Advertisement
১৮ এপ্রিল ২০২৪

আইএমএ-র হৃদয়ে এ বার কি ‘অন্য’ ফুল?

আইএমএ হল দেশে চিকিৎসকদের বৃহত্তম সংগঠন।

প্রতীকী ছবি।

প্রতীকী ছবি।

পারিজাত বন্দ্যোপাধ্যায়
কলকাতা শেষ আপডেট: ০৩ এপ্রিল ২০১৯ ০৪:৫৪
Share: Save:

সংগঠনের রাজনৈতিক চেহারা বদলেছে। ফলে লোকসভা নির্বাচনে তার ভূমিকা ‘অন্য রকম’ হতে পারে—‘ইন্ডিয়ান মেডিক্যাল অ্যাসোসিয়েশন’ বা আইএমএ সম্পর্কে এখন এই রাজনৈতিক জল্পনা চলছে।

আইএমএ হল দেশে চিকিৎসকদের বৃহত্তম সংগঠন।

এমনিতে আইএমএ ‘অরাজনৈতিক’ তকমা নিয়ে চললেও সব সময় কোনও না কোনও রাজনৈতিক দলের প্রভাব এতে থেকেছে। সরকার-পন্থী চিকিৎসকেরা যখন এই সংগঠনের শীর্ষে থেকেছেন তখন স্বাস্থ্যনীতি ও কর্মসূচি রূপায়ণে সরকার এই সংগঠনের সমর্থন পেয়েছে। তাদের সুবিধা হয়েছে। আবার আইএমএ-র শীর্ষনেতারা শাসকদল-বিরোধী হলে সরকারকে স্বাস্থ্যনীতির ক্ষেত্রে সমালোচনা ও বাধার সামনে পড়তে হয়েছে।

দিল্লি দখলের লড়াই, লোকসভা নির্বাচন ২০১৯

বছর খানেক আগে পর্যন্তও আইএমএ-তে বিজেপি-র প্রবল প্রাধান্য ছিল। দিন বদলেছে। তৃণমূলের চিকিৎসক নেতা শান্তনু সেন গত বছর ডিসেম্বর এই সর্বভারতীয় সংগঠনের সভাপতি হওয়ার পরেই আইএমএ-তে তৃণমূলের বিপুল ক্ষমতায়ন হয়েছে বলে মানছে রাজনৈতিক মহল।

তার উপর শান্তনু আবার রাজ্যসভায় তৃণমূলের সাংসদ। সেখানে তিনি নিয়মিত বিজেপির বিভিন্ন স্বাস্থ্য নীতির সমালোচনা করেছেন, প্রতিবাদ করেছেন। ন্যাশন্যাল মেডিক্যাল কমিশন বিল, ইন্ডিয়ান মেডিক্যাল কাউন্সিল অ্যামেন্ডমেন্ট অর্ডিন্যান্স বা কনজিউমার প্রোটেকশন অ্যাক্ট-এর মতো বেশ কিছু বিল মূলত আইএমএ-র প্রতিবাদের জেরে আটকে গিয়েছে। রাজনৈতিক সূত্রের খবর, এই সব মিলিয়ে স্বাস্থ্য ক্ষেত্রে সর্বভারতীয় স্তরে তৃণমূল একটা ছাপ ফেলতে পেরেছে এবং চিকিৎসকদের একটা বড় অংশকে নিজেদের দিকে টানতে পেরেছে।

আইএমএ সভাপতি শান্তনু সেনের কথাতেই, ‘‘সংগঠনের সদস্য চিকিৎসকের সংখ্যা এখন সাড়ে তিন লাখের বেশি। বিজেপি যে জনবিরোধী স্বাস্থ্য আইনগুলি আনতে চেয়েছিল, তাতে চিকিৎসকদের পাশাপাশি সাধারণ মানুষেরও ব্যাপক ক্ষতি হত। চিকিৎসকেরা অধিকাংশই এতে ক্ষুব্ধ। আইএমএ আন্দোলন করে এগুলি আটকেছে, আর রাজ্যসভায় প্রতিবাদের সময় তৃণমূল ও তার সহযোগী দলের সাংসদেরা আমাদের সমর্থন করেছেন। এর প্রভাব ভোটের বাক্সে পড়তেই পারে।’’ তাঁর আরও বক্তব্য, ‘‘সংগঠনের সাড়ে তিন লাখ চিকিৎসক সদস্যের সঙ্গে তাঁদের পরিবার, পরিজন, বন্ধু ও প্রচুর রোগী জড়িয়ে। বিজেপি যেন ভুলে না যান যে, প্রায় ২ কোটি ভোট নিয়ন্ত্রণের ক্ষমতা আইএমএ-র আছে।’’

এখানেই থেমে না থেকে তিনি বলেন, ‘‘এখনও পর্যন্ত কেন্দ্রে কোনও সরকারই স্বাস্থ্য খাতে জাতীয় আয়ের ৫ শতাংশ বরাদ্দ করেনি। তার থেকে অনেক কম করেছে। যে দল ৫ শতাংশ বরাদ্দ করবে আইএমএ নির্বাচনে তাদেরই সমর্থন করবে। তৃণমূল কিন্তু এই লোকসভা ভোটে নিজেদের ইস্তাহারের মধ্যে এই প্রতিশ্রুতি রেখেছে।’’ তাঁর কথায়, ‘‘সাংবাদিক সম্মেলন করে, সোশ্যাল মিডিয়া মারফত আইএমএ-র সদস্যেরা বিজেপির জনবিরোধী বিভিন্ন স্বাস্থ্যআইন ও নীতি সম্পর্কে সাধারণ মানুষের কাছে প্রচার চালাচ্ছেন। আয়ুষ্মান ভারত প্রকল্পে রাজ্যের টাকা যুক্ত থাকা সত্ত্বেও নরেন্দ্র মোদী নিজের ছবি লাগানো চিঠি গ্রাহকদের পাঠিয়ে যে অন্যায় করছেন সেটাও তাঁরা সকলকে জানাচ্ছেন।’’

আইএমএ-র রাশ অনেকাংশে তৃণমূলের হাতে চলে এসেছে এবং ভোটে তা তৃণমূলের সহায়ক হতে পারে আন্দাজ করতে পেরেছে বিজেপি-ও। তারাও পাল্টা রক্ষণনীতি অনুসরণ করছে। দলীয় সূত্রের খবর, বিভিন্ন রাজ্যে বিজেপির চিকিৎসক সেল-কে এর মোকাবিলা করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। বিজেপির চিকিৎসক সেল জায়গায়-জায়গায় ছোট ছোট সভা করে বিজেপির বিভিন্ন স্বাস্থ্য প্রকল্পের পক্ষে সওয়াল করছেন। বিশেষ করে ‘আয়ুষ্মান ভারত’ প্রকল্প থেকে বেরিয়ে আসায় পশ্চিমবঙ্গের মানুষের কত ক্ষতি হচ্ছে সেটাই বিজেপি-পন্থী চিকিৎসকদের প্রচারের এখন মূল বিষয়বস্তু।

পশ্চিমবঙ্গে বিজেপির চিকিৎসক সেলের অন্যতম প্রধান বিবেকানন্দ মজুমদারের কথায়, ‘‘আইএমএ-র মাধ্যমে তৃণমূল কী খেলা খেলছে, সব আমরা বুঝতে পারছি। কী করে এর মোকাবিলা করতে হয়, তা আমাদেরও জানা আছে। আইএমএ-তে আমাদের লোকও আছে।’’ তাঁর কথায়, ‘‘দলের মণ্ডল কমিটি, জেলা কমিটি— সর্বত্র আমাদের চিকিৎসকেরা যুক্তিপ্রমাণ দিয়ে বোঝাচ্ছেন যে, বিজেপি স্বাস্থ্য নিয়ে কতটা ভাল কাজ করেছে। বিজেপি চিকিৎসকদের সম্মান করে, গুরুত্ব দেয় বলে শুধু পশ্চিমবঙ্গেই ৬ জন চিকিৎসককে প্রার্থী করা হয়েছে। আয়ুষ্মান ভারত থেকে বেরিয়ে আসায় রাজ্যের মানুষের কতটা ক্ষতি হল, সেটাও আমরা সবাইকে জানাচ্ছি।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE