করণদিঘিতে জাতীয় সড়কে যানজট। ইনসেটে, ইসলামপুরে সংস্কার হচ্ছে রাস্তা। — নিজস্ব চিত্র।
মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের উত্তরবঙ্গ সফরের কথা মাথায় রেখে যুদ্ধকালীন তৎপরতায় জাতীয় সড়ক মেরামতির কাজ করলেন জাতীয় সড়ক কর্তৃপক্ষ। শুক্রবার রাত থেকে ওই মেরামতির জন্য পুলিশ জাতীয় সড়কের একদিক বন্ধ করে যান চলাচল নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করে। লক্ষাধিক গাড়ির চাপে সেই চেষ্টা ব্যর্থ হয়। তার জেরে জাতীয় সড়কে প্রায় ১৪ ঘণ্টা ধরে যানজটের জেরে দুর্ভোগে পড়লেন নিত্যযাত্রীরা। যানজটের মধ্যেই একটি ট্যাঙ্কার উল্টে যাওয়ায় ফের যানজটের আশঙ্কায় শনিবার রায়গঞ্জ-শিলিগুড়ি রুটে বেসরকারি বাস চলাচল বন্ধ রাখতে বাধ্য হন বাস মালিকেরা।
সড়ক মেরামতির কাজের জন্য শুক্রবার রাত আটটা থেকে শনিবার বেলা ১০টা পর্যন্ত রায়গঞ্জের পানিশালা থেকে করণদিঘি থানার ডালখোলার পূর্ণিয়া মোড় পর্যন্ত ৪০ কিলোমিটার ৩৪ নম্বর জাতীয় সড়কে তীব্র যানজটের সৃষ্টি হয়। রাস্তার দুপাশে আটকে পড়ে শিলিগুড়ি-সহ উত্তরপূর্ব ভারতের বিভিন্ন এলাকা থেকে কলকাতা ও দক্ষিণবঙ্গগামী কয়েকশো বাস, ট্রেকার-সহ লক্ষাধিক ট্রাক। এ দিন সকালে যানজট এড়াতে কলকাতাগামী একটি ট্যাঙ্কার রাস্তার ধারের ফাঁকা জমি দিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করলে নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে করণদিঘির নাগর এলাকায় সেটি উল্টে যায়। দুপুর পর্যন্ত পরিস্থিতি পুরোপুরি স্বাভাবিক হয়নি। রায়গঞ্জের রবীন্দ্রপল্লি এলাকার বাসিন্দা একটি বেসরকারি সংস্থার বিপণন কর্মী চন্দন মোহান্ত শুক্রবার সন্ধ্যা সাতটা নাগাদ কাজ সেরে চাকুলিয়া থানার কানকি থেকে রায়গঞ্জগামী একটি বেসরকারি বাসে ওঠেন। যানজটের জেরে ৬০ কিলোমিটার দূরে রায়গঞ্জে পৌঁছতে দেড় ঘণ্টার জায়গায় তাঁর আট ঘণ্টা সময় লেগেছে। চন্দনবাবুর ক্ষোভ, ‘‘মুখ্যমন্ত্রীর সড়ক যাত্রাকে নির্বিঘ্নে শেষ করতে প্রশাসন রাতারাতি রাস্তা মেরামতির কাজ শুরু করিয়ে যানজট তৈরি করে হাজার হাজার যাত্রীকে ১৪ ঘণ্টা ধরে দুর্ভোগে ফেললেন।’’
জেলাশাসক রণধীর কুমার বলেন, ‘‘মুখ্যমন্ত্রী যাতে নির্বিঘ্নে শিলিগুড়ি যেতে পারেন, সে জন্য জাতীয় সড়ক কর্তৃপক্ষকে দ্রুত সড়ক মেরামতির অনুরোধ করা হয়েছিল। সেই মতো তাঁরা কাজও শেষ করেছেন।’’ তবে জাতীয় সড়কে যানজটের বিষয়টি তিনি জানেন না বলে দাবি করেন রণধীর। পুলিশ সুপার সৈয়দ ওয়াকার রেজা অবশ্য বলেন, ‘‘শুক্রবার রাত থেকে জাতীয় সড়কে যানজট ছিল। পুলিশের তত্পরতায় দুপুরের মধ্যে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়েছে।’’
তবে স্বাভাবিক হওয়ার আগে চরম ভোগান্তি পোহাতে হয় যাত্রীদের। অনেক যাত্রী রাতভর গাড়ি থেকে নেমে রাস্তার ধারে দাঁড়িয়ে ছিলেন। অনেকে আবার গাড়ি থেকে নেমে কী কারণে যানজট ও কখন যানজট সমস্যার সমাধান হবে সেই বিষয়ে খোঁজখবর নেওয়ার চেষ্টা করেন। শিলিগুড়ি থেকে কলকাতাগামী সরকারি ও বেসরকারি বহু যাত্রীবাহী বাস যানজটের জেরে রাতভর রাস্তায় আটকে পড়ে। বিভিন্ন এলাকায় রাস্তার ধারে হোটেল বা ধাবা না থাকায় যাত্রীরা না খেয়ে থাকতে বাধ্য হন। করণদিঘি, টুঙ্গিদিঘি ও নাগর এলাকায় বহু যাত্রী এক থেকে দেড় কিলোমিটার হেঁটে বিভিন্ন হোটেল ও ধাবায় গিয়ে খাবার খান। এ দিন সকাল ১০টা পর্যন্ত করণদিঘি থানার বিভিন্ন এলাকার জাতীয় সড়কে যানজট থাকায় সকাল ৬টা থেকে কলকাতা থেকে শিলিগুড়িগামী বহু বাস ওই যানজটে আটকে পড়ে। তবে ১০টার পর ধীরে ধীরে যান চলাচল স্বাভাবিক হওয়ায় পরে গাড়িগুলি শিলিগুড়ি রওনা হয়।
রায়গঞ্জের বীরনগর এলাকার বাসিন্দা গৃহবধূ সোনালি সাহা শুক্রবার বিকেল ৫টা নাগাদ শিলিগুড়ি থেকে রায়গঞ্জ আসার জন্য কলকাতাগামী একটি বেসরকারি বাসে উঠেছিলেন। ওই বাসটিও রাত সাড়ে ৮টা নাগাদ ডালখোলা এলাকার যানজটে আটকে যায়। তাঁর ক্ষোভ, ‘‘ডালখোলা থেকে বাসে রায়গঞ্জে যেতে দেড় ঘণ্টা সময় লাগে। সেখানে যানজটের জেরে এ দিন ভোর সাড়ে চারটা নাগাদ বাসটি রায়গঞ্জে এসে পৌঁছয়। সারারাত বিভিন্ন এলাকায় দীর্ঘক্ষণ থেমে থেমে ও অত্যন্ত ধীরগতিতে বাস চলেছে।’’ শৌচাগার ও পানীয় জলের অভাবে বহু যাত্রী চরম নাকাল হয়েছেন। অনেকের খিদে পেয়ে গেলেও কাছাকাছি হোটেল বা ধাবা না থাকায় তাঁরা খাবার পর্যন্ত পাননি।
প্রশাসনিক সূত্রের খবর, আগামী ১৬ জুন মালদহ থেকে সড়কপথে রায়গঞ্জে এসে কর্ণজোড়ায় দুই দিনাজপুরের পুলিশ ও প্রশাসনিক আধিকারিকদের সঙ্গে বৈঠক করার কথা রয়েছে মুখ্যমন্ত্রীর। দুপুর তিনটে নাগাদ সড়কপথে তিনি শিলিগুড়ি রওনা হবেন বলে জানা গিয়েছে। সন্ধ্যা ৬টায় উত্তরবঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয়ে মুখ্যমন্ত্রীর আরেকটি প্রশাসনিক সভায় যোগ দেওয়ার কথা রয়েছে। জেলা বাস ও মিনিবাস ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের যুগ্ম সম্পাদক প্লাবন প্রামাণিকের ক্ষোভ, ‘‘দুমাস ধরে ধীরে ধীরে জাতীয় সড়ক মেরামতির কাজ চালু থাকলে এতক্ষণ যানজটে যাত্রীদের দুর্ভোগ ও হয়রানির শিকার হতে হতো না।’’
জাতীয় সড়ক সংস্কার সংস্কারের বিষয়ে অবশ্য ৩১ নম্বর জাতীয় সড়কের ম্যানেজার এস কে চৌধুরী বলেন, ‘‘ইসলামপুরের জাতীয় সড়কের মধ্যে গর্ত তৈরী হয়ে গিয়েছিল। তা ছাড়া কোনও ভিআইপি আসলে তো রাস্তা ঠিক করতেই হতো। সেই কারণেই সামান্য রাস্তার সংস্কারের কাজ করা হচ্ছে। ইসলামপুর শহরে বাইপাসের নিয়ে ১ কিলোমিটার বাদে বাকি জমির সমস্যা মিটেছে। শীঘ্রই তাও মিটে যাবে বলে জানা গিয়েছে। তবে ওই এলাকাতে জাতীয় সড়কের জন্য সাড়ে ৯ কোটি টাকা অনুমোদন হয়েছে। ইসলামপুরের বাইপাসের কাজ খুব শীঘ্রই শুরু হবে।’’
ইসলামপুরের সিপিএম এর লোকাল কমিটির সম্পাদক বিকাশ দাস বলেন, ‘‘মুখ্যমন্ত্রী জাতীয় সড়ক দিয়ে শিলিগুড়ি না গেলে ভরা বর্ষায় ভোগান্তির শিকার হতেন সাধারণ মানুষ।’’ তবে ইসলামপুরে জাতীয় সড়কের বাইপাস তৈরি-সহ ইসলামপুরের জাতীয় সড়কের নতুন করে তৈরীর দাবি নিয়ে আজ, ১৪ জুন কনভেনশনের ডাক দিয়েছে সিপিএমের ইসলামপুর লোকাল কমিটি। পুরসভার চেয়ারম্যান কানাইয়ালাল অগ্রবাল বলেন, ‘জাতীয় সড়কের কাজ হচ্ছে, তা জেনেও ভাল লাগল। তবে আরও আগে কাজটা হওয়ার দরকার ছিল। মুখ্যমন্ত্রী আসবেন বলেই ১৬ তারিখের মধ্যে কাজটি করানো হচ্ছে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy