Advertisement
১৭ এপ্রিল ২০২৪

দু’বছর পেরিয়ে গেলেও মেলেনি প্রতিবন্ধী ভাতা

 দু’বেলার খাবার জোগা়ড় করতে হিমসিম খাচ্ছেন প্রতিবন্ধী যুবক। ছেলেমেয়ের পড়াশোনাও শিকেয় ওঠার জোগাড়। অভিযোগ, আবেদন করেও মেলেনি প্রতিবন্ধী ভাতা।

অসহায়: লোকপাড়ার সীতারাম হাজরা। ছবি: সোমনাথ মুস্তাফি

অসহায়: লোকপাড়ার সীতারাম হাজরা। ছবি: সোমনাথ মুস্তাফি

অর্ঘ্য ঘোষ
ময়ূরেশ্বর শেষ আপডেট: ১০ নভেম্বর ২০১৭ ০০:৩৭
Share: Save:

দু’বেলার খাবার জোগা়ড় করতে হিমসিম খাচ্ছেন প্রতিবন্ধী যুবক। ছেলেমেয়ের পড়াশোনাও শিকেয় ওঠার জোগাড়। অভিযোগ, আবেদন করেও মেলেনি প্রতিবন্ধী ভাতা।

বছর নয়েক আগে বাস থেকে পড়ে গিয়ে শিরদাঁড়া ভেঙে যায় ময়ূরেশ্বরের লোকপাড়া গ্রামের সীতারাম হাজরার। চিকিৎসা করাতে গিয়ে প্রায় ঘটিবাটি পর্যন্ত বিক্রি করে দিতে হয়েছিল। কিন্তু কাজ হয়নি। হাঁটাচলা তো দূরের কথা, সোজা হয়ে দাঁড়াতেও পারেন না তিনি। দিনমজুরি করে সংসার চালাতেন। এখন স্ত্রী সবিতা হাজরা পরিচারিকার কাজ করেন। ছেলে নবম শ্রেণিতে পড়ে। মেয়ে স্থানীয় হাইস্কুল থেকে এ বারে উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষা দেবে। তাকেও নাম লেখাতে হয়েছে গানের দলে। ভাইকে সঙ্গে নিয়ে দূর-দূরান্তে ঘুরে ঘুরে বিভিন্ন জায়গায় অনুষ্ঠান করতে হয়।

সবিতা বলেন, ‘‘এমনও হয়েছে, পরের দিন পরীক্ষা। ভাইকে নিয়ে মেয়ে গিয়েছে অনুষ্ঠান করতে। না হলে বাড়িতে হাঁড়ি চড়বে না। এই করে ছেলেমেয়ে দুটোরই পড়াশোনার ক্ষতি হয়ে যাচ্ছে।’’ এ ভাবে যে রোজ ভরপেট খাওয়া জোটে, তা-ও না। সীতারামের শারীরিক প্রতিবন্ধকতা ৮৫ শতাংশ। বসবাস করেন দারিদ্রসীমার নীচে।

কেন পাচ্ছেন না প্রতিবন্ধী ভাতা?

প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, দু’প্রকার ভাতা এ রাজ্যের প্রতিবন্ধীরা পেতে পারেন। একটি রাজ্যের সমাজকল্যাণ দফতরের। নিয়ম অনুযায়ী, ১৮ বছর বা তার বেশি বয়স্ক প্রতিবন্ধীরা দফতর থেকে মাসে ৭৫০ টাকা ভাতা পেতে পারেন। তবে কত জন সেই ভাতা পাবেন, সেটা ধরাবাঁধা রয়েছে। প্রাপকের কোটা ফাঁকা হলে তবেই সেই জায়গায় অন্য কেউ ভাতা পেতে পারেন। অন্যটি হল জাতীয় প্রতিবন্ধী ভাতা। সেটি পেতে হলে তিনটি ব্যাপার দরকার। দারিদ্রসীমার নীচে বসবাসকারী হতে হবে। প্রতিবন্ধকতা থাকতে হবে ৮০ শতাংশ। আর বয়স হতে হবে ন্যূনতম ১৮ বছর। কোনও নির্দিষ্ট প্রাপক সংখ্যা নেই।

তা হলে? সীতারাম বলেন, ‘‘খোদ পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতির হাতে বছর দুয়েক আগে প্রয়োজনীয় শংসাপত্র-সহ আবেদন জমা দিয়েছিলাম। প্রশাসনকে বলেছি। দলের নেতাদের বলেছি। লাভ হয়নি।’’ ওই যুবক এলাকায় তৃণমূল কর্মী হিসেবে পরিচিত। বিজেপি-র জেলা কমিটির সদস্য প্রবীর দাস বলেন, ‘‘নিজেদের দলের প্রতিবন্ধী যুবককে তৃণমূল দেখছে না। রাজ্যের অবস্থাটা কী, সেটা এর থেকেই বোঝা যাচ্ছে।’’

যদিও ময়ূরেশ্বর ২ পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি কল্যাণী দাস বলছেন, ‘‘সীতারাম হাজরা আমাদের দলীয় কর্মী ঠিকই, কিন্তু উনি আমাকে কোনও আবেদন পত্র জমা দেননি।’’ বিডিও (ময়ূরেশ্বর ২) অর্ণবপ্রসাদ মান্না বলেন, ‘‘নতুন এসেছি। খোঁজ নিয়ে যা ব্যবস্থা নেওয়ার নেব।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Handicapped Handicapped Allowance
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE