Advertisement
২৬ এপ্রিল ২০২৪
ফেরাল পুলিশ ও চাইল্ড লাইন

দূরের দেশ দেখতে বেরিয়ে মানবাজারে

গ্রাম ছেড়ে রাস্তাটা চলে গিয়েছে দূরে। সেই দূরের দেশ কেমন তা দেখার সাধ ওদের অনেক দিনের। পিঠোপিঠি তিন ভাই। বয়স চার থেকে আট বছর। দূরের নেশায় তিন খুদে উঠে পড়েছিল বাসে। কিন্তু ফিরতে গিয়েই গোল বাধল।

মানবাজার থানায় উদ্ধার হওয়া তিন খুদে। —নিজস্ব চিত্র।

মানবাজার থানায় উদ্ধার হওয়া তিন খুদে। —নিজস্ব চিত্র।

সমীর দত্ত
মানবাজার শেষ আপডেট: ২৫ ডিসেম্বর ২০১৬ ০০:৩৫
Share: Save:

গ্রাম ছেড়ে রাস্তাটা চলে গিয়েছে দূরে। সেই দূরের দেশ কেমন তা দেখার সাধ ওদের অনেক দিনের। পিঠোপিঠি তিন ভাই। বয়স চার থেকে আট বছর। দূরের নেশায় তিন খুদে উঠে পড়েছিল বাসে। কিন্তু ফিরতে গিয়েই গোল বাধল।

শীতের রাতে মানবাজারের পোদ্দারপাড়ার একটি দোকানের বারান্দায় গুটিসুটি মেরে শুয়েছিল তিন মূর্তিমান। খবর পেয়ে তাদের উদ্ধার করে বাড়ি পাঠাল পুলিশ এবং চাইল্ড লাইন।

শুক্রবার রাত তখন সাড়ে ৯টা। পোদ্দারপাড়ার বেশির ভাগ দোকানেই ঝাঁপ পড়ে গিয়েছে। ব্যবসায়ী আনন্দময় সেনও দোকান বন্ধ করার তোড়জোড় করছিলেন। হঠাৎ চোখে পড়ে, পাশের দোকানের বারান্দায় কারা যেন শুয়ে রয়েছে। পলিথিনের চাদর সরিয়ে দেখেন, তিনটি শিশু ঠাণ্ডায় জড়োসড়ো হয়ে কাঁপছে। বয়স চার থেকে আট বছরের মধ্যে। পাশে প্লাস্টিকের থলেতে মুড়ি। জলের বোতল।

কিছুক্ষণের মধ্যেই লোকজন জড়ো হয়ে যায়। স্থানীয় বাসিন্দা বাপি দাস, অমিতাভ দত্তরা জানান, ঘাবড়ে গিয়ে তিন খুদে নিজেদের নামধাম কিছুই বলতে পারেনি। খবর পেয়ে পুলিশ এসে তাদের উদ্ধার করে নিয়ে গিয়ে রাতটা থানাতেই রাখে।

শনিবার সকালের রোদে থানা চত্বরে ঘোরাঘুরি করছিল তিন খুদে। ততক্ষণে পুলিশ কাকুদের সঙ্গে বেশ ভাব জমে গিয়েছে ওদের। নাম ধাম— সবই বলেছে। হাতিলাল কেউড়া, পলমা কেউড়া আর টিনা কেউড়া। বাড়ি আদ্রা থানার মণিপুরের কাছে মঙ্গলপুর গ্রামে। তিন জনের মধ্যে সবচেয়ে পুচকে টিনা জানায়, রাতে পুলিশকাকুরা রুটি, তরকারি আর মিষ্টি খাইয়েছে। শোয়ার জন্য কম্বল দিয়েছে।

জেলা চাইল্ড লাইনের কো-অর্ডিনেটর দীপঙ্কর সরকার জানান, সকালে থানায় গিয়ে কাউন্সেলিং করে তাঁরা খুদেদের ভয় কাটান। জানা যায়, শুক্রবার সকালে বাসে চড়ে ওরা লালপুরে আসে। খিদে পাওয়ায় বাসের যাত্রীদের থেকে পয়সা চেয়ে মুড়ি কিনে খায়। কিন্তু ফেরার সময় ভুল করে মানবাজারের বাসে উঠে পড়ে। তিন খুদের মধ্যে বড় হাতিলাল, ভাইয়েদের স্বান্তনা দিয়ে সকালে বাড়ি নিয়ে যাবে বলে আশ্রয় নিয়েছিল দোকানের বারান্দায়।

শনিবার চাইল্ড লাইনের কর্তারা তিন জনকে বাড়ি নিয়ে যান। তাদের মা মঙ্গলা কেউড়া জানান, স্বামী মারা গিয়েছেন। ওই তিনজন ছাড়াও আরও ছোট একটি ছেলে ও একটি মেয়ে রয়েছে তাঁর। দিন মজুরি করে সংসার চালান তিনি। বেশ কিছু দিন আগেই স্কুলের পাট চুকিয়ে দিয়েছে তিন খুদে। বাড়ির সামনেই খেলাধুলো করে কাটাতো। হঠাৎ নিখোঁজ হয়ে যাওয়ায় ভেবে কুল কিনারা পাচ্ছিলেন না মঙ্গলা।

চাইল্ড লাইনের কর্তারা এ বারে খুদেদের স্কুলে পাঠাতে উদ্যোগী হয়েছেন। যাতে ওরা বইয়ের পাতার মধ্যে দিয়ে লালপুর ছাড়িয়ে আরও দূরের অজানা দেশে-বিদেশে পাড়ি দিতে পারে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

lost children
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE