Advertisement
২৩ এপ্রিল ২০২৪

বিস্ফোরক উদ্ধার, নজরদারি নিয়ে প্রশ্ন

বেআইনি ভাবে মজুত করে রাখা প্রচুর বিস্ফোরক উদ্ধার হল রামপুরহাট থানার বারমেশিয়া এলাকার একটি পাথরভাঙা কারখানার গুদামঘর থেকে। মঙ্গলবার রাতে রামপুরহাট মহকুমা পুলিশ আধিকারিক কোটেশ্বর রাও-এর নেতৃত্বে পুলিশ গিয়ে এই বিস্ফোরকগুলি উদ্ধার করে।

উদ্ধার হওয়া জিলেটিন স্টিক ও ডিটোনেটর। —নিজস্ব চিত্র।

উদ্ধার হওয়া জিলেটিন স্টিক ও ডিটোনেটর। —নিজস্ব চিত্র।

নিজস্ব সংবাদদাতা
রামপুরহাট শেষ আপডেট: ১৫ মে ২০১৪ ০০:৩০
Share: Save:

বেআইনি ভাবে মজুত করে রাখা প্রচুর বিস্ফোরক উদ্ধার হল রামপুরহাট থানার বারমেশিয়া এলাকার একটি পাথরভাঙা কারখানার গুদামঘর থেকে। মঙ্গলবার রাতে রামপুরহাট মহকুমা পুলিশ আধিকারিক কোটেশ্বর রাও-এর নেতৃত্বে পুলিশ গিয়ে এই বিস্ফোরকগুলি উদ্ধার করে। বুধবার জেলা পুলিশ সুপার রশিদ মুনির খান বলেন, “গোপন সূত্রে খবর পেয়ে ওই গুদামে হানা দিয়ে ৪১ কার্টুন জিলেটিন স্টিক আছে (প্রতিটি কার্টুনের ওজন প্রায় ৩০ থেকে ৩৫ কেজি) ও ২১ বান্ডিল ডিটোনেটর (প্রতিটি বান্ডিলে ২৫টি করে ডিটোনেটর আছে) উদ্ধার করা হয়।” স্বপন মণ্ডল নামে এক ব্যক্তিকে আটক করে জিজ্ঞাসাবাদ চলছে বলে পুলিশ জানিয়েছে।

গত ৪ মার্চ রামপুরহাট থানার সেনবাঁধা গ্রাম থেকে ২০ প্যাকেট জিলেটিন স্টিক এবং ২৫ বান্ডিল ডিটোনেটর উদ্ধার হয়েছিল। ওই ঘটনায় পুলিশ ওই রাতেই সেনবাঁধা গ্রামের তিন যুবককে গ্রেফতার করেছে। কেউ অবশ্য জামিন পায়নি এবং সিআইডির হাতে ঘটনার তদন্তভার রয়েছে। ২০১২ সালের ১ জানুয়ারি মুরারই থানা এলাকা থেকে দুজনকে অবৈধ ভাবে বিস্ফোরক মজুত রাখার অভিযোগে গ্রেফতার করেছিল পুলিশ। জিলেটিন স্টিক, ডিটোনেটরের পাশাপাশি ২৫ কুইন্টাল অ্যামোনিয়াম নাইট্রেট উদ্ধার হয়েছিল। এ দিকে রামপুরহাট, নলহাটি, মুরারই থানাগুলি যেহেতু মাওবাদী এলাকা বলে ঘোষিত। বুধবার রামপুরহাটে এসে এসপি বলেন, “এই ঘটনার সঙ্গে মাওবাদী যোগ আছে কি না, তদন্ত করে দেখার পর বোঝা যাবে। তবে যে ভাবে ওই বিস্ফোরকগুলি আনা হয়েছিল এবং যে জায়গায় রাখা হয়েছিল তা সম্পূর্ণ অবৈধ।”

এ দিকে পরিসংখ্যান ঘেঁটে দেখা যাচ্ছে, একাধিকবার অবৈধ ভাবে মজুত বিস্ফোরক উদ্ধার কিন্তু ঝাড়খণ্ড সীমান্ত লাগোয়া পশ্চিমবঙ্গের বীরভুম জেলার এলাকা থেকেই পাওয়া যাচ্ছে। মঙ্গলবার রামপুরহাট থানার যে জায়গা থেকে ওই বিস্ফোরক উদ্ধার হয়, সেই বারমেসিয়া থেকে ঝাড়খণ্ডের শিকারিপাড়া থানার একটি গ্রামের দূরত্ব পাঁচ কিমি এবং শিকারিপাড়ার দূরত্ব ৩০ কিমি। লোকসভা নির্বাচনের সময় ঝাড়খণ্ডের শিকারিপাড়া থানা এলাকার যে জায়গায় ল্যান্ডমাইন বিস্ফোরণ ঘটেছিল, সেই জায়গার দূরত্বও রামপুরহাট থানা থেকে প্রায় ৪০ কিমি। তা হলে পুলিশের নজরদারি এড়িয়ে কী ভাবে বিস্ফোরক মজুত করা হচ্ছে, তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। এসপি রশিদ মুনির খান বলেন, “প্রাথমিক তদন্তে জানা গিয়েছে, মঙ্গলবার যে বিস্ফোরক উদ্ধার হয়েছে সেগুলি ওড়িশার রৌরকেলা থেকে আনা হয়েছে। কোন পথে, কোন গাড়িতে করে এসেছে তদন্ত করে দেখতে হবে। তবে আমাদের নজরদারি ছিল বলেই তো বিস্ফোরক উদ্ধার হয়েছে।”

তবে বিস্ফোরকগুলি মূলত পাথর খাদানে বিস্ফোরণ করানোর কাজে ব্যবহার করা হয়। রামপুরহাটের বারমেসিয়া, তেঁতুলবাঁধি, বড়পাহাড়ি, দীঘলপাহাড়ি এলাকায় পাথর শিল্পাঞ্চাল এলাকায় একমাত্র বড়পাহাড়ি এলাকায় পাথর খাদান আছে। বারমেসিয়া, তেঁতুলবাঁধি, বড়পাহাড়ি, দীঘলপাহাড়ি এলাকায় অধিকাংশ পাথরভাঙা কারখানায় পাথরের জোগান ঝাড়খণ্ডের শিকারিপাড়া থানার চিত্রাগড়িয়া, সারাসডাঙা এলাকার খাদান থেকে আসে। বড়পাহাড়ি পাথর ব্যবসায়ী মালিক সমিতির সম্পাদক সুপ্রিয় চট্টোপাধ্যায় বলেন, “আমাদের এলাকায় কুড়িটি পাথর খাদানের মধ্যে ৮-১০টি বর্তমানে চালু আছে। ওই সমস্ত খাদানে সরকার অনুমোদিত মল্লারপুরের একটি সংস্থার সঙ্গে একটি চুক্তির মাধ্যমে ওই সংস্থার লোক এসে কখনও খাদানে তাদের বিস্ফোরক রাখার মজুত ঘর (ম্যাগাজিন) থেকে বিস্ফোরক নিয়ে খাদানে বিস্ফোরণ ঘটিয়ে দেয়। আবার সংস্থার মোবাইল ভ্যান এসে খাদানে বিস্ফোরণ ঘটিয়ে দেয়।” পুলিশের দাবি, যে পাথরভাঙা কারাখানার গুদামঘর থেকে বিস্ফোরক উদ্ধার করা হয়, সেই কারখানায় বিস্ফোরক থাকার কথা নয়। কী কারণে ওই পাথরভাঙা কারখানার মালিক বিস্ফোরক রেখেছিল তার সন্ধান চালাচ্ছে পুলিশ। ওই কারখানার মালিক জহিরুল শেখেরও খোঁজ চলছে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

explosive rampurhat
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE