প্রক্রিয়া চালু আছে ঠিকই। কিন্তু লোকসভার প্রাক্তন স্পিকার সোমনাথ চট্টোপাধ্যায়ের সিপিএমে প্রত্যাবর্তন সম্ভব হতে পাড়ি দিতে হবে এখনও বেশ কিছু পথ!
প্রয়াত প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী জ্যোতি বসুর ১০২তম জন্মদিন পালনের অবসরে বুধবার রাতে কলকাতায় সিপিএমের সাধারণ সম্পাদক সীতারাম ইয়েচুরি বলেছিলেন, ‘‘কাউকে দলে ফিরিয়ে নেওয়ার ক্ষেত্রে সিপিএমে কিছু নির্দিষ্ট প্রক্রিয়া আছে। সেই প্রক্রিয়া সম্পূর্ণ হলেই আপনারা খবর পাবেন!’’ সিপিএম থেকে সোমনাথবাবুর বহিষ্কৃত হওয়া ইস্তক গত ৭ বছরে এই প্রথম দলের শীর্ষ নেতৃত্বের তরফে এতটা ‘ইতিবাচক’ প্রতিক্রিয়া পাওয়া গিয়েছে প্রাক্তন স্পিকারের প্রত্যাবর্তনের ব্যাপারে। তার আগে বিধাননগরে ওই মঞ্চের আড়ালেই সিপিএমের কয়েক জন রাজ্য নেতা ইয়েচুরির কাছে আর্জি জানিয়েছিলেন, এখান থেকেই সোমনাথবাবুর বিষয়ে কোনও ঘোষণা করে দেওয়া হোক! ইয়েচুরি তাঁদের বোঝান, দলের কেন্দ্রীয় স্তরে কোনও সিদ্ধান্তের আগে এমন ঘোষণা তাঁর পক্ষে করা সম্ভব নয়। শেষ পর্যন্ত সব দিক সামলাতে সংবাদমাধ্যমের সামনে ইঙ্গিতপূর্ণ মন্তব্য করে আপাতত সামাল দিয়েছেন ইয়েচুরি। কিন্তু সিপিএমের অন্দরের খবর, জটিলতা এখনও কাটেনি। তাই চূড়ান্ত সময়সীমাও বলার উপায় নেই!
সোমনাথবাবুকে ফেরানো কি এখন শুধু সময়ের অপেক্ষা? এই প্রশ্নের জবাবে দলের রাজ্য সম্পাদক সূর্যকান্ত মিশ্র বৃহস্পতিবার বিশেষ কোনও মন্তব্য করতে চাননি। তবে বুঝিয়ে দিয়েছেন, ‘‘এ ব্যাপারে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত কেন্দ্রীয় নেতৃত্বই নিতে পারেন।’’ দলের পলিটব্যুরোর তরফেও গোটা বিষয়টি দেখভালের দায়িত্ব নিয়েছেন স্বয়ং সাধারণ সম্পাদক ইয়েচুরি। কিন্তু দলে ফেরার জন্য সোমনাথবাবু কোনও ধরনের আবেদনই করলেন না, আবার নিয়ম মেনেই তাঁর প্রত্যাবর্তনের রাস্তা পরিষ্কার করা হল— এমন কোনও রফাসূত্রে এখনও পৌঁছনো যায়নি বলেই সিপিএম সূত্রের খবর। এমনকী, দলের রাজ্য সম্পাদকমণ্ডলীর মধ্যেও এই প্রশ্নে সম্পূর্ণ ঐকমত্য এখনও গড়ে ওঠেনি। জ্যোতিবাবুর অন্যতম প্রিয় শিষ্যকে ফিরিয়ে নেওয়ার ব্যাপারে কোনও প্রস্তাব রাজ্য স্তরে পাশ করাতে হলে একেবারে সর্বসম্মতির ভিত্তিতেই তা করাতে চাইছে আলিমুদ্দিন।
পরমাণু চুক্তি ঘিরে বামেরা যখন ইউপিএ-১ সরকার থেকে সমর্থন প্রত্যাহার করে নেয়, সেই সময়ে দলের সিদ্ধান্ত মেনে লোকসভার স্পিকার পদ থেকে সরে দাঁড়াতে চাননি সোমনাথবাবু। তাঁর যুক্তি ছিল, স্পিকারের পদ দলীয় রাজনীতির ঊর্ধ্বে। দলীয় শৃঙ্খলা না মানার দায়ে প্রকাশ কারাটেরা দিল্লিতে উপস্থিত পলিটব্যুরো সদস্যদের মধ্যে আলোচনা করে সোমনাথবাবুকে বহিষ্কারের সিদ্ধান্ত ঘোষণা করেন। পরে কেন্দ্রীয় কমিটি তা অনুমোদন করে। এখন চেষ্টা চলছে, পশ্চিমবঙ্গের রাজ্য কমিটির তরফে সোমনাথবাবুকে ফিরিয়ে নেওয়ার পক্ষে একটি প্রস্তাব গ্রহণ করে তা পলিটব্যুরোর বিবেচনার জন্য পাঠাতে। কিন্তু সেই উদ্যোগের পথে কিছু জট বহাল।
প্রথম বাধা সিপিএমের অন্দরেই। এ রাজ্য থেকেই দলের অন্তত তিন জন কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য রাজ্য নেতৃত্বের অভ্যন্তরীণ আলোচনায় প্রশ্ন তুলেছেন, সোমনাথবাবুকে বহিষ্কার করা হয়েছিল দলের লাইন না মানার জন্য। তার পরে ৭ বছরে তিনি তার জন্য দুঃখপ্রকাশ বা অনুতাপ দেখাননি। বরং, নিজের বইয়ে দলের তৎকালীন সাধারণ সম্পাদক কারাটকে তুলোধোনা করেছেন। এর পরেও সোমনাথবাবুর দিক থেকে কোনও রকম মনোভাব পরিবর্তন ছা়ড়াই তাঁকে দলে ফিরিয়ে নিলে শৃঙ্খলারক্ষার বিষয়টি কি মান্যতা হারাবে না? আর দ্বিতীয় জট স্বয়ং সোমনাথবাবু! দলের রাজ্য ও কেন্দ্রীয় স্তরের নানা নেতার অনুরোধ সত্ত্বেও তিনি তাঁর পুরনো দলের কাছে দু’লাইনের চিঠি লিখতেও নারাজ বলে সিপিএম সূত্রের খবর। এমতাবস্থায় সাধারণ সম্পাদক তাঁর বিশেষ ক্ষমতা প্রয়োগ করে সোমনাথবাবুকে ফেরাতে পারেন, যেমন হয়েছিল নৃপেন চক্রবর্তীর বেলায়। কিন্তু ইয়েচুরি এখনই সেই অস্ত্র প্রয়োগে খুব উৎসাহী নন বলেই দলের শীর্ষ সূত্রের খবর।
তবে আশা ছাড়ছে না দলের একাংশ। কারণ, সাম্প্রতিক কালের মধ্যে বুধবারই প্রথম সোমনাথবাবু বলেছেন, ইয়েচুরিদের সঙ্গে কিছু ‘ভুল বোঝাবুঝি’ হয়েছিল। সেই পর্ব পিছনে ফেলে কোন পক্ষ ভুল কবুল করে, সিপিএমে এখন নজর সে দিকেই!
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy