স্ত্রী আর মেয়ের দেহ টুকরো টুকরো করে ভাসিয়ে দেওয়া হয়েছে গঙ্গায়, খবরটা শ্রুতিধর মুখোপাধ্যায় প্রথম শোনেন টিভিতে। বসিরহাটের হাসনাবাদের টাকি হাইস্কুলের শিক্ষক হতভম্ব হয়ে যান। বসিরহাটের কাছারিপাড়ায় নিজের বাড়িতে বসে বার বার বলছিলেন, ‘‘আমার পাঁচ বছরের মেয়েটাকে এই ভাবে মেরে ফেলল?’’
মেয়ে দীপাঞ্জনা আর তার মা সুচেতা চক্রবর্তীর খুনে অভিযুক্ত ব্যাঙ্ক ম্যানেজার সমরেশ সরকারকে তিনি চেনেন না, দাবি করলেন শ্রুতিধরবাবু। সুচেতার সঙ্গে তাঁর একটা দূরত্ব তৈরি হয়েছিল, সেটা অবশ্য স্বীকার করলেন। শেষ বার দুর্গাপুরে স্ত্রী-কন্যার সঙ্গে দেখা হয়েছিল গত বছর পুজোয়। তখন গাড়ি ভাড়া করে মাইথন ঘুরতেও গিয়েছিলেন তাঁরা। এর পর গত ডিসেম্বরে ফের দুর্গাপুরে সুচেতাদেবীর বাড়িতে দেখা করতে যান। ‘‘খবর দিয়ে যাওয়া সত্ত্বেও গিয়ে দেখি, বাড়িতে তালা ঝুলছে। প্রতিবেশীরা কিছু বলতে পারেননি।’’ এর পর থেকে আর দুর্গাপুর যাননি শ্রুতিধরবাবু। ফোনে কথাবার্তাও কমে এসেছিল। তাঁর পাঠানো মানি অর্ডারের টাকা বার বার ফিরিয়ে দিচ্ছিলেন সুচেতা। তাই টাকা পাঠানোও বন্ধ করে দেন।
কী করে তাঁদের যোগাযোগ? বসিরহাটে কর্মরত শ্রুতিনাথবাবু নিজের জন্য পাত্রী চেয়ে বিজ্ঞাপন দেন। সুচেতাদেবীর পরিবার দুর্গাপুর থেকে যোগাযোগ করে। তাঁদের বিয়ে হয় ২০০৭-এর ডিসেম্বরে। সুচেতাদেবী বসিরহাটে এসে সংসার পাতেন। ২০১১-র ফেব্রুয়ারিতে গর্ভবতী অবস্থায় বাপের বাড়ি ফিরে যান দুর্গাপুরে। জুনে দুর্গাপুরেরই একটি নার্সিংহোমে জন্মায় তাঁদের মেয়ে। কিন্তু তারপর আর ফেরেননি সুচেতাদেবী। তাঁর বাবা মারা যাওয়ার পরেও ফিরতে অস্বীকার করেন। ‘‘কবে ফিরবে, আমি তা জানতে চাইলে স্ত্রী স্পষ্ট জানিয়ে দেন, তিনি আর বসিরহাটে ফিরবেন না।’’
দুর্গাপুরে বিধাননগর আবাসনে সুচেতার ফ্ল্যাট। তাঁর প্রতিবেশীরা জানিয়েছেন, সুচেতাদেবী বিবাহবিচ্ছেদের মামলা করেছিলেন। শ্রুতিধরবাবুর দাবি, তিনি এ বিষয়ে কিছুই জানেন না। বরং তিনি নিজেই দাম্পত্যের অধিকার পুনর্বহাল (রেস্টিটিউশন অব কনজুগাল রাইটস) ধারায় মামলা করার কথা চিন্তা করছিলেন। ‘‘আমার স্ত্রীর সঙ্গে আমার একটা মানসিক দ্বন্দ্ব চলছিল ঠিকই। বাবার সম্পত্তির রক্ষণাবেক্ষণ আর মেয়ের ভবিষ্যতের কথা ভেবে সুচেতা বসিরহাটে ফিরতে চাইছিল না। তা বলে আমাদের বিচ্ছেদ হয়ে যায়নি,’’ বলেন শ্রুতিধরবাবু। দুপুরে স্ত্রী-কন্যা নিহত হওয়ার খবর পেয়ে বিকেলে তিনি বসিরহাট থানায় খুনের মামলা দায়ের করতে যান। স্ত্রী-কন্যার শেষকৃত্যও তিনিই করতে চান, জানান তিনি।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy