Advertisement
২৪ এপ্রিল ২০২৪

‘ওর পরিবারেরও সাজা হওয়া উচিত, ওরাই তো এমন ছেলে তৈরি করেছে!’

তারই মধ্যে টিভির পর্দায় ভেসে এল খবরটা— সত্যজিৎ বিশ্বাস খুনে মূল অভিযুক্ত অভিজিৎ পুণ্ডারী পাকড়াও হয়েছে পশ্চিম মেদিনীপুরের রাধামোহনপুর স্টেশনে। তার পরেই পাড়ার জটলায়, ঘরে-বাইরে সোমবার দিনভর ফিরেছে সেই একই প্রসঙ্গ। 

সত্যজিৎ বিশ্বাসের মা অঞ্জনা বিশ্বাস। ছবি: সুদীপ ভট্টাচার্য

সত্যজিৎ বিশ্বাসের মা অঞ্জনা বিশ্বাস। ছবি: সুদীপ ভট্টাচার্য

সুস্মিত হালদার
হাঁসখালি শেষ আপডেট: ১৯ ফেব্রুয়ারি ২০১৯ ০২:৪১
Share: Save:

এখনও গাঁয়ের হাওয়ায় পাক খাচ্ছে ঝিমধরা শোক।

তারই মধ্যে টিভির পর্দায় ভেসে এল খবরটা— সত্যজিৎ বিশ্বাস খুনে মূল অভিযুক্ত অভিজিৎ পুণ্ডারী পাকড়াও হয়েছে পশ্চিম মেদিনীপুরের রাধামোহনপুর স্টেশনে। তার পরেই পাড়ার জটলায়, ঘরে-বাইরে সোমবার দিনভর ফিরেছে সেই একই প্রসঙ্গ।

এক সময়ে যে বাড়ি গমগম করত ভিড়ে, এখন তা সুনসান। ঘনিষ্ঠ দু’এক জন ইতিউতি। রাস্তা থেকে বাড়িতে ঢুকতে উঠোনের বাঁ দিকে সত্যজিতের টিনের অফিস ঘর। তা-ও এখন ফাঁকা। দুপুরে মায়ের আশপাশে নিজের মনে খেলে বেড়াচ্ছিল সত্যজিতের দেড় বছরের ছেলে সৌম্যজিৎ। তার দিকে চোখ রেখেই সত্যজিৎ-জায়া রূপালী বলেন, “ওর পরিবারের লোকেরও সাজা হওয়া উচিত। ওরাই তো এমন ছেলে তৈরি করেছে!’’ অফিসঘরের মুখে প্লাস্টিকের চেয়ার পেতে বসে ছিলেন সত্যজিতের ছোট ভাই সুমিত। দাদার সর্বক্ষণের সঙ্গী। গত ৩ ফেব্রুয়ারি হাঁসখালির ফুলবাড়ি গ্রামে বাড়ির কাছেই সরস্বতী পুজোর অনুষ্ঠানে যখন সত্যজিৎকে গুলি করা হয়, তিনি ছিলেন না। এ দিন অভিজিৎ ধরা পড়েছে শুনে তিনি প্রায় ডুকরে ওঠেন, “আমি থাকলে দাদাকে ওরা কিছুতেই মারতে পারত না। কেন যে তখন বাচ্চাগুলোর জন্য খেলনা কিনতে গেলাম?”

এ দিনই সৌম্যজিতের নামে পাঁচ লক্ষ টাকার জীবন বিমা পলিসি পাঠিয়েছেন তৃণমূলের অন্যতম শীর্ষ নেতা তথা রাজ্যের পরিবহণ মন্ত্রী শুভেন্দু অধিকারী। তৃণমূলের জেলা সভাপতি গৌরীশঙ্কর দত্তের ছেলে অয়ন দত্ত তা রূপালীর হাতে পৌঁছে দিয়েছেন। দুপুরের দিকে কৃষ্ণগঞ্জ থেকে কিছু তৃণমূল নেতা এসে অফিস ঘরে রাখা সত্যজিতের ছবিতে মালা দিয়ে গিয়েছেন। এ ছাড়া আর কোনও নড়াচড়া নেই। গোটা বাড়ি জুড়ে চেপে বসে আছে শোক। ছেলের খুনের খবর শুনে সে দিন পাগলের মতো শক্তিনগর জেলা হাসপাতালে ছুটে গিয়েছিলেন অঞ্জনা বিশ্বাস। তার পর থেকেই তিনি প্রায় শয্যা নিয়েছেন। নিজের মনে কথা বলে চলেছেন। কখনও কখনও তা কিছুটা অসংলগ্নও। প্রায় অন্ধকার ঘরে একাই শুয়েছিলেন বৃদ্ধা। অভিজিৎ ধরা পড়েছে শুনে উঠে বসেন। কিন্তু মুহূর্তের উত্তেজনা মুহূর্তেই থিতিয়ে যায়। নিস্তেজ গলায় বলেন, ‘‘ধরা পড়লেই বা কী হবে? ছেলেকে কি ফিরিয়ে দিতে পারবে?”

মজিদপুরের মোড়ে তখন ছোট্ট জটলা। সকলেই জানতে চায়, কতটা শাস্তি হতে পারে অভিজিতের? এত দিন সে লুকিয়েই বা ছিল কোথায়? খুনের রাতেই তার বাড়িতে ভাঙচুর হয়েছিল। এখনও সেই অবস্থাতেই পড়ে আছে। অভিজিতের জেঠা রঞ্জিত পুণ্ডারীর অভিযোগ, অভিযুক্তের মা ঝর্না পুণ্ডারীকে ধরে নিয়ে গিয়েছিল পুলিশ। পরে বাবা অজিৎ পুন্ডারীও থানায় হাজিরা দেন। রঞ্জিত বলেন, “দাদা-বৌদিকে ওরা এখনও ছাড়েনি। অভিজিৎ গ্রেফতার হয়েছে, শুনলাম। আইনে যা হওয়ার তাই হবে।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Satyajit Biswas TMC MLA Murder
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE