Advertisement
২৫ এপ্রিল ২০২৪

বলরামপুরে জয়ন্ত-খুনে এ বার ধৃত সেই ‘অপহৃত’ তৃণমূলকর্মীও

খোঁজ মিলল বলরামপুরের ‘অপহৃত’ তৃণমূল কর্মী নিমাই পরামানিকের। রবিবার তাঁকে বলরামপুরের অদূরে রাঙাডি বাজার এলাকা থেকে গ্রেফতার করে পুলিশ। এর থেকে স্পষ্ট, আদৌ অপহরণ করা হয়নি দেউলি গ্রামের বাসিন্দা নিমাইকে। বরং দেউলির কংগ্রেস কর্মী জয়ন্ত কুমার খুনের ঘটনায় নাম জড়িয়ে যাওয়ায় নিমাই এত দিন গা ঢাকা দিয়েছিলেন বলে পুলিশ সূত্রে জানা যাচ্ছে। নিমাইয়ের সঙ্গে গ্রেফতার করা হয়েছে তাঁর মেজো ভাই কানাই পরামানিক এবং যামিনী কুমারকে।

নিজস্ব সংবাদদাতা
পুরুলিয়া শেষ আপডেট: ২০ মে ২০১৪ ০০:৫৬
Share: Save:

খোঁজ মিলল বলরামপুরের ‘অপহৃত’ তৃণমূল কর্মী নিমাই পরামানিকের। রবিবার তাঁকে বলরামপুরের অদূরে রাঙাডি বাজার এলাকা থেকে গ্রেফতার করে পুলিশ। এর থেকে স্পষ্ট, আদৌ অপহরণ করা হয়নি দেউলি গ্রামের বাসিন্দা নিমাইকে। বরং দেউলির কংগ্রেস কর্মী জয়ন্ত কুমার খুনের ঘটনায় নাম জড়িয়ে যাওয়ায় নিমাই এত দিন গা ঢাকা দিয়েছিলেন বলে পুলিশ সূত্রে জানা যাচ্ছে। নিমাইয়ের সঙ্গে গ্রেফতার করা হয়েছে তাঁর মেজো ভাই কানাই পরামানিক এবং যামিনী কুমারকে।

শুক্রবার দেউলি গ্রামের অদূরে জঙ্গল এলাকা থেকে জয়ন্ত-খুনে জড়িত সন্দেহে নিমাইয়ের বাবা হলধর পরামানিক ও ছোট ভাই দয়ালকে পুলিশ ধরেছিল। তদন্তের জন্য শনিবার বাবা-ছেলেকে নিজেদের হেফাজতে নেয় পুলিশ। রবিবার নিমাই, কানাই ও যামিনীকে ধরা হয়। সোমবার তাঁদের আদালতে তোলা হলে বিচারক ছ’দিন পুলিশি হেফাজতে রাখার নির্দেশ দেন। পুরুলিয়ার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার দ্যুতিমান ভট্টাচার্য বলেন, “বলরামপুর এলাকা থেকেই ওই তিন জনকে ধরা হয়েছে। জেরা করে পাওয়া তথ্যের ভিত্তিতে ধৃতদের খুনের মামলাই আনা হয়েছে।”

ইচাডির জঙ্গলের গভীরে যে ডোবায় জয়ন্তর কাটা মুন্ডু মিলেছিল, সেখান থেকেই একটি টাঙি উদ্ধার করেছে পুলিশ। এই টাঙিটিই খুনের জন্য ব্যবহৃত হয়েছিল বলে পুলিশের দাবি। এ ছাড়া যে থলের ভিতরে জয়ন্তর কাটা মুন্ডু রাখা ছিল, তার ভিতর থেকে কিছু কাগজপত্রও পাওয়া গিয়েছে। সেগুলি কীসের কাগজ, তা পুলিশ খতিয়ে দেখবে। পাশাপাশি ধৃত কানাইয়ের কাঁধেও দাগ রয়েছে বলে ডাক্তারি পরীক্ষায় দেখা গিয়েছে।

পুলিশের দাবি, ধৃত কানাই পরামানিক জেরার মুখে কবুল করেছে, জয়ন্তর ভারী দেহ বস্তাবন্দি করে জঙ্গলে বয়ে নিয়ে যাওয়ার কারণেই কাঁধে দাগ হয়ে গিয়েছিল। অতিরিক্ত পুলিশ সুপার বলেন, “জেরায় জানা গিয়েছে, মৃত্যু নিশ্চিত করতেই ওই যুবকের মুন্ডু কেটে ফেলা হয়। তবে, খুন ঠিক কোথায় হয়েছে, তা আমরা তদন্ত করে দেখছি।”

উল্লেখ্য, গত ১২ মে সকাল থেকে জয়ন্তর খোঁজ মিলছিল না। ওই দিন দুপুরে বলরামপুর থানায় ছেলেকে অপহরণের অভিযোগ করেন জয়ন্তর বাবা মহাবীর কুমার। অভিযুক্তদের একাংশ এলাকায় তৃণমূলের কর্মী-সমর্থক হিসেবেই পরিচিত। সে দিনই বলরামপুর থানায় ব্লক কংগ্রেস সভাপতি সুভাষ দাস-সহ নয় জনের বিরুদ্ধে নিমাই পরামানিককে অপহরণের অভিযোগ দায়ের করেন তাঁর স্ত্রী তিলোত্তমা।

এখনও পর্যন্ত জয়ন্ত খুনের মামলায় মোট ৬ জনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। এখন প্রশ্ন, এত দিন কোথায় ছিলেন নিখোঁজ তৃণমূল কর্মী নিমাই? পুলিশের দাবি, জেরার মুখে নিমাই জানিয়েছেন, জয়ন্ত-খুনের পরে পরেই তিনি বাড়ির কাউকে কিছু না জানিয়ে উধাও হয়ে যান। পুলিশ সুপার নীলকান্ত সুধীরকুমার বলেন, “তদন্তে নেমে এই ব্যক্তিও খুনের ঘটনায় জড়িত বলে আমরা তথ্য পেয়েছি। তাই নিমাইকেও গ্রেফতার করা হয়েছে।”

নিমাই ধরার পড়ার খবর জেনে ব্লক কংগ্রেস সভাপতি সুভাষবাবু বলেন, “আমাদের কর্মী খুনের ঘটনায় জড়িত থারা জন্যই গা ঢাকা দিয়েছিল ওই তৃণমূল কর্মী। অথচ তাকেই অপহরণ করা হয়েছে দাবি করে আমাদের নামে অভিযোগ হল! এই অভিযোগ করানোর পিছনেও তৃণমূল যুক্ত! আমাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ করা হয়েছিল তো রাজনৈতিক কারণেই। এখন তো গোটা বিষয়টাই স্পষ্ট হয়ে যাচ্ছে। আমরা পাল্টা আইনি পথে যাচ্ছি।” তৃণমূলের ব্লক সভাপতি সৃষ্টিধর মাহাতো বলেন, “আমরা খোঁজ নিয়ে জেনেছি, এই খুনের পিছনে গ্রাম্য বিবাদ রয়েছে। এটা কোনও ভাবেই রাজনৈতিক খুন নয়।” তৃণমূল রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত ভাবে সুভাষবাবুদের বিরুদ্ধে অপহরণের অভিযোগ দায়ের করিয়েছে, কংগ্রেসের এই অভিযোগ উড়িয়ে দিয়ে সৃষ্টিধরবাবু বলেন, “গ্রামে অনেকেই নানা দল করেন। আবার তাঁরা বিভিন্ন ঝামেলাতেও জড়ান। তার মানে এই নয় যে, তৃণমূলের কেউ কোনও ঘটনায় জড়িত রয়েছেন অভিযোগ উঠলেই মনে করা হবে ওই ঘটনার পিছনে দল হিসাবে তৃণমূল রয়েছে। তৃণমূল হিংসার রাজনীতিতে বিশ্বাস করে না।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE