্রহশালার দেওয়াল জুড়ে রয়েছে কাঠের গ্যালারি। তাতেই ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে অন্তত সাড়ে ন’শো পুতুল। বাংলার বিভিন্ন রকমের ষষ্ঠী পুতুল থেকে শুরু করে পুরুলিয়ার বিয়া পুতুল, ওড়িশার রঘুরাজপুরের পট পুতুল, কর্নাটকের কাঠের পুতুল সবই রয়েছে তাঁর সংগ্রহে। ঘুরে ঘুরে শ্রীমহাদেব সংগ্রহ করেছেন বেলিয়াতোড়ের মমি পুতুল, কাঁঠালিয়ার জাঁতা পেষাই পুতুল, পুর্ব মেদিনীপুরের বৃন্দাবনচন্দ্রের গালার পুতুল। রয়েছে বিদেশের দু’একটি পুতুলও। শ্রীমহাদেব বলেন, ‘‘আমার সংগ্রহশালায় এ দেশের প্রতিটি রাজ্যের পুতুল আছে। ভবিষ্যতে আফ্রিকা, কোরিয়া, জাপান ও দক্ষিণ আমেরিকার বিভিন্ন দেশ থেকে পুতুল সংগ্রহ করার ইচ্ছে রয়েছে আমার।’’


শ্রীমহাদেবের জন্ম আর বেড়ে ওঠা বাঁকুড়ার ওন্দা থানার তেঁতুলমুড়ি গ্রামে। ১৯৯৫ সালে তিনি ভর্তি হন কলকাতার গভর্নমেন্ট আর্ট কলেজে। সেখানে প্রথমে স্নাতক ও পরে ফাইন আর্টসে স্নাতকোত্তর পাশ করেন তিনি। কিন্তু কী ভাবে নিজেকে পুতুলের নেশায় বেঁধে ফেললেন শ্রীমহাদেব? তিনি জানান, ফাইন আর্টস পড়ার সূত্রেই বাঁকুড়ার প্রয়াত শিল্পী উৎপল চক্রবর্তীর সঙ্গে তাঁর যোগাযোগ হয়। নেশার সূত্রপাত তখন থেকেই।

তাঁর কথায়, ‘‘উৎপল চক্রবর্তীর কাছেই প্রথম নিষ্প্রাণ পুতুলকে পড়তে শিখি। জানতে পারি পুতুলের গায়েই লুকিয়ে থাকে সমকালীন রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক অবস্থার ছবি। সামাজিক রীতিনীতি ও আচার আচরণও বোঝা যায় পুতুল দেখে। আর তখন থেকেই পুতুল সংগ্রহের নেশা মনের মধ্যে চেপে বসে।’’ তার পর থেকে ১৭ বছর ধরে পুতুল সংগ্রহ করছেন শ্রীমহাদেব। তিনি বলেন, ‘‘এখন শিশুদের মধ্যে পুতুল খেলার চল আর নেই। বিক্রির অভাবে বহু শিল্পীই পুতুল তৈরি বন্ধ করে দিচ্ছেন। অন্য পেশায় চলে যাচ্ছেন তাঁরা। এই অবস্থায় পুতুল গড়া হয়তো একদিন ইতিহাস হয়ে যাবে। আগামী প্রজন্মের সঙ্গে পুতুলের সঙ্গে পরিচয় ঘটাতে হলে সংরক্ষণের প্রয়োজন। কিন্তু কোথাও এমন উদ্যোগ দেখিনি। তাই, ব্যক্তিগত উদ্যোগেই গড়ে তুলেছি এই সংগ্রহশালা।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Doll museum
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE