Advertisement
E-Paper

হবে সিমেন্ট কারখানা, আশায় শালবনি

ইস্পাত প্রকল্প স্থগিত হয়ে যাওয়ার পর থেকেই গাঢ় হয়েছিল হতাশার অন্ধকার। প্রাথমিকভাবে সিমেন্ট কারখানা তৈরির কথা ঘোষণা হওয়ায় ফের আশার আলো দেখছে শালবনি।

সুমন ঘোষ

শেষ আপডেট: ০৬ অক্টোবর ২০১৫ ০১:৩৩
এক সময় গমগম করত শালবনির এই কারখানা চত্বর। —নিজস্ব চিত্র।

এক সময় গমগম করত শালবনির এই কারখানা চত্বর। —নিজস্ব চিত্র।

ইস্পাত প্রকল্প স্থগিত হয়ে যাওয়ার পর থেকেই গাঢ় হয়েছিল হতাশার অন্ধকার। প্রাথমিকভাবে সিমেন্ট কারখানা তৈরির কথা ঘোষণা হওয়ায় ফের আশার আলো দেখছে শালবনি।

২০১৪ সালের ৩০ নভেম্বর জেএসডব্ল্যুর চেয়ারম্যান ও ম্যানেজিং ডিরেক্টর সজ্জন জিন্দল শালবনির ইস্পাত কারখানা স্থগিত হওয়ার কথা ঘোষণা করেন। তবে সিমেন্ট তৈরির কারখানার কথা ঘোষণা হলেও রয়েছে অনেক প্রশ্নও। চাষিদের কাছ থেকে সরাসরি কিনে নেওয়া ২৯৪ একর জমি ফেরত দিয়ে দেওয়া হবে বলে জানিয়েছেন সজ্জন জিন্দল। যাতে রাজি নন স্থানীয় মানুষ। শালবনি জেএসডব্ল্যু ল্যান্ড লুজার ওয়েলফেয়ার অ্যাসোসিয়েশনের সম্পাদক পরিষ্কার মাহাতো বলেন, ‘‘আমরা জমি ফেরত নেওয়ার জন্য তো জমি দিইনি। আমরা চাই কারখানা হোক। ইস্পাতের কারখানাই হতে হবে এমন নয়। যে কোনও কারখানা হোক। কারখানার বেকার যুবকরা কাজ পেলে এলাকার সামাজিক ও অর্থনৈতিক পরিস্থিতিরও বদল ঘটবে।’’

যদি তা না-ই হয় তাহলে ফের আন্দোলনের পথেই হাঁটবেন জমিদাতারা। সিমেন্ট কারখানার বিষয়ে পরিষ্কারবাবুর বক্তব্য, ‘‘আমরা এখন বিভিন্ন সংবাদপত্র থেকে নানা তথ্য জানতে পারছি। কিন্তু এখনও সরাসরি আমাদের কিছু জানানো হয়নি। জিন্দল কর্তৃপক্ষ আমাদের কাছে এ বিষয়ে জানানোর পরেই আলোচনার মাধ্যমে পরবর্তী পদক্ষেপ স্থির করব।’’

কী বলছেন শালবনির সাধারণ মানুষ?

স্থানীয় যুবক আনন্দ মাহাতোর কথায়, ‘‘জমি দিয়েছিলাম চাকরির আশায়। প্রশিক্ষণও দিয়েছিলেন জিন্দল কর্তৃপক্ষ। এখন যদি বলেন জমি ফিরিয়ে নাও, চাকরি হবে না, এটা কী করে মেনে নেব।’’ প্রশিক্ষণ নেওয়া আনন্দ রায় বলেন, ‘‘প্রশিক্ষণ নিতে কর্ণাটকের বল্লরিও গিয়েছিলাম। স্বপ্ন ছিল, চাকরি হবেই। এই নিশ্চিত আশ্বাস এখন ভুলব কী ভাবে?’’ এলাকার মানুষের একটাই দাবি, কারখানা করতে হবে। জমি ফেরত দিলে চলবে না। পরিষ্কারবাবুর কথায়, ‘‘কারখানার দাবিতেই আমরা আন্দোলন করেছিলাম। জমি ফেরত পাওয়ার জন্য নয়। কিন্তু কী ভাবে জমি ফেরতের এই ভুল বার্তা গেল তা বুঝতে পারছি না।’’

২০০৬ সালে প্রথম কারখানা তৈরির জন্য উদ্যোগ নেওয়া হয় শালবনিতে। ২০০৭ সালে শুরু হয় জমি নেওয়ার কাজ। শালবনি থানা এলাকার বাকিবাঁধ, বাঁশকোপনা, আসনাশুলি, বরজু, শালডাংরা, নূতনডিহি চন্দনকাঠা, আড়াবাড়ি এলাকায় ৪ হাজার ৩৩৪ একর জমি নেওয়া হয়। ২৯৪ একর জমি সরাসরি চাষিদের কাছ থেকে কিনে নেন কর্তৃপক্ষ। তখনই কারখানার শেয়ার দেওয়া, বেকার যুবকদের চাকরি দেওয়ার কথাও ঘোষণা করা হয়। ২০০৮ সালের ২ নভেম্বর শিলান্যাস অনুষ্ঠান শেষে ফেরার পথে রাজ্যের তত্‌কালীন মুখ্যমন্ত্রী বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যের কনভয়ে ল্যান্ডমাইন বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটে। তারপর থেকেই বারেবারে ধাক্কা খেয়েছে প্রকল্প। আবার কিছু কিছু ক্ষেত্রে কাজও এগিয়েছে। প্রকল্প এলাকায় ৩৬ কিলোমিটার পাঁচিল হয়েছে। এলাকায় আবাসনও হয়েছে। গ্রামীণ মানুষদের চিকিত্‌সা পরিষেবা দেওয়ার ব্যবস্থাও করা হয়েছে। প্রকল্পের জমিদাতা বিষ্টু চালকের কথায়, ‘‘৩ বিঘে ৬ কাঠা জমি দিয়েছি। রয়েছে আর মাত্র ৫ কাঠা। এখন মজুর খেটে খাই। কারখানা হলে যে সবার উন্নতি হবে। তাই আমরা জমি ফেরত নয়, কারখানাই চাই।’’

ইস্পাত কারখানা কবে হবে সে বিষয়ে অবশ্য কোনও আশ্বাস দিতে পারেননি সজ্জন জিন্দল। এ ক্ষেত্রে আকরিক লোহার মতো প্রধান কাঁচামালের জোগান অনিশ্চিত বলে তা করতে পারছেন না, এমনটাই জানিয়েছেন তাঁরা। তারই সঙ্গে এখানে বিদ্যুত্‌ উত্‌পাদন ও সিমেন্ট কারখানা তৈরির কথা ছিল। আগামী বছরেই সিমেন্ট তৈরির কারখানার শিলান্যাস করা হবে বলে কর্তৃপক্ষ জানিয়েছেন। কারখানা হোক, তাতে এক মত সকলেই। তবে জমি ফেরত নিতে নারাজ শালবনি।

sumon ghosh salbani cement factory cement factory salbani hope salbani cement
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy