Advertisement
২৯ মার্চ ২০২৩
Mamata Banerjee

চাটুকারিতা আগেও হয়েছে, মমতাকে পুরস্কার প্রসঙ্গে পবিত্রদের জবাব শিল্পী শুভাপ্রসন্নের

মমতাকে পুরস্কৃত করে বাংলা আকাদেমির মর্যাদা ক্ষুণ্ণ হয়েছে বলে একটি খোলা চিঠিতে অনেকের সঙ্গে স্বাক্ষর করেছেন পবিত্র সরকার।

মমতা-শুভাপ্রসন্ন।

মমতা-শুভাপ্রসন্ন। ফাইল চিত্র ।

নিজস্ব সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ১২ মে ২০২২ ১৩:১৪
Share: Save:

মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে বাংলা আকাদেমির তরফ পুরস্কার দেওয়া নিয়ে বিতর্কে নতুন দাবি তুললেন শিল্পী শুভাপ্রসন্ন। আগেই তিনি দাবি করেন, রবীন্দ্রনাথ বেঁচে থাকলে তিনিই মমতাকে পুরস্কার দিতেন। এ বার এই পুরস্কার নিয়ে প্রশ্ন তোলা বিশিষ্টজনদের নিশানা করলেন শুভাপ্রসন্ন। আনন্দবাজার অনলাইনকে বললেন, ‘‘কিছু মানুষ ঈর্ষাকাতর হয়ে পদত্যাগ করছেন বা লেখালেখি করছেন। তাঁরা কি উচ্চ মনের মানুষ? বাঙালি চরিত্রগত ভাবে মানুষ হয়ে ওঠেনি। কাঁকড়ার জাত। মূল্যায়ন করনেওয়ালা এই সব মানুষ জীবনে বেঁচে থাকার মতো কোনও কাজ করেছেন কি? আমি সজোরে বলতে পারি মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বেঁচে থাকবেন। তিনি তো কিছু চুরিচামারি করেননি। তাঁর ভিতরের আবেগ বোধকে তিনি তাঁর মতো করে তাঁর ভাষায় লিখেছেন। এ ভাষা রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরেরও নয়, সুকুমার রায়েরও নয়, নজরুলেরও নয়। এ মমতার ভাষা। দোষটা কী করেছেন?’’

এই প্রসঙ্গে সরসারি শিক্ষাবিদ পবিত্র সরকারকেও আক্রমণ করেছেন শুভাপ্রসন্ন। প্রসঙ্গত, মমতাকে পুরস্কৃত করে বাংলা আকাদেমির মর্যাদা ক্ষুণ্ণ হয়েছে বলে বুধবারই একটি খোলা চিঠিতে আরও অনেকের সঙ্গে স্বাক্ষর করেছেন পবিত্র। সেই প্রসঙ্গ টেনে শুভাপ্রসন্ন বলেন, ‘‘কে পুরস্কার দিল, কে কী করল, কে চাটুকারিতা করেছে কি না করেছে সেটা ভাবা উচিত নয়। যেন পৃথিবীতে কখনও চাটুকারিতা হয়নি! পৃথিবীতে কখনও এই ধরনের ঘটনা কি ঘটেনি! আর এটাই মস্ত বড় ক্ষতিকারক হয়ে গেল? আমাদের ভাবা দরকার।’’ এই রেশ ধরেই শুভাপ্রসন্ন বলেন, ‘‘ভাবতে হয় বুড়োখোকাদের নিয়ে। এই পবিত্রবাবু-টাবুরা। এত জ্ঞানী কিন্তু এঁরা বুড়োখোকা রয়ে গেলেন। একটা সময় বুদ্ধবাবুকে সিগারেট কিনে দিতেন জাপানে গেলে। আর এখন একটু অন্যরকম করছেন। এঁরা তো সত্যিই জ্ঞানী। কিন্তু মধ্য মানসিকতার জ্ঞানী। এ দু’টোয় তফাত রয়েছে। জ্ঞানী হলেই তো জ্ঞানী হয় না। অনেক মধ্য মানসিকতার জ্ঞানী রয়েছেন।’’

Advertisement

মমতার পুরস্কার পাওয়া বিতর্কে তিনি নিজে অংশ নিলেও এটাকে গুরুত্বপূর্ণ মনে করেছেন না শুভাপ্রসন্ন। তিনি আনন্দবাজার অনলাইনকে বলেন, ‘‘এই বিতর্কটাকে আমি গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা বলে মনেই করি না। প্রতি দিন হাজার হাজার লেখা প্রকাশিত হচ্ছে। বহু মানুষ বহু কিছু লিখছেন। হয়তো অনেক কিছুই তথাকথিত গুরুত্বপূর্ণ। কিন্তু সেটা সাময়িক কালের জন্য। কোন কালে কতটা কে বেঁচে থাকবেন সে বিচার আমার কেউ করতে পারি না। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এক জন ‘এক্সট্রাঅর্ডিনারি’ ব্যক্তিত্ব। তিনি সাহসী এবং আত্মবিশ্বাসী। তাঁর স্মরণশক্তি অসাধারণ। ভুঁইফোঁড় জীবন থেকে উঠে এসেছেন। কোনও কৌলিন্য ছিল না মা-বাবা বা বংশ পরিচয়ের। কিন্তু পৃথিবীর চোখে তিনি যেখানে পৌঁছে গিয়েছেন তা কিন্তু একটা অনন্য ঘটনা। এমন এক জন ব্যক্তিত্ব ইচ্ছা হলে লিখতেই পারেন। ছড়া, কবিতা লিখেছেন, গান লিখেছেন, সুর দিয়েছেন, ছবি এঁকেছেন। এখন তাঁর একটা বইকে পুরস্কৃত করা হয়েছে। পুরস্কারটা যদি উপযুক্ত হয় তবে কালজয়ী হবে, না হলে মানুষ ছুড়ে ফেলে দেবে।’’ এই প্রসঙ্গে ফের সমালোচকদের আক্রমণ করে শুভাপ্রসন্ন বলেন, ‘‘যাঁরা পদত্যাগ করেছেন বা নানারকম চিঠিপত্র লিখেছেন। তাঁরা বিচার করে দেখুন সমাজ, পৃথিবী এবং মানুষের কাছে নিজেরা কোথায় দাঁড়িয়ে আছেন।’’

মমতার লেখার সমালোচনার থেকেও বেশি প্রশ্ন উঠেছে পুরস্কার দেওয়া নিয়ে। এটা কি সমীচীন হয়েছে? এর উত্তরে শুভাপ্রসন্ন বলেন, ‘‘সারা পৃথিবীতেই এমনটা দেখা যায়। প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী বিশ্বনাথপ্রতাপ সিংহ আমার কাছে ছবি আঁকা শিখেছিলেন। আমি তাঁকে চারকোলে কিছু কাজ শিখিয়েছিলাম। কিন্তু আমার যে দামে ছবি বিক্রি হয়েছে তার চেয়ে অনেক গুণ বেশি দামে তাঁর ছবি বিক্রি হয়েছে এবং সেটা রাষ্ট্রীয় ভাবে প্রদর্শিত হয়েছে। আমি কী করতে পারি? এর জন্য আমি ছোট হয়েছি বলে ভাবি না। কারণ, এটা মানতে হবে যে ওই ছবি বিশ্বনাথপ্রতাপ সিংহের, তথাকথিত ছবি আঁকিয়ে শুভাপ্রসন্নর নয়। আসলে অহংটাকে একটু কমানো উচিত।’’

অতীতে অনেক চাটুকারিতা হয়েছে বলে কি আপনি বাংলা আকাদেমির পুরস্কারকেও সেই গোত্রের বলে মনে করছেন? এর স্পষ্ট জবাব এড়িয়ে শুভাপ্রসন্ন বলেন, ‘‘আমার কিছু মনে করার দরকার নেই। খালি এটাই বলব, এটা ইতিহাসে নতুন কিছু নয়।’’ এই প্রসঙ্গে টেনে আনেন মমতার ছবি আঁকার গুণের কথাও। বলেন, ‘‘মমতা ছবি আঁকেন সাহস থেকে। ক্যানভাসের সামনে ওঁর কখনও হাত কাঁপে না।’’ ছবি আঁকার জন্যও কি পুরস্কার পাওয়া উচিত ছিল? শুভাপ্রসন্নর জবাব, ‘‘সেটা তো আমি বলতে পারব না। তবে আমি যদি পুরস্কার দিতাম তবে তাতে অ্যাকাডেমিক স্কিলের কথা নয়, লেখা থাকত, ওঁর অসম্ভব রকম আত্মশক্তি রয়েছে। সাহস আছে। কারও এই দু’টো থাকলেই তিনি যে কোনও কাজ উতরে দিতে পারেন।’’ শুভাপ্রসন্নর সংযোজন, ‘‘এটা কেউ জন্মগত ভাবে পায়। আর কেউ নিরন্তর চর্চা করে পায়। তখন আর ডুবসাঁতার দিতেও ভয় করে না।’’

Advertisement

যে পুরস্কার নিয়ে এত বিতর্ক তা যদি মমতাকে না দেওয়া হত তাতে কোনও ক্ষতি হত না বলেও মনে করেন শুভাপ্রসন্ন। তিনি বলেন, ‘‘এতে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় কোনও ডক্টরেটও পেলেন না আবার দু’লক্ষ ভোট বেশিও পাবেন না।’’ তবে কি না দিলেই ভাল হত? শুভাপ্রসন্ন বলেন, ‘‘আমি তো দিইনি। আমি বাংলা আকাদেমির কমিটিতে নেই।’’ যাঁরা দিয়েছেন তাঁরাও প্রথিতযশা বলেও স্বীকার করে বলেন, ‘‘আমি কমিটিতে থাকলে কী করতাম সেটা বলতে পারব না। যদি নিয়ে কিছু বলব না। চারিদিকে যে প্রহসন চলছে তা নিয়ে জবাব দিলাম আমি।’’

আপনিও কি এখন রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের প্রসঙ্গ টেনে প্রহসনের মধ্যে পড়ে যাননি? শুভাপ্রসন্ন নিজের বক্তব্যে অটল থেকেই বলেন, ‘‘হ্যাঁ, রবীন্দ্রনাথের সেই উদারতা ছিল। এঁরা তো মধ্য মানসিকতার। রবীন্দ্রনাথ তো মধ্য মানসিকতার ছিলেন না। এটা বোঝারও ক্ষমতা খুব কম মানুষের রয়েছে। রবীন্দ্রনাথের মতো মানুষ থাকলে তিনি যে উৎসাহিত করতেন তার কারণ তিনি মধ্য মানসিকতার ঊর্ধ্বে ছিলেন। এটাই আমার বক্তব্য। এটাকেও কেউ অন্যভাবে ভাবতে পারে। সবাই তো মস্ত ভাবসম্প্রসারণের অধিকারী। আমি না ভেবে কোনও শব্দ উচ্চারণ করিনি।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, Twitter এবং Instagram পেজ)
Follow us on: Save:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE
Popup Close
Something isn't right! Please refresh.