Advertisement
২৩ এপ্রিল ২০২৪

শব্দ-দানবের দাপট কমেছে পুরুলিয়ায়

শব্দ-দূষণের প্রথম বলির জেলা পুরুলিয়ায় এ বার কিছু বিচ্ছিন্ন ঘটনা বাদ দিলে কালীপুজোর রাত মোটের উপরে শান্তিতেই কাটল। পুলিশের দাবি, কালীপুজোর আগে শব্দবাজি বন্ধে গোটা জেলা জুড়ে লাগাতার অভিযান চালিয়েই এই সাফল্য। একই সঙ্গে বাইরে থেকে জেলায় শব্দবাজি ঢোকা আটকানোয় জোড় দেওয়ায় নিষিদ্ধ শব্দবাজি ব্যাপক সংখ্যায় বিক্রি আটকানো গিয়েছে।

নিজস্ব সংবাদদাতা
রঘুনাথপুর ও পুরুলিয়া শেষ আপডেট: ২৫ অক্টোবর ২০১৪ ০০:২৫
Share: Save:

শব্দ-দূষণের প্রথম বলির জেলা পুরুলিয়ায় এ বার কিছু বিচ্ছিন্ন ঘটনা বাদ দিলে কালীপুজোর রাত মোটের উপরে শান্তিতেই কাটল। পুলিশের দাবি, কালীপুজোর আগে শব্দবাজি বন্ধে গোটা জেলা জুড়ে লাগাতার অভিযান চালিয়েই এই সাফল্য। একই সঙ্গে বাইরে থেকে জেলায় শব্দবাজি ঢোকা আটকানোয় জোড় দেওয়ায় নিষিদ্ধ শব্দবাজি ব্যাপক সংখ্যায় বিক্রি আটকানো গিয়েছে।

পুরুলিয়ার পুলিশ সুপার নীলকান্ত সুধীর কুমার বলেন, “কালী পুজোর আগে থেকেই আগাম সর্তকতামূলক ব্যবস্থা হিসাবে সব থানা এলাকায় নিষিদ্ধ শব্দবাজি বিক্রি বন্ধে অভিযান চালানো হয়। বিপুল পরিমাণে শব্দবাজি আটক করা হয়েছে। এ ছাড়া ব্যানার ও ফেস্টুুনের সাহায্যে নিষিদ্ধ শব্দবাজি না ফাটানোর জন্য আবেদন জানিয়েছিলাম আমরা।”

তবে জেলার বেশিরভাগ এলাকায় শব্দবাজির দৌরাত্ম্য কম থাকলেও ব্যতিক্রম ছিল ঝালদা শহর ও রঘুনাথপুর শহরের একাংশ। বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা থেকে গভীর রাত পর্যন্ত দূষণ নিয়মন্ত্রণ পর্ষদের নিয়ম ও পুলিশের চোখ রাঙানিকে বুড়ো আঙুল দেখিয়েই দেদার শব্দবাজি ফাটানো হয়েছে বলে অভিযোগ ওইসব এলাকার বাসিন্দার। রঘুনাথপুর থানার পুলিশ অবশ্য দাবি করেছে, নিষিদ্ধ বাজি ফাটানো নিয়ে কোনও অভিযোগ থানায় জমা পড়েনি। যদিও বাসিন্দাদের প্রশ্ন, এলাকার ছেলেরা বাজি ফাটালে তাদের ভয়ে ক’জনই বা থানায় অভিযোগ জানাতে যায়?

গত বছরেও নিষিদ্ধ শব্দবাজির যথেচ্ছ অত্যাচার সহ্য করতে হয়েছিল জেলাবাসীকে। কিন্তু এ বার পুরুলিয়া শহর থেকে শুরু করে আদ্রা, সাঁওতালডিহি, মানবাজার, হুড়া সর্বত্রই পিলে চমকানো আওয়াজের বাজির পরিবর্তে চোখে পড়েছে তুবড়ি, হাউই, রকেট, কালি ফটকা ফাটানোর ছবি। রেল শহর আদ্রায় জাঁকজমক সহকারেই কালীপুজো হয়। তাই আদ্রায় বরাবরই শব্দবাজি বেশি পরিমাণে ফাটানো হয়। কিন্তু এ বার গভীর রাতের দিকে বিক্ষিপ্ত ভাবে কিছু এলাকায় বাজি ফাটানোর ঘটনা দেখা গেলেও মোটের উপরে বিকট শব্দের বাজির অত্যাচার ছিল না বললেই চলে।

২০০৮ সালে সাঁওতালডিহি থানা এলাকায় কালীপুজোর সময় শব্দ-বাজির দাপটে অতিষ্ঠ এক প্রৌঢ় প্রতিবাদ জানিয়েছিলেন। ফল হয়েছিল উল্টো। তাঁকে প্রচণ্ড মারধর করা হয়। শেষ পর্যন্ত ওই ব্যক্তি মারা যান। সেই রঘুনাথপুর মহকুমা এলাকারই আদ্রার দীর্ঘদিনের বাসিন্দা অমল ত্রিবেদীর অভিজ্ঞতা, “প্রতি বছরই শব্দবাজির অত্যাচারে পুজোর রাতে বাড়িতে থাকা দায় হতো। খালি চমকে চমকে উঠতে হতো। বয়স্কদের বুক ধড়ফড় করত। এ বার কিন্তু সে ভাবে বাজির অত্যাচার সহ্য করতে হয়নি। হয়তো পুলিশ সক্রিয় ছিল বলেই এই পরিবর্তন।”.একই অভিজ্ঞতা পুরুলিয়া শহরের আমডিহার বাসিন্দা হিন্দোল দত্ত, নামোপাড়ার বধূ মিঠু সরকারের। তাঁদের কথায়, “আগে রাস্তা ঘাটে শব্দবাজির উপদ্রবে অতিষ্ঠ হতে হতো। এ বার কিন্তু সেই বিকট শব্দের বাজি অনেকটাই কম ফেটেছে। পরিবর্তে আতসবাজির আলো অনেক বেশি দেখা গিয়েছে।”

পুলিশের ধরপাকড়ের ভয়েই এ বার নিষিদ্ধ শব্দবাজি বিক্রি করার পথে যাননি বলে জানাচ্ছেন বহু ব্যবসায়ীই। নামপ্রকাশে অনিচ্ছুক আদ্রা, পুরুলিয়ার কিছু ব্যবসায়ীর কথায়, “বেশি আওয়াজের চকলেট বোম সামান্য পরিমাণে এনেছিলাম। কিন্ত সেগুলি খুব পরিচিতদের ছাড়া বিক্রি করিনি।” হুড়ার দুই ব্যবসায়ী কানাই দত্ত ও সুধা কুণ্ডু বলেন, “নিষিদ্ধ শব্দবাজি বিক্রি করলে পুলিশ হয়রান করবে বলেই এ বার সেই বাজি বিক্রির দিকে যাইনি।”

তবে ব্যতিক্রমী ঘটনা হিসাবে বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা থেকে গভীর রাত পর্যন্ত ব্যাপক শব্দবাজি ফেটেছে ঝালদার বাঁধাঘাট, আনন্দবাজার, বীরসা মোড়, নামোপাড়া এলাকায়। স্থানীয় বাসিন্দা কৃষ্ণ কান্দু বলেন, “সন্ধ্যা থেকে গভীর রাত অবধি সেই বিকট শব্দের আওয়াজের বাজি দেদার ফেটেছে।” রঘুনাথপুর শহরের আট নম্বর ওয়ার্ড-সহ কিছু ওয়ার্ডের একাংশে নিষিদ্ধ বাজি ফাটানো হয়েছে বলে অভিযোগ বাসিন্দাদের। জেলা পুলিশের এক কর্তা বলেন, “পুজোতে শব্দবাজি ফাটানোর সময়ে ঘটনাস্থলে গিয়ে দোষীদের ধরা আদৌও সম্ভবপর নয়। সে ক্ষেত্রে নানা সমস্যা তৈরি হয়। তাই নিষিদ্ধ বাজি যাতে বাজারে বিক্রি না হতে পারে, সে দিকেই জোর দেওয়া হয়েছিল। তাতেই অনেকটা রাশ টানা গিয়েছে।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE