Advertisement
E-Paper

বিজেপি-তৃণমূল সংঘর্ষ, বোমা পড়ল সারা রাত

ঘটনা হল, লোকসভা ভোটের ফল প্রকাশের পর থেকে সেই যে রাজনৈতিক অশান্তি শুরু হয়েছে বীরভূমে, তা যেন থামার নাম নিচ্ছে না। পাড়ুই থেকে নানুর, সাঁইথিয়া থেকে সদাইপুর—বিজেপি-তৃণমূল সংঘর্ষে বারবার তপ্ত হচ্ছে জেলার বিভিন্ন প্রান্ত।

শুভদীপ পাল

শেষ আপডেট: ০২ জুন ২০১৯ ০০:৪৯

পতাকা লাগানোকে কেন্দ্র করে তৃণমূল এবং বিজেপি-র রাতভর সংর্ঘষে ভাঙল একের পর এক বাড়ি, জখম হলেন দুই পক্ষের অনেকে। মুহুর্মুহু বোমাবাজি হয় বলেও অভিযোগ। ঘটনাস্থল, সদাইপুর থানা এলাকার পারুলিয়া পঞ্চায়েতের হাজরাপুর গ্রাম। শুক্রবার রাতে সংঘর্ষের খবর পেয়ে রাতেই পুলিশবাহিনী সেখানে গিয়ে পরিস্থিতি সামাল দেয়।

ঘটনা হল, লোকসভা ভোটের ফল প্রকাশের পর থেকে সেই যে রাজনৈতিক অশান্তি শুরু হয়েছে বীরভূমে, তা যেন থামার নাম নিচ্ছে না। পাড়ুই থেকে নানুর, সাঁইথিয়া থেকে সদাইপুর—বিজেপি-তৃণমূল সংঘর্ষে বারবার তপ্ত হচ্ছে জেলার বিভিন্ন প্রান্ত। কোথাও দলীয় কর্মীদের মারধর, বাড়ি ভাঙচুর, তো কোথাও পার্টি অফিস দখল করে নেওয়ার অভিযোগ উঠেছে। সংঘর্ষে লাগাম পরাতে পারছে না জেলা পুলিশ-প্রশাসনও।

এলাকা সূত্রে জানা গিয়েছে, হাজরাপুরের তৃণমূল নেতা নুরুল হুদা এবং তাঁর ভাই নুরুল মুশার মধ্যে বেশ কিছুদিন ধরে জমি সংক্রান্ত বিষয় নিয়ে গণ্ডগোল চলছিল। নুরল হুদা ওই এলাকায় বেশ প্রভাবশালী নেতা হিসাবে পরিচিত। নুরুল মুশাও দাদার মতো এলাকায় প্রভাব বাড়ানোর লক্ষ্যে বিজেপিতে যোগ দেন।
শুক্রবার রাতে বিজেপি-র পতাকা লাগানোকে কেন্দ্র করে দুই ভাইয়ের গোষ্ঠীর মধ্যে বিবাদ হয়। এর পরেই দু’পক্ষ একে অপরের সঙ্গে সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ে। চলে ভাঙচুর ও
ব্যাপক বোমাবাজি।

গ্রামের বিজেপি কর্মীদের অভিযোগ, শুক্রবার রাত্র ৯টা নাগাদ তৃণমূল আশ্রিত কিছু দুষ্কৃতী এলাকায় এসে বেপরোয়া ভাবে বোমাবাজি করে। বিজেপি কর্মীদের বাড়ি ভাভচুর করে। স্থানীয় বিজেপি কর্মী শেখ আবু সাহিদ বলেন, ‘‘আমি তখন বাড়ির দাওয়ায় বসেছিলাম। হঠাৎই তৃণমূলের কর্মীরা এলাকায় বোমাবাজি শুরু করল। আমাদের কয়েক জনকে বেধড়ক পেটাল।’’ তাঁর দাবি, দুষ্কৃতীরা বেশ কিছু বাড়ি, মোটরসাইকেল, ট্রাক্টর এবং বাড়ির আসবাবপত্র ভাঙচুর করে। বিজেপি কর্মীদের অভিযোগ, ‘‘হামলাকারীরা আমাদের শাসিয়ে বলে, এই এলাকায় তৃণমূল ছাড়া অন্য দল করা যাবে না।’’

তৃণমূল অবশ্য হামলার অভিযোগ অস্বীকার করেছে। বরং তাদের পাল্টা দাবি, বিজেপি কর্মীরাই গ্রামে বোমাবাজি করে এবং তৃণমূল কর্মীদের বাড়ি ভাঙচুর করে। ঘটনায় তাদের বেশ কয়েক জন কর্মী আহত হন।
স্থানীয় তৃণমূল কর্মী সামাদুল অভিযোগ করে বলেন, ‘‘রাতে বিজেপি-র দুষ্কৃতীরা আমাদের এলাকায় বোমাবাজি করতে করতে ঢুকে আমাদের উপর চড়াও হয় এবং মারধর করে। আমাদের ছটা বাড়িতে ভাঙচুর চালানো হয়। একটা মোটরসাইকেলও ভাঙে।’’

ঘটনার জেরে শনিবার সকাল থেকে এলাকার পরিস্থিতি ছিল থমথমে, রাস্তাঘাট ছিল কার্যত ফাঁকা। গ্রামে পৌঁছে দেখা গেল, অনেকগুলি বাড়িতে ভাঙচুর চালানো হয়েছে। লোকজনের ইতিউতি জটলা। ফের যাতে সংঘর্ষ না হয়, তার জন্য মোতায়েন করা হয়েছে বিশাল পুলিশ বাহিনী। গ্রামে ঘুরেও দুই নুরুলের দেখা মেলেনি।

পরে ফোনে নুরুল হুদা বলেন, ‘‘শুক্রবার মুশা ও তার সঙ্গীরা আমার জায়গায় বিজেপির পতাকা লাগিয়েছিল। আমি তার প্রতিবাদ করেছিলাম। সেই নিয়ে আমাদের মধ্যে বাদানুবাদ হয়। সন্ধ্যায় ওরা নিজেদের মধ্যে লাড্ডু বিলি করছিল। তখন আমার ছেলেকে মারতে যায়।’’ তাঁর দাবি, রাতে মুশার দলবল তাঁর বাড়িতে ভাঙচুর চালায় ও বোমাবাজি করে। তার পরেই সংঘাত বাধে। মুশার সঙ্গে অনেক চেষ্টা করেও যোগাযোগ করা যায়নি।

বারবার চেষ্টা করা হলেও ওই দুই ভাইয়ের কোনও প্রতিক্রিয়া পাওয়া যায়নি। এ প্রসঙ্গে দুবরাজপুর পঞ্চায়েত সমিতির সহ-সভাপতি, তৃণমূলের স্বপন মণ্ডল বলেন, ‘‘জমি সংক্রান্ত বিষয় নিয়ে বেশ কিছু দিন দুই ভাইয়ের মধ্যে বিবাদ চলছিল। ঘটনাচক্রে ওরা পৃথক পৃথক রাজনৈতিক দলের সদস্য।’’

যদিও ওই ঘটনার বিষয়ে বিজেপি-র জেলা সভাপতি রামকৃষ্ণ রায়ের বক্তব্য, ‘‘তৃণমূলের দেওয়ালে পিঠ ঠেকে গিয়েছে। তাই ওরা জায়গায় জায়গায় আমাদের কর্মীদের উপরে আক্রমণ চালাচ্ছে। সদাইপুরে সেটাই হয়েছে।’’

Sadaipur Violence TMC BJP Birbhum
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy