Advertisement
২৫ এপ্রিল ২০২৪

মোবাইলে টোকাটুকি, ধরিয়ে দিলেন ছাত্রী

পরীক্ষার হলে বসেই মোবাইলে প্রশ্নপত্রের ছবি তোলা হল। সেই ছবি পাঠানো হল বাইরে। কিছু ক্ষণের মধ্যে উত্তরও চলে এল মোবাইলে। নজরদারির দায়িত্বে থাকা শিক্ষকের চোখ এড়িয়েই ঘটল পুরো ঘটনা। কিন্তু বাদ সাধলেন এক পরীক্ষার্থিনী। চোখের সামনে এমন ঘটনা ঘটতে দেখে স্থির থাকতে পারেননি তিনি। লিখিত ভাবে বিশ্ববিদ্যালয়-কর্তৃপক্ষের কাছে অভিযোগ জানান ওই ছাত্রী।

সাবেরী প্রামাণিক
কলকাতা শেষ আপডেট: ১২ সেপ্টেম্বর ২০১৪ ০৩:৪১
Share: Save:

পরীক্ষার হলে বসেই মোবাইলে প্রশ্নপত্রের ছবি তোলা হল। সেই ছবি পাঠানো হল বাইরে। কিছু ক্ষণের মধ্যে উত্তরও চলে এল মোবাইলে। নজরদারির দায়িত্বে থাকা শিক্ষকের চোখ এড়িয়েই ঘটল পুরো ঘটনা। কিন্তু বাদ সাধলেন এক পরীক্ষার্থিনী। চোখের সামনে এমন ঘটনা ঘটতে দেখে স্থির থাকতে পারেননি তিনি। লিখিত ভাবে বিশ্ববিদ্যালয়-কর্তৃপক্ষের কাছে অভিযোগ জানান ওই ছাত্রী।

ঘটনাস্থল কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়। ঘটনা বৃহস্পতিবারের। বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রের খবর, অভিযোগ প্রমাণিত হলে পরীক্ষাটি বাতিল করা হবে। পুলিশের কাছেও অভিযোগ জানাতে পারেন বিশ্ববিদ্যালয়-কর্তৃপক্ষ। দোষীদের কড়া শাস্তির পক্ষপাতী তাঁরা।

এ দিন ছিল সাংবাদিকতা স্নাতকোত্তরের প্রবেশিকা। অভিযোগ, পরীক্ষা চলাকালীনই প্রশ্নপত্রের ছবি পাঠানো, তার উত্তর আনানোর ঘটনাটি ঘটেছে। তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র সংসদের সঙ্গে যুক্ত বলে দাবি করেছেন অভিযুক্ত পরীক্ষার্থী। ছাত্র সংসদ টিএমসিপি-র দখলে। এই ঘটনায় নাম জড়ানোয় টিএমসিপি নেতৃত্ব কিছুটা অস্বস্তিতে। সংগঠনের উপদেষ্টামণ্ডলীর সদস্য সৌরভ চক্রবর্তী বলেন, “পরীক্ষা কেন্দ্রে কিছু ঘটে থাকলে কর্তৃপক্ষ দেখবেন। আমরাও খোঁজ নেব।” ছাত্র সংসদের এক সদস্য বলেন, “এমন ঘটনার কথা জানা নেই।”

এই ঘটনা সামনে আসার পরে বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রছাত্রীদের একাংশ অভিযোগ জানিয়েছেন, সম্প্রতি কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়েরই অন্য এক বিভাগে পরীক্ষা চলাকালীন প্রশ্নপত্র কোনও ভাবে হলের বাইরে চলে যায়। সেই প্রশ্নের ফোটোকপি করে উত্তর সরবরাহ করা হয় পরীক্ষা কেন্দ্রে। যদিও সেই ঘটনা নিয়ে কেউই লিখিত ভাবে অভিযোগ জানাননি। তাই বিষয়টি নিয়ে সে-ভাবে নাড়াচাড়াও হয়নি। বিশ্ববিদ্যালয়-কর্তৃপক্ষ জানান, ওই ঘটনার কথা তাঁদের জানা নেই।

কিন্তু বৃহস্পতিবারের ঘটনার পরে প্রশ্ন উঠেছে, ওই ছাত্রী সাহস করে না-এগোলে মোবাইলে টোকাটুকির ব্যাপারটা কি আদৌ সামনে আসত? নজরদার শিক্ষক কী করছিলেন? পরীক্ষার্থীরা মোবাইল নিয়ে ঢুকলেনই বা কী ভাবে? কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের মতো প্রতিষ্ঠানে এটা ঘটে কী করে?

উপাচার্য সুরঞ্জন দাস রাতে বলেন, “এমন উদ্বেগজনক ঘটনা কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ে আগে কখনও ঘটেনি। আমি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বেরোনোর ঠিক আগে অভিযোগপত্রটি পেয়েছি। কাল (শুক্রবার) গিয়ে খতিয়ে দেখে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।” অন্য এক কর্তা জানান, তাঁরা এই অভিযোগকে বিশেষ গুরুত্ব দিয়ে দেখছেন। ভবিষ্যতে যাতে এমন ঘটনা না-ঘটে, তা নিশ্চিত করতে চান তাঁরা। বিষয়টি পুলিশে জানানোর পাশাপাশি বিশ্ববিদ্যালয় নিজেদের মতো পূর্ণাঙ্গ তদন্ত করতে ইচ্ছুক। আর পুরো অভিযোগ প্রমাণিত না-হলেও তার সামান্যতম অংশের সত্যতা থাকলেও পরীক্ষা বাতিল হতে পারে বলে ইঙ্গিত দিয়েছেন ওই কর্তা।

বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রের খবর, এ দিন পরীক্ষার হলে মোবাইল নিয়ে ঢোকার অনুমতি দেওয়া হয়েছিল পরীক্ষার্থীদের। তবে তা বন্ধ রাখার নির্দেশ দেওয়া হয়। কিন্তু কে কখন তা চালু করেছেন, অত্যাধুনিক প্রযুক্তির সাহায্যে কী ভাবে জালিয়াতি চলছে, বিশাল পরীক্ষা কেন্দ্রে নজরদারির দায়িত্বপ্রাপ্ত শিক্ষকের তা নজর এড়িয়ে গিয়েছে বলে মনে করছে বিশ্ববিদ্যালয়। তবে সব দিকই খতিয়ে দেখা হবে বলে বিশ্ববিদ্যালয়ের খবর।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE